বানিজ্য

স্বর্ণের দামে বড় লাফ, ভরিতে বাড়ল ৫২৪৮ টাকা

Advertisement

স্থানীয় বাজারে স্বর্ণের দাম আবারও বেড়েছে। বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) নতুন দামে ভরিতে ৫ হাজার ২৪৮ টাকা বাড়িয়েছে। এতে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম দাঁড়ালো ২ লাখ ১৩ হাজার ৭১৯ টাকা। নতুন দাম কার্যকর হবে শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) থেকে।

দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম আবারও উর্ধ্বমুখী। বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) রাতে বাজুসের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে পিওর স্বর্ণের দাম বাড়ায় স্থানীয় বাজারে দাম সমন্বয় করা হয়েছে। শুক্রবার থেকে নতুন মূল্য কার্যকর হবে।

নতুন দামে ২২ ক্যারেট স্বর্ণ ভরিতে ২ লাখ ১৩ হাজার ৭১৯ টাকা

বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, নতুন দামে প্রতি ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ১৩ হাজার ৭১৯ টাকা।
২১ ক্যারেটের স্বর্ণের দাম হবে ২ লাখ ৪ হাজার ৩ টাকা, ১৮ ক্যারেটের ভরি ১ লাখ ৭৪ হাজার ৮৫৫ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির স্বর্ণের ভরি ১ লাখ ৪৫ হাজার ৫২০ টাকা।

বাজুসের বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, বিক্রয়মূল্যের সঙ্গে সরকার নির্ধারিত ৫ শতাংশ ভ্যাট এবং বাজুস নির্ধারিত ন্যূনতম ৬ শতাংশ মজুরি যুক্ত করতে হবে। গহনার নকশা ও মান অনুযায়ী মজুরি কিছুটা তারতম্য হতে পারে।

কেন বাড়ছে স্বর্ণের দাম?

বাজুস জানিয়েছে, সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম বেড়ে গেছে, যা প্রভাব ফেলেছে স্থানীয় বাজারেও। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে মুদ্রাস্ফীতি বাড়ায় বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে স্বর্ণে ঝুঁকছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্ববাজারে এই প্রবণতা চলমান থাকলে আগামী মাসগুলোতেও দাম বাড়তে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক সাবেক কর্মকর্তা বলেন, “আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা বাড়লে আমদানির খরচ বেড়ে যায়। এতে স্থানীয় পর্যায়ে দাম বাড়া স্বাভাবিক।”

চলতি বছরে স্বর্ণের দামে রেকর্ডসংখ্যক সমন্বয়

২০২৫ সালে এ নিয়ে ৭৬তম বার স্বর্ণের দাম সমন্বয় করল বাজুস।
এর মধ্যে ৫৩ বার দাম বেড়েছে এবং ২৩ বার কমেছে। ২০২৪ সালে সমন্বয় হয়েছিল ৬২ বার—যার মধ্যে ৩৫ বার বাড়ানো হয় এবং ২৭ বার কমানো হয়।

স্বর্ণের দামের ঘনঘন পরিবর্তন নিয়ে জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিতিশীলতার কারণে স্থানীয় বাজারেও ধারাবাহিক পরিবর্তন হচ্ছে। এতে ব্যবসায়িক পরিকল্পনা তৈরি করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

রুপার দাম অপরিবর্তিত

স্বর্ণের দাম বাড়লেও দেশে রুপার বাজার স্থিতিশীল রয়েছে।
বর্তমানে ২২ ক্যারেটের এক ভরি রুপা বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ২৪৬ টাকায়।
২১ ক্যারেটের রুপার দাম ৪ হাজার ৪৭ টাকা, ১৮ ক্যারেটের ৩ হাজার ৪৭৬ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির রুপার দাম ২ হাজার ৬০১ টাকা।

চলতি বছর এখন পর্যন্ত রুপার দাম ৯ বার সমন্বয় করা হয়েছে — যার মধ্যে বেড়েছে ৬ বার, আর কমেছে ৩ বার।

ক্রেতা-বিক্রেতার মিশ্র প্রতিক্রিয়া

স্বর্ণের দাম বাড়ায় সাধারণ ক্রেতারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। অনেকেই জানিয়েছেন, বিয়েশাদি বা জমি বিক্রির পর গহনা কেনা আরও ব্যয়বহুল হয়ে পড়ছে।
অন্যদিকে জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, দামের এই বৃদ্ধি সাময়িক এবং আন্তর্জাতিক বাজার স্থিতিশীল হলে দামও আবার কমে আসবে।

রাজধানীর এক জুয়েলারি দোকান মালিক বলেন, “দাম বাড়লেও বিক্রি খুব একটা কমে না, কারণ স্বর্ণ এখন বিনিয়োগেরও মাধ্যম।”

ভবিষ্যতে দামের ধারা কেমন হতে পারে

বিশেষজ্ঞদের মতে, বৈশ্বিক বাজারে ডলার দর, তেলের দাম ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর স্বর্ণের ভবিষ্যৎ দাম অনেকাংশে নির্ভর করছে।
যদি বৈশ্বিক উত্তেজনা বা মুদ্রাস্ফীতি কমে আসে, তাহলে পরবর্তী সমন্বয়ে দাম কিছুটা কমতেও পারে। তবে আপাতত বাজারে স্বর্ণের দাম উচ্চ পর্যায়ে থেকেই স্থিতিশীল থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

স্বর্ণের দামের এই ঊর্ধ্বগতি সাধারণ ভোক্তা থেকে ব্যবসায়ী—সবাইকে প্রভাবিত করছে। বিশ্ববাজারের অস্থিরতা অব্যাহত থাকলে আগামী মাসগুলোতেও স্বর্ণের দাম আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে স্থিতিশীল বৈশ্বিক অর্থনীতি এ প্রবণতা থামাতে পারে বলে আশা রাখছেন তারা।

এম আর এম – ২২৩২,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button