প্রযুক্তি

বিপিও সামিট বাংলাদেশ ২০২৫: তথ্যপ্রযুক্তির নতুন দিগন্তে বাংলাদেশ

গত ২১ জুন রাজধানীর সেনাপ্রাঙ্গনে দুই দিনব্যাপী ‘বিপিও সামিট বাংলাদেশ ২০২৫’ শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ কন্ট্যাক্ট সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্কো) আয়োজিত এই সামিট দেশের আউটসোর্সিং শিল্পের সবচেয়ে বড় বার্ষিক সম্মেলন। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিজনেস প্রোমোশন কাউন্সিলের সহযোগিতায় আয়োজনটি সম্পন্ন হচ্ছে। সামিট চলবে ২২ জুন পর্যন্ত।

গত ২১ জুন রাজধানীর সেনাপ্রাঙ্গনে দুই দিনব্যাপী ‘বিপিও সামিট বাংলাদেশ ২০২৫’ শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ কন্ট্যাক্ট সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্কো) আয়োজিত এই সামিট দেশের আউটসোর্সিং শিল্পের সবচেয়ে বড় বার্ষিক সম্মেলন। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিজনেস প্রোমোশন কাউন্সিলের সহযোগিতায় আয়োজনটি সম্পন্ন হচ্ছে। সামিট চলবে ২২ জুন পর্যন্ত।

বিপিও সামিটের থিম ও লক্ষ্য

২০১৫ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে আয়োজিত ‘বিপিও সামিট’-এর এবারের থিম হলো ‘BPO 2.0: Revolution to Innovation’, যা বাংলাদেশকে একটি সম্ভাবনাময়, উদ্ভাবনী ও প্রযুক্তিনির্ভর দেশের রূপে তুলে ধরেছে। এই থিমের মাধ্যমে দেশের আউটসোর্সিং খাতের পরবর্তী ধাপ ও সম্ভাবনাকে তুলে ধরা হয়েছে।

সামিটে আন্তর্জাতিক মানের ৯টি সেমিনার ও ওয়ার্কশপ, একটি পূর্ণাঙ্গ চাকরি মেলা, উদ্যোক্তা বিষয়ক বিশেষ অধিবেশন, ফ্রিল্যান্সার প্ল্যাটফর্ম, এবং দেশি-বিদেশি প্রযুক্তি ও বিপিও প্রতিষ্ঠানগুলোর অংশগ্রহণে বৃহৎ পণ্য ও সেবা প্রদর্শনী আয়োজন করা হয়েছে।

প্রযুক্তি, উদ্ভাবন ও কর্মসংস্থানে বিপিও সামিটের গুরুত্ব

বিপিও সামিট বাংলাদেশ ২০২৫ এ অংশ নিচ্ছেন দেশের বিভিন্ন সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, আন্তর্জাতিক কূটনীতিক, প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ এবং বৈশ্বিক ক্রেতা প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রতিনিধি। সামিটে বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে রয়েছে একাধিক এক্সপো জোন এবং এক্সপেরিয়েন্স জোন, যেখানে ভবিষ্যৎ প্রযুক্তির সরাসরি প্রদর্শনী হচ্ছে।

এক্সপেরিয়েন্স জোনে রয়েছে:

  • স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সার্ভিস
  • জুলাই অভ্যুত্থান কেন্দ্রিক AR (অগমেন্টেড রিয়ালিটি) ও VR (ভার্চুয়াল রিয়ালিটি) প্রযুক্তি
  • উন্নতমানের ড্রোন ও সাবমেরিন প্রযুক্তি
  • আধুনিক রোবট প্রদর্শনী

এইসব প্রযুক্তি তরুণ প্রজন্মের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে এবং দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে আরও শক্তিশালী ও আধুনিক করেছে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও বক্তৃতা

সামিটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হয় পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে, এরপর একটি অনুপ্রেরণামূলক অডিও-ভিজ্যুয়াল উপস্থাপনা প্রদর্শিত হয়। এতে বাংলাদেশে বিপিও ও আইটিইএস খাতের বিকাশ, বাক্কোর ভূমিকা ও অঙ্গীকার তুলে ধরা হয়।

বাক্কোর সভাপতি তানভীর ইব্রাহীম বলেন,
“বিপিও সামিট শুধু একটি ইন্ডাস্ট্রি সম্মেলন নয়, এটি বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাস, সক্ষমতা ও ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি।”

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোঃ আবু সাঈদ বলেন,
“এই সামিট প্রযুক্তি, সেবা ও মানবসম্পদের যুগপৎ সমন্বয়, যা ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপায়িত করছে।”

সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী বলেন,
“প্রযুক্তি আমাদের উন্নয়নের মূল চালিকা শক্তি। এই সামিট আমাদের অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রযুক্তি অর্থনীতির ভিত্তি গড়ে তুলবে।”

