বাংলাদেশ

আদালতে কাঁদলেন ছাগলকাণ্ডের সেই মতিউর, ধৈর্য ধরতে বললেন বিচারক

Advertisement

‘ছাগলকাণ্ডে’ আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক কর্মকর্তা মতিউর রহমানকে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় মঙ্গলবার ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে হাজির করা হয়। এদিন তার পক্ষে আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. ওয়াহিদুজ্জামান জামিন আবেদন করেন।

শুনানিতে মতিউর রহমান নিজে বক্তব্য দেওয়ার অনুমতি চান। আদালত অনুমতি দিলে তিনি আবেগপ্রবণ কণ্ঠে বলেন, “আমার পরিবার ধ্বংস হয়ে গেছে। আমি ও আমার স্ত্রী দুজনই কারাগারে। মা প্যারালাইসিসে ভুগছেন, তাকে দেখার কেউ নেই।” এ কথা বলতে গিয়ে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।

বিচারকের মন্তব্য ও জামিন নামঞ্জুর

মতিউরের বক্তব্য শেষে আদালত বলেন, “মামলাটি তদন্তাধীন। এখনই দোষী বা নির্দোষ বলা সম্ভব নয়। আপনাকে আরও ধৈর্য ধারণ করতে হবে।” পরে বিচারক তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন এবং মামলার কার্যক্রম চলমান রাখার নির্দেশ দেন।

এ সময় আদালতে উপস্থিত আইনজীবী ও সংশ্লিষ্টরা পরিস্থিতি প্রত্যক্ষ করেন। মতিউরের আবেগপূর্ণ বক্তব্য আদালতকক্ষে এক ধরনের নীরবতা সৃষ্টি করলেও আইন অনুযায়ী সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হয়।

মামলা

গত বছরের ২ জুলাই দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মতিউর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের সম্পদ বিবরণী দিতে নোটিশ পাঠায়। পরে ২৯ আগস্ট তিনি স্ত্রী-সন্তানসহ পাঁচজনের সম্পদ বিবরণী জমা দেন।

চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি মামলার পর ১৪ জানুয়ারি মতিউর ও তার স্ত্রী লায়লা কানিজ লাকিকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। দুদক তাদের বিরুদ্ধে মোট তিনটি মামলা করে, যার সবকটিতেই মতিউর প্রধান আসামি।

‘ছাগলকাণ্ড’ থেকে শুরু বিতর্ক

মতিউর রহমান প্রথম আলোচনায় আসেন ২০২৪ সালের কোরবানির ঈদে, যখন তার ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাত ১৫ লাখ টাকা দিয়ে কোরবানির জন্য একটি ছাগল কেনার খবর প্রকাশিত হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এটি ‘ছাগলকাণ্ড’ নামে ভাইরাল হয়ে যায়।

সেই সময় ছাগলের দাম নিয়ে প্রশ্ন উঠলে ইফাত গণমাধ্যমে তার বাবার পরিচয় দেন। এরপর থেকেই একজন সরকারি কর্মকর্তার পরিবারের এত বড় অঙ্কের ব্যয়ে পশু কেনার সক্ষমতা নিয়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়।

পারিবারিক পরিচয় নিয়ে বিতর্ক

ছাগলকাণ্ডের পর আরেক বিতর্ক তৈরি হয় যখন মতিউর রহমান গণমাধ্যমে দাবি করেন, ইফাত তার ছেলে নন। তিনি বলেন, তার একমাত্র ছেলে তৌফিকুর রহমান। তবে পরবর্তীতে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও ঘনিষ্ঠ মহল থেকে দাবি আসে, ইফাত আসলেই মতিউরের ছেলে, যা দ্বিতীয় স্ত্রীর সংসারের সন্তান।

এ বিতর্কের মধ্যেই ইফাত ও পরিবারের ছবিগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীও প্রকাশ্যে দাবি করেন, ইফাত তার মামাতো বোনের সন্তান এবং মতিউরের দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরে জন্ম।

সামাজিক প্রতিক্রিয়া ও পদক্ষেপ

ছাগলকাণ্ড নিয়ে অনলাইনে প্রবল সমালোচনার মুখে মতিউর রহমানকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাস্টমস, এক্সসাইজ ও ভ্যাট আপিলেট ট্রাইব্যুনালের সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

এরপর দুদক তার ও পরিবারের সম্পদ খতিয়ে দেখতে তদন্ত শুরু করে। তদন্তে অসঙ্গতি ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের প্রমাণ পাওয়ার অভিযোগে মামলা হয়।

বিশেষজ্ঞ মতামত

আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের মামলায় জামিন পাওয়া অনেক সময় কঠিন হয় যদি তদন্ত প্রাথমিক পর্যায়ে থাকে এবং প্রমাণ সংগ্রহ চলমান থাকে। অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার আগে অভিযুক্ত ব্যক্তি আইনত দোষী নন, তবে তদন্ত প্রক্রিয়ায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য জামিন প্রত্যাখ্যান হতে পারে।

দুদকের সাবেক পরিচালক একজন আইনজীবীর ভাষ্য, “মতিউরের মামলা গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচুর আলোচিত হয়েছে। এ ধরনের আলোচিত মামলায় তদন্তকারীরা আরও সতর্ক থাকেন যাতে আদালতের রায় প্রভাবিত না হয়।”

শেষ কথা 

আদালতে কান্নায় ভেঙে পড়া মতিউর রহমানের বক্তব্য মানবিক দিক থেকে আলোড়ন তুললেও আইনের চোখে তা জামিন পাওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল না। মামলাটি এখন তদন্তাধীন এবং চূড়ান্ত ফলাফল নির্ভর করবে প্রমাণ ও আইনি প্রক্রিয়ার ওপর।

এম আর এম – ০৮১৬, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button