বানিজ্য

বাংলাদেশে বন্দর উন্নয়ন: মোংলা ও চট্টগ্রামের ভবিষ্যৎ

মোংলা বন্দরকে আঞ্চলিক বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করার পরিকল্পনার কথা জানালেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র বন্দরটি শুধু আমদানি-রপ্তানির জন্যই নয়, আন্তঃদেশীয় যোগাযোগ ও আঞ্চলিক ব্যবসা সম্প্রসারণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম।

২৮ জানুয়ারি মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবি পোর্টসের প্রতিনিধি দলের সাথে বৈঠকে এ পরিকল্পনার কথা জানান তিনি।

মোংলা বন্দরের গুরুত্ব ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

নৌ উপদেষ্টা বলেন, মোংলা বন্দর বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। রাজধানী ঢাকা থেকে বন্দরটির দূরত্ব মাত্র ২১০ কিলোমিটার, যা নৌ, সড়ক এবং রেলপথের উন্নত অবকাঠামোর মাধ্যমে সহজেই পণ্য পরিবহন নিশ্চিত করছে। এছাড়া, এর ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনায় এটি ভারত, নেপাল এবং ভুটানের মতো প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্যও অত্যন্ত সম্ভাবনাময়।

তিনি আরও জানান, মোংলা বন্দরকে বিশ্বমানের করে তুলতে সরকার নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে। অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে।

আবুধাবি পোর্টসের বিনিয়োগে আগ্রহ

বৈঠকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবি পোর্টসের প্রতিনিধি দল মোংলা বন্দরের উন্নয়নে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করে। প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন বাংলাদেশের নিযুক্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত আব্দুল্লাহ আলী আল হামুদি। তারা জানান, আবুধাবি পোর্টস শুধু মোংলা বন্দর নয়, চট্টগ্রাম বন্দরসহ দেশের অন্যান্য বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগ করতে চায়।

তারা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন, চট্টগ্রাম বন্দরে বে-টার্মিনাল নির্মাণের প্রকল্পে তাদের অংশগ্রহণের আগ্রহ। এই টার্মিনাল চালু হলে বন্দরের চাপ কমবে এবং আমদানি-রপ্তানির গতি বৃদ্ধি পাবে।

ভবিষ্যৎ উন্নয়ন পরিকল্পনা

বৈঠকে নৌ উপদেষ্টা আবুধাবি পোর্ট গ্রুপকে মোংলা বন্দরের অবকাঠামোতে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “এই বন্দর শুধু বাংলাদেশ নয়, বরং পুরো অঞ্চলের জন্যই অর্থনৈতিক সম্ভাবনা সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়াও, দেশের অভ্যন্তরীণ নৌবন্দর, নিউ মুরিং কনটেইনার টার্মিনাল এবং অন্যান্য সেবা খাতের উন্নয়নে বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে।”

এডি পোর্টস গ্রুপ তাদের আগ্রহের কথা জানিয়ে আরও বলেন, বাংলাদেশে ব্যবসা সম্প্রসারণের পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য তারা কাজ করতে আগ্রহী। তারা অভ্যন্তরীণ নৌবন্দর, রেলপথ, সড়কপথ এবং অন্যান্য লজিস্টিক সুবিধা উন্নয়নের ওপরও গুরুত্ব দিচ্ছে।

মোংলা বন্দর: আঞ্চলিক বাণিজ্যের সম্ভাবনা

মোংলা বন্দর শুধু দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড নয়, বরং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। প্রতিবেশী দেশ নেপাল, ভারত এবং ভুটান তাদের বাণিজ্যিক পণ্য পরিবহনের জন্য এই বন্দর ব্যবহারে আগ্রহী।

সরকার ইতিমধ্যে বন্দরটির সক্ষমতা বাড়াতে বেশ কিছু প্রকল্প হাতে নিয়েছে। বন্দরের গভীরতা বাড়ানো, আধুনিক ক্রেন স্থাপন এবং নতুন টার্মিনাল নির্মাণের মতো প্রকল্পগুলো চালু রয়েছে। এসব উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে মোংলা বন্দর শুধু দেশের নয়, পুরো অঞ্চলের জন্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্র হয়ে উঠবে।

মোংলা বন্দরকে আঞ্চলিক বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করার লক্ষ্যে সরকার ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সম্মিলিতভাবে কাজ করছে। আবুধাবি পোর্টসের মতো বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ এই লক্ষ্যকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার পথে বড় ভূমিকা রাখবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button