বানিজ্য

সরবরাহ বেড়েছে সয়াবিনের, কমেছে ফলের দামও

রমজানের মাঝামাঝিতে এসে নিত্যপণ্যের বাজারে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরে এসেছে। রমজানের আগে থেকেই বাজারে সয়াবিন তেলের সংকট ছিল, তবে এখন তা অনেকটাই কমে গেছে। বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহ আগের তুলনায় বেড়েছে। এছাড়া, ব্রয়লার মুরগি, পেঁয়াজসহ বেশ কিছু নিত্যপণ্যের দাম কমেছে। ফলের বাজারেও কিছুটা স্বস্তি দেখা যাচ্ছে।

সয়াবিন তেলের বাজারে স্বস্তি

বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহ বেড়েছে। খোলা সয়াবিন তেলের দামও কমতির দিকে। সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৭ থেকে ২০ টাকা কমে ১৬০ থেকে ১৬৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া দুই লিটারের বোতলজাত সয়াবিনের দাম তিন টাকা কমে ৩৪৫ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক লিটারের বোতলজাত সয়াবিন ১৭৫ থেকে ১৭৮ টাকা এবং পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন ৮৪৫ থেকে ৮৫২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ফলের বাজারে স্বস্তি

ফলের বাজারেও কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি তরমুজ ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা রমজানের শুরুতে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি ছিল। এছাড়া, মাল্টার দাম কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কমে ২৫০ থেকে ২৭০ টাকা হয়েছে। আপেল ৩০০ থেকে ৩৮০ টাকা, পেয়ারা ৭০ থেকে ৮০ টাকা, বরই ৫০ থেকে ৬০ টাকা, আঙুর ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, কমলা ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা এবং নাশপাতি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ফলভেদে কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত দাম কমেছে।

আলু-পেঁয়াজের দাম হ্রাস

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মধ্যে আলু ও পেঁয়াজের দামও কমেছে। বাজারে প্রতি কেজি আলু ২০ থেকে ২৫ টাকায় এবং দেশি পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগেও দেশি পেঁয়াজের দাম ৫০ থেকে ৫৫ টাকা ছিল। ব্যবসায়ীদের মতে, পেঁয়াজের আমদানি ও সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় দাম কমেছে।

মুরগির দাম কমেছে, গরুর মাংসের দাম স্থিতিশীল

সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দামও কমেছে। কেজিতে ১০ টাকা কমে বর্তমানে তা ১৯০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোনালি মুরগির দাম ১০ থেকে ২০ টাকা কমে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায় নেমেছে। এছাড়া, ফার্মের ডিমের দামও কমেছে। বাজারে প্রতি ডজন ফার্মের বাদামি রঙের ডিম ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা এক সপ্তাহ আগে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা ছিল।

তবে, ব্রয়লার মুরগির দাম কমলেও গরুর মাংসের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। বর্তমানে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খাসির মাংসের দামও ১,০৫০ থেকে ১,১০০ টাকার মধ্যে রয়েছে।

লেবুর চাহিদা ও দাম বাড়তি

বাজারে লেবুর দাম এখনো সেভাবে কমেনি। বর্তমানে প্রতি হালি লেবু ৫০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা জানান, রমজানে শরবত তৈরির জন্য লেবুর চাহিদা বেশি থাকে। এছাড়া, সাম্প্রতিক সময়ে আবহাওয়াজনিত কারণে মানুষ বেশি করে লেবু কিনছে, যার ফলে দাম বাড়তি রয়েছে।

কেন দাম কমছে?

ব্যবসায়ীরা বলছেন, রমজানের শুরুতে ক্রেতাদের কেনাকাটার চাপ বেশি থাকে। তবে, এক সপ্তাহ পর থেকে চাহিদা কিছুটা কমতে শুরু করে। ফলে সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে আসায় দামও কমছে। এছাড়া, সরকারের বাজার মনিটরিং ব্যবস্থাও অনেকটাই কার্যকর হয়েছে, যা দাম নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখছে।

ভবিষ্যতে বাজারের সম্ভাবনা

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, রমজানের শেষ দিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কিছুটা বাড়তে পারে। বিশেষ করে, ঈদকে সামনে রেখে মাংস, চাল, চিনি এবং ফলের বাজারে চাহিদা বেড়ে যেতে পারে। তবে, আমদানি ও সরবরাহ ব্যবস্থাপনা ভালো থাকলে দাম স্থিতিশীল থাকতে পারে।

উপসংহার

রমজানের মাঝামাঝিতে এসে নিত্যপণ্যের বাজারে কিছুটা স্বস্তি দেখা দিয়েছে। সয়াবিন তেল, ফল, মুরগি, ডিম এবং পেঁয়াজের দাম কমে গেছে, যা সাধারণ ক্রেতাদের জন্য স্বস্তির বিষয়। তবে, লেবুর দাম এখনো বেশি রয়েছে। ব্যবসায়ীদের মতে, বাজারের বর্তমান অবস্থা ঠিক থাকলে আগামী সপ্তাহেও দাম স্থিতিশীল থাকতে পারে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button