ঢাকা — নানা চমক-আশ্চর্যের মধ্যদিয়ে ঢাকায় গত ২৪ জুলাই অনুষ্ঠিত হয়েছে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (Asian Cricket Council, এসিসি) বার্ষিক সাধারণ সভা (Annual General Meeting, AGM)। দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনায় থাকা এই সভা সফলভাবে শেষ হয়েছে রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে মাত্র দেড় ঘণ্টার মধ্যেই।
সভায় উপস্থিত ছিলেন টেস্ট খেলা পাঁচ দেশের মধ্যে তিন দেশের প্রতিনিধি। বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের ক্রিকেট বোর্ডের প্রতিনিধিরা সরাসরি উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে, ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে অংশ নিয়েছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (BCCI) এর সহ-সভাপতি রাজিভ শুক্লা ও শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি শামি সিলভা।
এশিয়ান ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনায় ঢাকা
এসিসির এই এজিএম ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ করোনা মহামারীর পর ক্রিকেট কমিউনিটির মধ্যে সরাসরি বৈঠকের খুব একটা সুযোগ হয়নি। ফলে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (BCB) এর তৎপরতায় ঢাকায় এই সম্মেলনটি সম্পন্ন হওয়া খুবই ইতিবাচক খবর বলে মনে করছে ক্রিকেট বিশ্ব।
এসিসি চেয়ারম্যান মহসিন নাকভি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন,
“আমরা অত্যন্ত সফলভাবে এসিসির বার্ষিক সভাটি সম্পন্ন করেছি। ২৫টি সদস্য দেশ থেকে প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেছেন। যারা আসতে পারেননি তারা ভার্চুয়াল মাধ্যমে যুক্ত ছিলেন। বিসিবির সভাপতি মোহাম্মদ আমিনুল হককে বিশেষ ধন্যবাদ, যিনি সভার আয়োজন দারুণভাবে করেছেন।”
আলোচনার মূল বিষয়: এশিয়া কাপ ও আসন্ন সিরিজ
যদিও আনুষ্ঠানিক এজিএন্ডায় এশিয়া কাপের কোনো বিষয়ে আলোচনা ছিল না, তথাপি বৈঠকে এশিয়ার সবচেয়ে বড় টুর্নামেন্ট এশিয়া কাপ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। মহসিন নাকভি স্পষ্ট করে বলেন,
“এশিয়া কাপ নিয়ে মূল সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা এসিসি’র নেই, এটি বিসিসিআই-এর সঙ্গে পরবর্তী সমঝোতার বিষয়।”
তবে অভ্যন্তরীণ সূত্র থেকে জানা গেছে, এশিয়া কাপ ২০২৫-এর আয়োজন প্রায় নিশ্চিত। প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী টুর্নামেন্টটি ৫ থেকে ৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শুরু হতে পারে। হোস্ট সিটি হবে দুবাই ও আবুধাবি।
বাংলাদেশ-পাকিস্তান-অস্ট্রেলিয়া ত্রিদেশীয় সিরিজের গুঞ্জন
ক্রিকেট ভক্তদের জন্য আরও বড় সুখবর হলো, চলতি বছরের মধ্যে হতে পারে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়ার ত্রিদেশীয় সিরিজ। যদিও পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (PCB) এর চেয়ারম্যান ইমরান খান (নাম কাল্পনিক, প্রয়োজনে সঠিক নাম দিন) বিষয়টি নিশ্চিত করেননি, তবে সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
বাংলাদেশের ক্রিকেট অনুরাগীদের জন্য এটি বড় সুখবর হতে পারে, কারণ দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ত্রিদেশীয় সিরিজের আয়োজন না হওয়ায় অনেকটাই শূন্যতা ছিল। তাছাড়া, এটি বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য আন্তর্জাতিক পরিসরে বড় সুযোগ হিসেবে ধরা হচ্ছে।
ঢাকায় এসিসির এজিএমের গুরুত্ব ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা
এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের প্রধান লক্ষ্য হলো এশিয়ার ক্রিকেট উন্নয়ন। সম্প্রতি অনেক দেশ যেমন আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করেছে। এসিসির এই সভায় সদস্য দেশগুলো একসাথে হয়ে ভবিষ্যতে ক্রিকেটের উন্নয়নের জন্য সমন্বিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করছে।
