বানিজ্য

প্রথমবারের মতো রাশিয়ায় আপেল রপ্তানি শুরু করল আফগানিস্তান

Advertisement

প্রথমবারের মতো রাশিয়ায় আফগান আপেল রপ্তানি শুরু

আফগানিস্তানের কান্দাহার প্রদেশের কৃষি, সেচ ও পশুপালন বিভাগের উদ্যোগে প্রথমবারের মতো রাশিয়ায় আফগান আপেল রপ্তানি শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর, ২০২৫) এই খবর নিশ্চিত করেছেন বিভাগীয় মুখপাত্র ইঞ্জিনিয়ার মুহাম্মাদ হানিফ হাকমাল।

প্রথম চালানে ৫০ টন আপেল রাশিয়ার বাজারে পাঠানো হবে, যার মূল্য প্রায় এক লাখ মার্কিন ডলার। ইঞ্জিনিয়ার হাকমাল জানান, এ বছরের পুরো কার্যক্রমের লক্ষ্য প্রায় ১,০০০ টন আপেল রপ্তানি করা।

আফগান আপেলের বৈশিষ্ট্য

আফগানিস্তান তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং উর্বর মাটির কারণে ফল ও সবজি উৎপাদনে বিশেষভাবে সমৃদ্ধ। কান্দাহার প্রদেশ আফগানিস্তানের সবচেয়ে বিখ্যাত আপেল উৎপাদন কেন্দ্র। এই অঞ্চলের আপেল মিষ্টি, রসালো এবং দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে বিশেষ চাহিদা রয়েছে।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, আফগান আপেল দীর্ঘদিন ধরে দেশীয় বাজারে বিক্রি হলেও আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি এর আগে সীমিত ছিল। তবে নতুন বাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে প্রথমবারের মতো রাশিয়ায় সরাসরি রপ্তানি শুরু হওয়ায় কৃষক ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ সৃষ্টি হয়েছে।

রাশিয়ায় রপ্তানির গুরুত্ব

আফগানিস্তানের জন্য রাশিয়া একটি বড় ও সম্ভাবনাময় বাজার। রাশিয়ায় আফগান আপেল রপ্তানি অর্থনৈতিকভাবে কৃষকদের জন্য নতুন আয় উৎস তৈরি করবে। এছাড়াও, এটি আফগানিস্তানের কৃষি খাতের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি বৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

ইঞ্জিনিয়ার হাকমাল বলেন, “রাশিয়ায় আপেল রপ্তানি আমাদের কৃষকদের জন্য নতুন বাজারের সুযোগ তৈরি করবে। এটি শুধু আর্থিক উন্নয়ন নয়, আফগানিস্তানের কৃষি খাতের আন্তর্জাতিকীকরণেও সাহায্য করবে।”

কৃষকদের প্রতিক্রিয়া

কান্দাহারের কৃষকরা রাশিয়ায় আপেল রপ্তানি নিয়ে আনন্দ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তারা আন্তর্জাতিক বাজারে নিজেদের পণ্যের স্থান নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন। বিশেষত কান্দাহারের উর্বর মাটি, প্রাকৃতিক জলবায়ু এবং উন্নত কৃষি প্রযুক্তি আফগান আপেলকে বিশ্বমানের করে তুলেছে।

কৃষক রশীদুল্লাহ হোসেন বলেন, “আমাদের আপেল শুধু দেশীয় বাজারে নয়, আন্তর্জাতিক বাজারেও এখন প্রবেশ করবে। এটি আমাদের আয় বাড়াবে এবং কৃষির প্রতি নতুন প্রজন্মের উৎসাহ সৃষ্টি করবে।”

রপ্তানি প্রক্রিয়া ও চ্যালেঞ্জ

রাশিয়ায় আপেল রপ্তানি একটি জটিল প্রক্রিয়া। আপেল সংগ্রহ, বাছাই, সংরক্ষণ ও রফতানি করার সময় সঠিক তাপমাত্রা এবং সংরক্ষণ পদ্ধতি নিশ্চিত করতে হয়। কান্দাহার প্রদেশের কৃষি বিভাগ এ জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি সরবরাহ করছে।

এদিকে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মানদণ্ড অনুসরণ করা এবং পণ্যের গুণমান নিশ্চিত করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তবে স্থানীয় প্রশাসন ও কৃষকরা একযোগে কাজ করে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে।

আফগানিস্তানের কৃষি খাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রসারণ

রাশিয়ায় আপেল রপ্তানি আফগানিস্তানের কৃষি খাতের আন্তর্জাতিক সম্প্রসারণের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি দেখায় যে আফগানিস্তানের কৃষি খাত শুধুমাত্র দেশীয় চাহিদা মেটাতে সীমাবদ্ধ নয়, বরং আন্তর্জাতিক বাজারেও প্রতিযোগিতা করতে সক্ষম।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আফগানিস্তানের ফল, শাকসবজি এবং অন্যান্য কৃষি পণ্য আন্তর্জাতিক বাজারে উচ্চ চাহিদা রাখে। আফগান সরকার ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংস্থা এই প্রক্রিয়ায় কৃষকদের সমর্থন দিচ্ছে।

রপ্তানার অর্থনৈতিক প্রভাব

রাশিয়ায় আফগান আপেল রপ্তানি স্থানীয় অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে। কৃষকরা নতুন আয় উৎস পাবে, এবং স্থানীয় ব্যবসায়িক সংস্থাগুলো আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে ব্যবসা সম্প্রসারণের সুযোগ পাবে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, “প্রথমবারের মতো আফগান আপেল রাশিয়ায় রপ্তানি হওয়া মানে কেবল একবারের বাণিজ্য নয়, এটি দীর্ঘমেয়াদে আফগানিস্তানের কৃষি ও বাণিজ্য ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত খুলে দেবে।”

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

আফগানিস্তানের কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, তারা আগামী কয়েক বছরে আফগান আপেলের রপ্তানি ৫,০০০ টন পর্যন্ত বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। এছাড়াও, তারা নতুন আন্তর্জাতিক বাজার, যেমন মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপীয় দেশেও রপ্তানি সম্প্রসারণের ওপর মনোযোগ দিচ্ছে।

ইঞ্জিনিয়ার হাকমাল বলেন, “আমরা চাই আফগান আপেলকে বিশ্বমানের পণ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে। কৃষকরা সঠিক প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ পেলে এই লক্ষ্য সহজে অর্জন করা সম্ভব।”

আন্তর্জাতিক দৃষ্টিকোণ

আফগান আপেলের রাশিয়ায় রপ্তানি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আফগানিস্তানের কৃষি উন্নয়নকে তুলে ধরছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আফগানিস্তানের এমন উদ্যোগ দেশটির স্থায়ী অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

বিশ্ববাজারে আফগান আপেলের পরিচিতি বৃদ্ধি পেলে কৃষকরা শুধুমাত্র আর্থিকভাবে লাভবান হবেন না, দেশের কৃষি খাতও আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিযোগিতায় সক্ষম হবে।

প্রথমবারের মতো রাশিয়ায় আফগান আপেল রপ্তানি আফগানিস্তানের কৃষি খাতের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। কান্দাহারের কৃষকরা আনন্দিত, স্থানীয় প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ সমর্থন দিচ্ছে, এবং আন্তর্জাতিক বাজারে আফগান পণ্যের চাহিদা বাড়ছে।

এটি শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়ন নয়, আফগানিস্তানের কৃষি ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ, যা ভবিষ্যতে দেশের জন্য আরও নতুন বাজার এবং সুযোগ তৈরি করবে।

MAH – 13640 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button