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন,
“একটি ল্যাপটপ, ইন্টারনেট এবং দক্ষতার সমন্বয় আজ বাংলাদেশের তরুণদের বিশ্ববাজারে স্থান করে দিয়েছে। সরকারের নীতিগত সহায়তাও তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।”

শিল্প ও গৃহায়ন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন,
“বিপিও খাত শুধু অর্থনৈতিক নয়, এটি মানবসম্পদ রূপান্তরের প্রতীক। সরকার এই খাতের বিকাশে পূর্ণ সহায়তা করবে।”

বাক্কোর সাধারণ সম্পাদক ফয়সল আলিম বলেন,
“ফ্রিল্যান্সার, উদ্যোক্তা ও তরুণদের জন্য সেমিনার ও নীতিনির্ধারণী সংলাপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।”

সেমিনার ও ওয়ার্কশপ

উদ্বোধনী পর্বের পর চলেছে দুই দিনব্যাপী বিভিন্ন সেমিনার ও ওয়ার্কশপ। এতে বৈশ্বিক বিপিও চাহিদা, বাংলাদেশের বাজার অবস্থান এবং তরুণ প্রজন্মের দক্ষতা উন্নয়নের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

সেমিনারগুলোতে অংশ নিয়েছেন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, উদ্যোক্তা, কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক ক্রেতারা, যা বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে বৈশ্বিক মঞ্চে শক্তিশালী করবে।

স্ট্র্যাটেজিক ও সহযোগী প্রতিষ্ঠান

সামিটের কৌশলগত অংশীদার হিসেবে আছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ আইসিটি জার্নালিস্ট ফোরাম (বিআইজেএফ) ও টেকনোলজি মিডিয়া গিল্ড বাংলাদেশ (টিএমজিবি) রয়েছে।

দেশের বিখ্যাত বিপিও, আইটিইএস, ব্যাংকিং ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো স্পন্সর হিসেবে বড় অবদান রেখেছে।

স্পন্সরগণের অবদান

ডায়মন্ড স্পন্সরশিপ:

  • রকি ডায়লার
  • স্কাই টেক গ্লোবাল লিমিটেড

প্লাটিনাম স্পন্সরশিপ:

  • সিনার্জি আইটি সার্ভিসেস লিমিটেড
  • ব্রোটেক্স টেকনোলোজিস লিমিটেড

গোল্ড স্পন্সরশিপ:

  • সিনার্জি বিজনেস সল্যুশন

সেমিনার স্পন্সরশিপ:

  • ২৪/৭ ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্টস
  • আকিজ টেলিকম লিমিটেড
  • এএসকে টেলিকম লিমিটেড
  • আয়েশা সার্ভিসেস (এএসএল বিপিও)
  • ইগনাইট টেক সল্যুশনস
  • ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসি
  • ইউনিকার্ট

টেকনোলজি পার্টনারশিপ:

  • এডিএন টেলিকম লিমিটেড
  • টেকনো

লাইফস্টাইল পার্টনারশিপ:

  • অ্যাডোনিস গ্রুপ

নলেজ পার্টনারশিপ:

  • সিসি-এপিএসি
  • কোচ কাঞ্চন একাডেমি
  • সিওপিওসি

বাংলাদেশের বিপিও খাত: আগামী দিনের সম্ভাবনা

বাংলাদেশের বিপিও (বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং) খাত গত দশকে বিস্তৃত মাত্রায় উন্নতি করেছে। এই শিল্প দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে এবং প্রতিনিয়ত নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করছে। বিশেষ করে তরুণ ও প্রযুক্তি দক্ষ মানুষের জন্য এটি এক বিশাল সম্ভাবনার ক্ষেত্র।

সরকারি সহায়তা, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের সুযোগ ও দক্ষ জনবল বাংলাদেশের বিপিও খাতকে দ্রুত গতিতে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সামিটের মাধ্যমে এই খাতের বিভিন্ন সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে সমন্বিত আলোচনা হয়, যা ভবিষ্যতের পথ নির্দেশ করে।

‘বিপিও সামিট বাংলাদেশ ২০২৫’ শুধু একটি সম্মেলন নয়, এটি বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বিকাশ ও বৈশ্বিক আউটসোর্সিং শিল্পে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান গড়ে তোলার এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। নতুন প্রযুক্তি, দক্ষ কর্মী, উদ্যোক্তা ও আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্বের মাধ্যমে এই সামিট বাংলাদেশের ডিজিটাল ভবিষ্যতকে উজ্জ্বল করে তুলবে।

বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তি খাত ও বিপিও শিল্পের উন্নয়নের এই যাত্রা দেশের অর্থনীতিতে নতুন প্রেরণা যোগাবে এবং তরুণদের জন্য লক্ষ্মীভোজ কর্মসংস্থান ও সমৃদ্ধির দ্বার উন্মোচন করবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button