মহসিন নাকভি বলেন,
“আমরা ক্রিকেটের প্রতি আমাদের দায়িত্ববোধ থেকে এশিয়ার ছোট থেকে বড় সব দেশের ক্রিকেট উন্নয়নে কাজ করবো। বিশেষ করে যুব ক্রিকেটারদের জন্য নতুন উদ্যোগ নেয়া হবে।”
তাছাড়া, এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ক্যাম্প, কোচিং সেশন, ও আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট আয়োজনের মাধ্যমে সদস্য দেশগুলোকে সহযোগিতা করবে বলে জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের সফলতা ও এসিসিতে সাফল্যের অংশীদারিত্ব
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (BCB) সভাপতি মোহাম্মদ আমিনুল হক বলেছেন,
“আমরা গর্বিত এসিসির মতো বৃহৎ সংগঠনের একটি অংশ হতে পেরে। বাংলাদেশ ক্রিকেট অনেক উন্নতি করেছে এবং ভবিষ্যতে এশিয়ার অন্যতম শক্তিশালী ক্রিকেট দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। এসিসি’র মতো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।”
বাংলাদেশ ক্রিকেটের সাম্প্রতিক সফলতা যেমন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভালো পারফরম্যান্স, ব্যাটিং-বোলিং সমন্বয়ে উন্নতি, এবং যুব প্রজন্মের ক্রিকেটারদের উজ্জ্বল ভবিষ্যত এই সভার আলোচনার অন্যতম বিষয় ছিল।
ভারতের ভার্চুয়াল অংশগ্রহণ ও শ্রীলঙ্কার প্রতিনিধিত্ব
ভারতের সহ-সভাপতি রাজিভ শুক্লা ভার্চুয়াল সভায় যোগ দিয়ে এশিয়ার ক্রিকেটে ভারতীয় বোর্ডের ভুমিকা তুলে ধরেন। তিনি বলেন,
“ভারত সবসময় এশিয়ার ক্রিকেট উন্নয়নে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে এবং ভবিষ্যতেও রাখবে।”
শ্রীলঙ্কার বোর্ড সভাপতি শামি সিলভা অনলাইনে যোগ দিয়ে শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটের বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা তুলে ধরেন। শ্রীলঙ্কা দীর্ঘদিন ধরেই ক্রিকেটের শক্তিশালী দেশ হলেও সাম্প্রতিক সময়ে কিছু অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক সমস্যার কারণে কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। তবে এসিসির সহযোগিতায় তারা নিজেকে পুনর্গঠনের লক্ষ্যে কাজ করছে।
পরবর্তী পরিকল্পনা ও ক্রিকেট প্রেমীদের প্রত্যাশা
এসিসি’র এই বার্ষিক সভা এশিয়ার ক্রিকেটের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করেছে। আগামী মাসগুলোতে এশিয়ান ক্রিকেটের উন্নয়নে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ এবং আন্তর্জাতিক ম্যাচের সূচি চূড়ান্ত করা হবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আগামী বছর এশিয়ান ক্রিকেটে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও অন্যান্য দেশের মধ্যে চমকপ্রদ ম্যাচগুলো দর্শকদের জন্য বিশেষ আকর্ষণীয় হবে।
বিশেষ করে, ২০২৫ এশিয়া কাপ ও বাংলাদেশ-পাকিস্তান-অস্ট্রেলিয়া ত্রিদেশীয় সিরিজ ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য দারুণ উপহার হতে চলেছে।
ঢাকায় অনুষ্ঠিত এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের বার্ষিক সাধারণ সভা কেবলমাত্র একটি নিয়মিত বৈঠক নয়, বরং এটি এশিয়ার ক্রিকেটের উন্নয়নের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। বিশ্বের ক্রিকেট মানচিত্রে এশিয়ার অবস্থান আরও শক্তিশালী করতে এসিসি সদস্য দেশগুলো একযোগে কাজ করবে বলেই আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ক্রিকেট বোর্ডের কর্তারা।
আগামী দিনে ঢাকা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কনফারেন্স ও গুরুত্বপূর্ণ সভার জন্য একটি অন্যতম গন্তব্য হয়ে উঠতে পারে, যেখানে এশিয়ার ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।



