পহেলা মে থেকে সারাদেশে ডিম ও মুরগি উৎপাদন বন্ধের ঘোষণা প্রত্যাহার

আগামী ১ মে থেকে সারাদেশে ডিম ও মুরগির খামার বন্ধ রাখার পূর্বঘোষিত কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছে বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ)। সোমবার (২১ এপ্রিল) সংগঠনের পক্ষ থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এক গঠনমূলক বৈঠকের পর এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এবং দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত ১০ থেকে ১২ জন প্রান্তিক খামারি। বৈঠকে খামারিদের ১০ দফা দাবি ও বাস্তব সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয় এবং ডিজির পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক সমাধানের আশ্বাস প্রদান করা হয়।
দাবি ও আশ্বাস
পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন তাদের পক্ষ থেকে বৈঠকে ‘শাহরুখ স্মারকলিপি’ নামে একটি লিখিত দাবি পেশ করে। এতে খাদ্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে আনাসহ ডিম-মাংসের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাজার নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়।
বৈঠকে ডিজি আশ্বাস দিয়েছেন, সরকার পোলট্রি খাতে খাদ্য, বাচ্চা ও ওষুধের দাম কমাতে দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছে। এরই মধ্যে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের নির্দেশনায় পোলট্রি খাদ্যের দাম কেজিপ্রতি ১ থেকে দেড় টাকা পর্যন্ত কমে এসেছে এবং আরও দাম কমার সম্ভাবনা রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
বিপিএর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সরকারের এমন সময়োপযোগী সিদ্ধান্তে প্রান্তিক খামারিরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এবং আগামী ১ মে থেকে পুরোদমে খামার চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
আন্দোলন স্থগিত, সতর্ক হুঁশিয়ারি
বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন জানায়, সরকারের প্রতি আস্থা রেখে এবং জনগণের স্বার্থে খামার বন্ধের কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে একই সঙ্গে তারা স্পষ্ট করে দিয়েছেন, প্রান্তিক খামারিদের স্বার্থে ঘোষিত ১০ দফা দাবি বাস্তবায়নে বিলম্ব হলে ভবিষ্যতে তারা আবারও কঠোর কর্মসূচির দিকে যেতে বাধ্য হবেন।
পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের ১০ দফা দাবি
১. জাতীয় মূল্য নিয়ন্ত্রণ কমিটি গঠন: বাজারে ডিম ও মুরগির ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে একটি স্বতন্ত্র জাতীয় কমিটি গঠন।
২. সরকারিভাবে ফিড মিল ও হ্যাচারি স্থাপন: খাদ্য ও বাচ্চার সরবরাহে স্বচ্ছতা এবং দামে ভারসাম্য আনার লক্ষ্যে সরকারি উদ্যোগে ফিড মিল ও হ্যাচারি স্থাপন।
৩. কন্ট্রাক্ট ফার্মিং নিষিদ্ধ: কোম্পানিভিত্তিক কন্ট্রাক্ট ফার্মিং ও উৎপাদনের মাধ্যমে বাজারে প্রভাব বিস্তার বন্ধ করতে হবে।
৪. স্বাধীন বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠন: বাজারে সিন্ডিকেট ও অস্বাভাবিক দামের বিরুদ্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে একটি নিরপেক্ষ নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রয়োজন।
৫. ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের পুনর্বাসন: পূর্বের লোকসানে ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের আর্থিক পুনর্বাসনের ব্যবস্থা।
৬. রেজিস্ট্রেশন ও আইডি কার্ড: সব খামারির আইনি পরিচয় ও সুবিধা নিশ্চিত করতে খামারিদের নিবন্ধন ও আইডি কার্ড প্রদান।
৭. জাতীয় পোলট্রি উন্নয়ন বোর্ড গঠন: খাতটির উন্নয়ন, গবেষণা ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আলাদা বোর্ড গঠন।
৮. সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা: বাজারে মূল্য নিয়ন্ত্রণ ও ন্যায্য বাণিজ্য নিশ্চিত করতে সিন্ডিকেট বিরোধী ব্যবস্থা।
৯. প্রশাসনিক অভিযান: নিয়মিত অভিযান চালিয়ে অস্বাভাবিক দাম ও অনিয়ম রোধ।
১০. জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ: প্রান্তিক খামারিদের জন্য বরাদ্দ ও সরকারি সহায়তা নিশ্চিত করা।
খামারিদের আহ্বান
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আগামী ১ মে থেকে দেশের সব খামার পুরোদমে চালু থাকবে এবং সরকার নির্ধারিত নিয়ম মেনে বৈধভাবে খামার পরিচালনার আহ্বান জানানো হয়েছে। খামারিদের কাছে এই খাতকে টিকিয়ে রাখতে সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করার বার্তা পৌঁছানো হয়েছে।
সমাপনী কথা
বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের পোলট্রি খাত এক সংকটকাল অতিক্রম করছে। খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধি, হ্যাচারির চাহিদা সংকট ও বাজারে অসাধু চক্রের দৌরাত্ম্যে প্রান্তিক খামারিরা বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ এবং সংশ্লিষ্ট মহলের আশ্বাস প্রান্তিক খামারিদের মধ্যে নতুন করে আশার সঞ্চার করেছে। তবে এই খাতকে দীর্ঘস্থায়ী ও লাভজনক করতে হলে পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের উপস্থাপিত ১০ দফা বাস্তবায়ন জরুরি।
সরকার যদি এই দাবিগুলো সময়মতো কার্যকর করে, তাহলে শুধু খামারিরাই নয়, সারাদেশের মানুষ লাভবান হবে; কারণ ডিম ও মুরগির ন্যায্য মূল্য বজায় থাকলে খাদ্য নিরাপত্তা এবং পুষ্টির নিশ্চয়তাও সহজ হবে।