বোতলজাত সয়াবিন উধাওয়ের পথে

বাংলাদেশে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট ক্রমেই তীব্র হচ্ছে। চট্টগ্রাম নগরের বড় বাজারগুলোর মধ্যে বহদ্দারহাটে অন্তত ৩০টি দোকানে সয়াবিন তেল বিক্রি হয়, কিন্তু গতকাল শনিবার এসব দোকানে মাত্র একটি দোকানে দুইটি পাঁচ লিটারের বোতল পাওয়া গেছে। ঢাকাতেও একই চিত্র দেখা যাচ্ছে। যেখানে সাধারণত সব মুদিদোকানে বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যেত, সেখানে এখন তেল খুঁজে পেতে কষ্ট হচ্ছে।
দাম ও সংকট
বড় দোকান থেকে পাঁচ লিটারের বোতল নিলে সাধারণত সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য (এমআরপি) থেকে কিছুটা ছাড় পাওয়া যেত। কিন্তু বর্তমানে নির্ধারিত দামের চেয়েও বেশি দিতে হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে দোকানদাররা তেলের সঙ্গে অন্য পণ্য কিনতে বাধ্য করছেন। অন্যদিকে, বাড়তি চাহিদার সুযোগ নিয়ে খোলা তেলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন বিক্রেতারা।
মোহাম্মদপুরের মোহাম্মদিয়া হাউজিং কাঁচাবাজার থেকে গতকাল দুপুরে পাঁচ লিটারের একটি বোতল সয়াবিন তেল কিনতে গিয়ে মাহফুজুর রহমান জানান, দোকানদার তাঁকে যে ব্র্যান্ডের সয়াবিন তেল দিচ্ছিলেন, সেই ব্র্যান্ডের তিন কেজি সুগন্ধি চালও নিতে হবে বলে শর্ত দেন। ফলে তিনি তেল নেননি।
আমদানি ও উৎপাদন
সয়াবিন বীজের আমদানিও বেড়েছে। গত জানুয়ারিতে সয়াবিন বীজ আমদানি হয়েছে তিন লাখ টন, যা গত এক বছরে এত বেশি সয়াবিন বীজ আমদানির রেকর্ড। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) হিসাব অনুযায়ী, দেশে বছরে প্রায় ২২ লাখ মেট্রিক টন ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে, যার বড় অংশ আমদানি করে মেটানো হয়।
চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যে দেখা যাচ্ছে, গত নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত তিন মাসে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে অপরিশোধিত সয়াবিন তেল খালাস হয়েছে ২ লাখ ৩২ হাজার টন, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬৯ শতাংশ বেশি। তবে, কেন বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না, জানতে চাইলে সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, “আমরা নিয়মিত বাজারে তেল সরবরাহ করছি। তবে সরবরাহ সংকট কেন, তা বলতে পারব না।”
বাজারের পরিস্থিতি
ভোজ্যতেলের বাজারের আরেক শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান মেঘনা গ্রুপের উপমহাব্যবস্থাপক তসলিম শাহরিয়ার বলেন, “শীতের শেষ দিকে সয়াবিন তেলের চাহিদা কমার কথা। এখন তো সরবরাহে ঘাটতি হওয়ার কথা নয়।” তবে, বাজারে আটটি আমদানি, পরিশোধন ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সক্রিয় থাকলেও সবার সরবরাহ স্বাভাবিক নয়। অনেকেরই ঘাটতি আছে বলে বাজারে সংকট তৈরি হয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ট্যারিফ কমিশন কোম্পানিগুলোর কাছে সরবরাহের তথ্য চেয়েছে। শিগগিরই তাদের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবদুর রহিম খান বলেন, “বোতলজাত তেলের সরবরাহ সংকটের বিষয়টি আমাদের জানা। আজ রোববার একটি বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেখানে পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে।”
দীর্ঘমেয়াদী সংকট
বোতলজাত তেলের এই সংকট গত দু-চার দিনের নয়, গত প্রায় চার মাস ধরে চলছে। নভেম্বরে এ সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছিল। এরপর সরকার সয়াবিন তেল আমদানিতে শুল্ক-কর কমায়। তারপরও সংকট না কাটায় গত ৯ ডিসেম্বর সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে আট টাকা বাড়ানোর সুযোগ দেওয়া হয়।
বাজারের বর্তমান অবস্থা
রাজধানীর কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট ও হাতিরপুল বাজার এবং চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট ও খাতুনগঞ্জ বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব বাজারের বেশিরভাগ দোকানে বোতলজাত সয়াব