শুল্ক লড়াইয়ে সম্ভাবনার দ্বার: বাংলাদেশের জন্য নতুন বাণিজ্যিক সুযোগ
বিশ্বের বড় অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে শুল্ক নিয়ে চলমান লড়াই বিশ্ববাণিজ্যে অস্থিতিশীলতা তৈরি করলেও বাংলাদেশের জন্য এটি বড় সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্যের রপ্তানিতে বাংলাদেশের জন্য বাড়তি চাহিদা তৈরি হতে পারে। তুলনামূলক কম শুল্ক সুবিধার কারণে চীন ও মেক্সিকোর পণ্যের চেয়ে বাংলাদেশের পণ্য পশ্চিমা বাজারে দামে সাশ্রয়ী হবে, যা নতুন বিনিয়োগের সম্ভাবনাও বাড়াবে।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, “বড় অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে শুল্ক লড়াই বাংলাদেশের রপ্তানি ও এফডিআই-এর জন্য সুবিধাজনক পরিবেশ তৈরি করবে। তবে সঠিক কৌশল ছাড়া এই সম্ভাবনা কাজে লাগানো কঠিন।” তিনি আরও যোগ করেন, “বিনিয়োগের ক্ষেত্রের জটিলতা দূর করে, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে (SEZ) সেবা সহজলভ্য করলে এই সুযোগকে কার্যকর করা সম্ভব।”
বিশ্ববাজারে শুল্ক লড়াইয়ের ফলে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, কানাডা এবং মেক্সিকোর মধ্যে পারস্পরিক শুল্কারোপের প্রভাব পড়বে। তবে মৌলিক চাহিদার পণ্য হিসেবে তৈরি পোশাকের চাহিদা বড় ধরনের হ্রাস পাবে না। বিজিএমইএর সহায়ক কমিটির সদস্য আসিফ আশরাফ বলেন, “শুল্ক লড়াইয়ের অস্থিতিশীলতায় ক্রেতারা বিকল্প দেশ হিসেবে বাংলাদেশের দিকে ঝুঁকবে। তবে নীতিগত স্থিতিশীলতা ও প্রতিযোগিতামূলক উৎপাদন খরচ নিশ্চিত করতে না পারলে সুযোগ হাতছাড়া হতে পারে।”
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে ৭২০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে, যা মোট রপ্তানির ১৯ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রে গড়ে ১৫.৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ থাকলেও চীন ও মেক্সিকোর উদ্যোক্তারা বাংলাদেশের শুল্ক সুবিধা কাজে লাগিয়ে বিনিয়োগ বাড়াতে আগ্রহী।
শিল্প উদ্যোক্তা খোরশেদ আলম মনে করেন, “কম শুল্ক সুবিধার কারণে বাংলাদেশের পণ্য দামে প্রতিযোগিতামূলক হবে এবং এফডিআইও বাড়বে।” বিশেষজ্ঞদের মতে, বিনিয়োগের পরিবেশ সহজতর করা, গ্যাস ও বিদ্যুতের সরবরাহ স্থিতিশীল রাখা, এবং শ্রমিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেলে বাংলাদেশ এই সুযোগকে পূর্ণমাত্রায় কাজে লাগাতে পারবে।