আঞ্চলিক

‘আমার খুব কষ্ট হচ্ছে’, রাশেদকে বলেছেন নুর

Advertisement

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দলের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খানকে বলেছেন, “ভাই, আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।” মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাকে দেখতে যান রাশেদ। এসময় নুর রক্তক্ষরণে ভুগছিলেন এবং প্রচণ্ড যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন বলে জানান তিনি।

রাশেদের অভিজ্ঞতা ও নুরের শারীরিক অবস্থা

হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন রাশেদ খান। তিনি জানান, নুর এখনও নাক দিয়ে রক্ত ঝরাচ্ছেন, কাশি দিলেই রক্ত বের হচ্ছে। এমনকি কথা বলতেও কষ্ট হচ্ছে তার। তবুও কষ্ট করে দু-একটি কথা বলতে সক্ষম হন নুর, আর তখনই তিনি দলের সাধারণ সম্পাদককে জানান তার দুঃসহ যন্ত্রণার কথা।

হামলার প্রেক্ষাপট ও ঘটনার পটভূমি

কয়েক দিন আগে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিতে গিয়ে নুরুল হক নুর হামলার শিকার হন। দলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, পরিকল্পিতভাবে তাকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছিল। এতে তিনি গুরুতর আহত হন এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, তার মাথা ও মুখমণ্ডলে আঘাত লেগেছে এবং শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়।

প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক

এই ঘটনার পর গণঅধিকার পরিষদের নেতারা প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন নুরের স্ত্রী মারিয়া আক্তার লুনা, সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খানসহ দলের শীর্ষ নেতারা। বৈঠকে ড. ইউনূস হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “যে ছেলে আওয়ামী লীগের আমলে এতবার মার খেয়েছে, সে আমাদের সময়েও এভাবে হামলার শিকার হলো।”

নুরের পরিবারের প্রতিক্রিয়া

নুরের স্ত্রী মারিয়া আক্তার লুনা বৈঠকে উপস্থিত থেকে প্রধান উপদেষ্টাকে ঘটনার বিস্তারিত জানান। তিনি বলেন, ড. ইউনূস দোষীদের বিচারের মুখোমুখি করার আশ্বাস দিয়েছেন এবং তাকে দুশ্চিন্তামুক্ত থাকতে বলেছেন। এছাড়া, নুরের উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার ব্যাপারেও আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। লুনা জানান, সরকার প্রয়োজনে তার পাশে থাকবে বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।

বৈঠকে উপস্থিত অন্যরা

গণঅধিকার পরিষদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ওই বৈঠকে ড. আসিফ নজরুল, পরিবেশবিদ সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং মানবাধিকার কর্মী আদিলুর রহমানও উপস্থিত ছিলেন। তারা সবাই নুরের শারীরিক অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং রাজনৈতিক সহিংসতা বন্ধে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান।

রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রতিক্রিয়া

হামলার ঘটনায় দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক অঙ্গনে নিন্দা জানানো হচ্ছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো বলছে, গণতান্ত্রিক আন্দোলন দমাতে এ ধরনের হামলা উদ্বেগজনক। তাদের মতে, এটি শুধু একটি দলের ওপর নয়, বরং গোটা গণতন্ত্রের ওপর আঘাত। অন্যদিকে সরকারি দলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সরকার দোষীদের বিচারের আওতায় আনবে এবং ন্যায্য তদন্ত নিশ্চিত করবে।

নুরুল হক নুরের রাজনৈতিক যাত্রা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি হিসেবে নির্বাচিত হয়ে আলোচনায় আসেন নুরুল হক নুর। তখন থেকেই তিনি ছাত্র অধিকার আন্দোলনের নেতা হিসেবে পরিচিতি পান। পরবর্তীতে তিনি গণঅধিকার পরিষদ গঠন করেন এবং রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় থাকেন। ছাত্র আন্দোলনের সময় থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত বারবার হামলার শিকার হয়েছেন তিনি। ফলে রাজনৈতিক অঙ্গনে তার নামটি সংগ্রামী তরুণ নেতার প্রতীক হিসেবে পরিচিত।

বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ধারাবাহিক সহিংসতা ও হামলার ঘটনা দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির জন্য নেতিবাচক। তারা বলছেন, নুরুল হক নুরের মতো তরুণ নেতার ওপর এ ধরনের হামলা তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারকে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত করছে, তেমনি সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের বিচার নিশ্চিত না হয়, তাহলে এর প্রভাব ভবিষ্যতের রাজনীতিতেও পড়বে।

সামনে কী হতে পারে

চিকিৎসকদের মতে, নুরুল হক নুরের শারীরিক অবস্থা এখনও ঝুঁকিপূর্ণ। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। রাজনৈতিকভাবে তার দল গণঅধিকার পরিষদও এ ঘটনার সুবিচার দাবি করে আসছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কত দ্রুত দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং নুরের চিকিৎসা কতটা অগ্রাধিকার পাবে।

এম আর এম – ১১৪৭, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button