ঈদ বোনাস ও বেতনের দাবিতে নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে পোশাকশ্রমিকদের সমাবেশ

ঈদ বোনাস, বকেয়াসহ মার্চ মাসের বেতন পরিশোধের দাবিতে গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে পোশাকশিল্পের শ্রমিকেরা আজ শুক্রবার মানববন্ধন, সমাবেশ ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছেন।
গাজীপুরে শ্রমিক অসন্তোষ: ঈদ বোনাসের দাবিতে গাজীপুর নগরের তেলিপাড়া এলাকায় স্মাগ সোয়েটার লিমিটেডের শ্রমিকেরা সকাল সোয়া ৯টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন। এতে মহাসড়কটিতে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে দুর্ভোগে পড়েন যানবাহনের যাত্রী ও চলাচলকারীরা। শ্রমিক ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের ঈদের বোনাস দিয়েছে বেতনের ২৫ শতাংশ, যা শ্রমিকেরা চেয়েছেন ৫০ শতাংশ। তাঁরা ঈদ বোনাস বৃদ্ধির পাশাপাশি ওভারটাইম, মাতৃত্বকালীন বিল, টিফিন বিল, বার্ষিক ছুটিসহ ১৪ দফা দাবি জানান।
এ নিয়ে গাজীপুর নগরের বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাউসার আহমেদ বলেন, শ্রমিকদের সময়মতো বেতন দেওয়া হয়েছে। সরকার নির্ধারিত হিসাবে বোনাসও দেওয়া হয়েছে। তারপরও তাঁরা বেশি বোনাসের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন।
নারায়ণগঞ্জে শ্রমিকদের দাবি: ২০ রোজার মধ্যে এক মাসের বেতনের সমান ঈদ বোনাস ও সব বকেয়া বেতন–ভাতা পরিশোধের দাবিতে নারায়ণগঞ্জে পোশাকশ্রমিকেরা সমাবেশ করেছেন। একই সঙ্গে ঈদের আগেই তাঁরা মার্চ মাসের বেতন পরিশোধেরও দাবি জানান।
আজ বেলা ১১টায় নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার উদ্যোগে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। সংগঠনটির জেলা সভাপতি এম এ শাহীনের সভাপতিত্বে সমাবেশে কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী রুহুল আমিন, সহসভাপতি হাফিজুল ইসলাম, জেলার সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন, জাগো বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের জেলা শাখার সভাপতি গাজী নূরে আলম প্রমুখ বক্তব্য দেন।
শ্রমিক নেতাদের বক্তব্য: সমাবেশে নেতারা বলেন, ঈদ উপলক্ষে পোশাক কারখানার শ্রমিকদের কাঙ্ক্ষিত ঈদ বোনাস ও সব বকেয়া পাওনা ২০ রোজার মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। কারণ, বর্তমান বাজারে শ্রমিকেরা যে মজুরি পান, তা দিয়ে তাঁদের পরিবারের ব্যয় মেটানো সম্ভব হয় না। অতিরিক্ত সময় কাজ করতে হয়। এরপরও ১২ মাস টানাটানির মধ্যে ধারদেনা করে চলে। গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার সামর্থ্য ও সময়–সুযোগ কোনোটাই থাকে না। ঈদ এলেই কেবল শ্রমিকেরা একটু ভালো খাবার ও নতুন জামাকাপড় কেনার কথা ভাবেন। শ্রমিকদের এ আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্ন কোনোভাবেই নস্যাৎ করা যাবে না।
বক্তারা বলেন, অতীতে অনেক কারখানার মালিক বেতন–বোনাস নিয়ে কারখানায় সংকট তৈরি করতেন। কোনো কোনো কারখানার মালিক নামমাত্র বোনাস ৫০০ বা ১০০০ টাকা দিয়ে শ্রমিকদের বিদায় দিতেন। আবার কোনো মালিক সেটিও দেননি। এবার সরকারি নিয়মে শিল্পকারখানার শ্রমিকদের এক মাসের (বেসিক) বেতনের সমান ঈদ বোনাস দিতে হবে। ঈদুল ফিতরের সরকারি ছুটি পাঁচ দিন ভোগ করতে দিতে হবে। কোনো ধরনের বৈষম্য করা চলবে না। পাশাপাশি ঈদের ছুটির আগে মার্চ মাসের পূর্ণ বেতন দিতে হবে। এ ব্যাপারে বিকেএমইএ, বিজিএমইএ ও সরকারের পক্ষ থেকে আগেভাগেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান তাঁরা।
শ্রমিকদের ঈদ প্রত্যাশা: ঈদ বোনাস ও সময়মতো বেতন পরিশোধ শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার। প্রতি বছর ঈদের আগে শ্রমিকদের এমন আন্দোলন ও দাবি জানানোর ঘটনা দুঃখজনক। সরকার ও কারখানা মালিকদের উচিত শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি মেনে নেওয়া এবং তাদের ঈদ আনন্দ নিশ্চিত করা।