রেকর্ড লভ্যাংশ দেওয়ার পরও লিনডে বাংলাদেশের শেয়ারের দরপতন

বহুজাতিক কোম্পানি লিনডে বাংলাদেশ সম্প্রতি শেয়ারপ্রতি ৪০০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করলেও বাজারে এর শেয়ারের মূল্য হ্রাস পেয়েছে। গত সপ্তাহে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ১০ শতাংশ কমেছে। ফলে বাজার বিশ্লেষকরা একে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি হিসেবে দেখছেন।
লভ্যাংশের বিশ্লেষণ
২০২৪ সালের জন্য লিনডে বাংলাদেশ শেয়ারপ্রতি মোট ৪৫০ টাকা বা ৪,৫০০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, যা ইতোমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। গত বছরের মধ্যে এটি কোম্পানিটির সর্বোচ্চ লভ্যাংশ ছিল, যা গত এক দশকের রেকর্ড ভেঙেছে। কিন্তু এত বড় অংকের লভ্যাংশ দেওয়ার পরও শেয়ারের দরপতন হয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
বাজারে শেয়ারের দরপতন
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্যানুযায়ী, গত সপ্তাহে লিনডে বাংলাদেশের শেয়ারমূল্য ১০২ টাকা বা প্রায় ১০ শতাংশ কমে ৯৪০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। এর ফলে কোম্পানিটি সপ্তাহ শেষে শেয়ারবাজারের দরপতনের শীর্ষ দশ কোম্পানির মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল।
দরপতনের সম্ভাব্য কারণ
বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এই দরপতনের যৌক্তিক কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শীর্ষ ব্রোকারেজ হাউসের নির্বাহী জানিয়েছেন, বাজারে একটি গুজব প্রচলিত আছে যে লিনডে বাংলাদেশ তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নেবে। এই গুজবের কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একধরনের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, যা শেয়ারের মূল্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
গুজবের কারণ
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, লিনডে বাংলাদেশের ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার গুজবের পেছনে কিছু নির্দিষ্ট কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কোম্পানিটির ঝালাই ব্যবসা বিক্রি করে দেওয়া।
২০২৪ সালের মে মাসে লিনডে বাংলাদেশ ঘোষণা করে যে তারা তাদের ওয়েল্ডিং ব্যবসার শেয়ার বিক্রি করতে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইসাব গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি করেছে। চুক্তির আওতায় ১৩ কোটি ৮২ লাখ ৯০ হাজার ৫০১টি শেয়ার হস্তান্তর করা হয়। শেয়ার বিক্রি থেকে পাওয়া অর্থের বড় অংশই কোম্পানি লভ্যাংশ হিসেবে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিতরণ করেছে।
বিনিয়োগকারীদের প্রতিক্রিয়া
শেয়ারবাজার বিশ্লেষকদের মতে, লিনডে বাংলাদেশের ব্যবসায়িক কৌশল পরিবর্তন ও গুজবের কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সংকট দেখা দিয়েছে। যদিও কোম্পানির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার কোনো ঘোষণা দেওয়া হয়নি, তবুও বাজারে এই ধরনের গুজব ছড়িয়ে পড়ায় বিনিয়োগকারীরা তাদের শেয়ার বিক্রি করতে শুরু করেছেন।
ভবিষ্যৎ প্রভাব
বিশ্লেষকদের মতে, লিনডে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ শেয়ারমূল্য নির্ভর করবে কোম্পানির পরবর্তী পদক্ষেপের ওপর। যদি কোম্পানি তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা প্রকাশ করে, তাহলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসতে পারে এবং শেয়ারের দরপতন ঠেকানো সম্ভব হবে। তবে যদি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা চলমান থাকে, তাহলে কোম্পানিটির শেয়ারমূল্য আরও কমতে পারে।
উপসংহার
লিনডে বাংলাদেশের শেয়ারমূল্যের সাম্প্রতিক পতন বাজারে একধরনের বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে। বাজারসংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, কোম্পানির পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য দিলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরে আসতে পারে। এ পরিস্থিতি উত্তরণের জন্য বিনিয়োগকারীদের উচিত কোনো গুজবে কান না দিয়ে কোম্পানির প্রকৃত অবস্থা বিশ্লেষণ করা।