বিশ্ব

কোথা থেকে এতো সুন্দর ইংরেজি বলা শিখলেন: লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্টকে প্রশ্ন ট্রাম্পের

Advertisement

 হোয়াইট হাউসে আফ্রিকান নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্টের সাবলীল ইংরেজি শুনে প্রশংসা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। প্রশ্ন তোলেন, এত সুন্দরভাবে ইংরেজি বলা শিখলেন কোথা থেকে? ট্রাম্পের এই মন্তব্য ঘিরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে।

ঘটনাটি কী?

হোয়াইট হাউসে আফ্রিকার পাঁচ দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অংশ নেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আলোচনার মাঝে লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্ট জোসেফ এন. বোয়াকাই ইংরেজিতে সাবলীল বক্তব্য শুরু করলে ট্রাম্প চমকে যান। সঙ্গে সঙ্গে তিনি প্রশংসা করে বলেন, “আপনার ইংরেজি খুব সুন্দর, এত সুন্দরভাবে বলা শিখলেন কোথায়?”

লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্ট উত্তরে জানান, তিনি লাইবেরিয়াতেই পড়াশোনা করেছেন, যেখানে ইংরেজিই সরকারি ভাষা।

বৈঠকের পটভূমি ও কী আলোচনা হয়েছিল?

যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে গতকাল বুধবার হোয়াইট হাউসে আয়োজিত এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন গ্যাবন, গিনি বিসাউ, সেনেগাল, মৌরিতানিয়া ও লাইবেরিয়ার রাষ্ট্রপ্রধানরা। মূল আলোচ্য বিষয় ছিল আফ্রিকার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক উন্নয়ন, বাণিজ্য প্রসার এবং চীনের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল।

ট্রাম্প বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র আফ্রিকার প্রকৃত অংশীদার হতে চায় এবং আমরা চীনের থেকে ভালো সঙ্গী হতে পারি।” তিনি আফ্রিকায় মার্কিন বিনিয়োগ বাড়ানোর কথা বলেন এবং আফ্রিকান নেতাদের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

লাইবেরিয়ার ইতিহাস ও ইংরেজি ভাষার গুরুত্ব

লাইবেরিয়া আফ্রিকার একমাত্র দেশ যা ১৮৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভ করে আফ্রিকান-আমেরিকানদের জন্য গঠিত একটি উপনিবেশ হিসেবে। এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক দাসদের জন্য, যাঁরা আফ্রিকায় ফিরে গিয়ে একটি নতুন সমাজ গড়ে তুলেছিলেন। দেশটির সরকারিভাষা ইংরেজি, যা এখনো রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তরে ব্যবহৃত হয়।

এই ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটেই বোয়াকাইয়ের সাবলীল ইংরেজি উঠে আসে যুক্তি হিসেবে।

ট্রাম্পের মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক

ট্রাম্পের প্রশংসাসূচক মন্তব্য অনেকে ইতিবাচকভাবে নিলেও, অনেক আফ্রিকান বিশ্লেষক ও রাজনীতিক একে ‘পশ্চিমা মানসিকতার প্রতিফলন’ বলে উল্লেখ করেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার রাজনীতিবিদ ভেরোনিকা মেন্টে বলেন, “বোয়াকাই কেন প্রতিবাদ করেননি বা বৈঠক ছেড়ে যাননি?”

লাইবেরিয়ান যুব কর্মী আর্চি টামেল হ্যারিস বলেন, “এটা প্রশংসা নয়। পশ্চিমারা এখনও আমাদের অশিক্ষিত ও পিছিয়ে পড়া গ্রামবাসী হিসেবে দেখে। এটা এক ধরনের সাংস্কৃতিক অবমূল্যায়ন।”

আফ্রিকান নেতাদের প্রতিক্রিয়া

বৈঠকে উপস্থিত অন্যান্য আফ্রিকান নেতারা ট্রাম্পের কিছু বক্তব্যের প্রশংসা করলেও, ভাষা নিয়ে করা মন্তব্যকে নিয়ে তারা প্রকাশ্যে কিছু বলেননি। তবে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এমন মন্তব্য আফ্রিকা-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ক্ষেত্রে “অজান্তে কূটনৈতিক উত্তেজনা” তৈরি করতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র-আফ্রিকা সম্পর্কের বর্তমান প্রেক্ষাপট

সম্প্রতি চীনের ব্যাপক বিনিয়োগ ও অবকাঠামোগত সহায়তার কারণে আফ্রিকায় চীনের প্রভাব বেড়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন এই প্রভাব হ্রাস করতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়িক অংশগ্রহণ বাড়িয়ে।

এই বৈঠকটি মূলত সেই কৌশলেরই অংশ, যেখানে আফ্রিকান নেতাদের সরাসরি আশ্বাস দেওয়া হয়েছে যে যুক্তরাষ্ট্র এখন থেকে ‘সহযোগী নয়, প্রকৃত অংশীদার’ হিসেবে পাশে থাকবে।

এটি শুধু প্রশংসা, না সাংস্কৃতিক উপেক্ষা?

অনেক আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক মনে করছেন, ট্রাম্পের মন্তব্য আপাতদৃষ্টিতে প্রশংসাসূচক হলেও, এর মধ্যে উপনিবেশবাদী মানসিকতার ছাপ রয়েছে। ‘ইংরেজি ভালো বলতে পারা’কে এখনো অনেক পশ্চিমা নেতা উচ্চশিক্ষার মাপকাঠি হিসেবে বিবেচনা করেন, যা একটি সাংস্কৃতিক পক্ষপাত তৈরি করে।

বিশ্লেষক লিন্ডা এনজাবো বলেন, “একজন আফ্রিকান রাষ্ট্রপ্রধান ইংরেজিতে ভালো বলতেই পারেন, কারণ সেটি তার দেশেও সরকারিভাষা হতে পারে। এটা চমকে যাওয়ার বিষয় নয়—স্বাভাবিক ব্যাপার।”

“এটা প্রশংসা নয়। পশ্চিমারা এখনও আফ্রিকানদের অশিক্ষিত গ্রামবাসী হিসেবেই দেখে।”
— আর্চি টামেল হ্যারিস, লাইবেরিয়ান যুব কর্মী

লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্টের ইংরেজি দক্ষতা নিয়ে ট্রাম্পের মন্তব্য একদিকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়েছে, অন্যদিকে পশ্চিমা দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে ভাষা ও সংস্কৃতিকে ঘিরে এমন আলোচনা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে কি না—তা সময়ই বলে দেবে।

এম আর এম – ০২৮০, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button