দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম আবারও নতুন রেকর্ড স্থাপন করেছে। বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) ঘোষণা করেছে, ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ২৭১৮ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে পৌঁছেছে ১ লাখ ৮১ হাজার ৫৫০ টাকায়। দেশের ইতিহাসে এটি সর্বোচ্চ স্বর্ণমূল্য।
স্বর্ণের নতুন দাম ও প্রযোজ্য নিয়ম
বাজুসের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নতুন দাম সোমবার থেকে কার্যকর হবে। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পিওর গোল্ড) মূল্য বৃদ্ধির কারণে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।
নতুন দর অনুযায়ী, দেশের বাজারে প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম:
- ২২ ক্যারেট: ১,৮১,৫৫০ টাকা
- ২১ ক্যারেট: ১,৭৩,৩০৪ টাকা
- ১৮ ক্যারেট: ১,৪৮,৫৪১ টাকা
- সনাতন পদ্ধতি: ১,২৩,০৬৭ টাকা
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়েছে, স্বর্ণের বিক্রয়মূল্যের সঙ্গে সরকার-নির্ধারিত ৫ শতাংশ ভ্যাট এবং বাজুস-নির্ধারিত ন্যূনতম ৬ শতাংশ মজুরি যোগ করতে হবে। গহনার ডিজাইন ও মানভেদে মজুরির তারতম্য হতে পারে।
স্বর্ণের দাম বৃদ্ধির পেছনের কারণ
বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আন্তর্জাতিক স্বর্ণের দর বৃদ্ধির সঙ্গে দেশে চাহিদার চাপও স্বর্ণের দাম বাড়ানোর অন্যতম কারণ। এছাড়া বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা, ডলার বিনিময় হার ও আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধি দেশের বাজারে স্বর্ণের দামে প্রভাব ফেলেছে।
বাজারে বিনিয়োগকারীদের মতে, স্বর্ণ এখন নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, বিশেষ করে বৈশ্বিক মুদ্রাস্ফীতি এবং শেয়ারবাজারের অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে।
স্বর্ণের আগের দাম ও সাম্প্রতিক সমন্বয়
এর আগে ৩ সেপ্টেম্বর বাজুস ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ৩,০৪৪ টাকা বাড়িয়ে ১,৭৮,৮৩২ টাকায় নির্ধারণ করেছিল। সেই অনুযায়ী, ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১,৭০,৭০৩ টাকা, ১৮ ক্যারেট ১,৪৬,৩১৩ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতি ১,২১,১৬৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল।
চলতি বছর স্বর্ণের দাম দেশের বাজারে মোট ৫০ বার সমন্বয় করা হয়েছে, যার মধ্যে ৩৪ বার দাম বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ১৬ বার কমেছে। ২০২৪ সালে স্বর্ণের দাম মোট ৬২ বার সমন্বয় করা হয়েছিল, যেখানে ৩৫ বার দাম বৃদ্ধি পেয়েছিল।
রুপার দাম অপরিবর্তিত
স্বর্ণের দাম বেড়ালেও দেশের বাজারে রুপার দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। বর্তমানে ২২ ক্যারেটের এক ভরি রুপা বিক্রি হচ্ছে ২,৮১১ টাকায়। এছাড়া ২১ ক্যারেট রুপা ২,৬৮৩ টাকা, ১৮ ক্যারেট ২,২৯৮ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি রুপা ১,৭২৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রুপার দামের স্থিতিশীলতা বাজারে স্বর্ণের দাম বৃদ্ধির প্রভাব কিছুটা কমিয়ে দিয়েছে, তবে বিনিয়োগকারীরা এখনো স্বর্ণকেই প্রধান নিরাপদ বিকল্প হিসেবে দেখছেন।
বিশ্লেষণ ও বাজারের প্রতিক্রিয়া
বাজার বিশ্লেষকরা মনে করেন, স্বর্ণের নতুন দাম সাধারণ ক্রেতাদের জন্য কিছুটা প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষ করে গহনা ক্রেতাদের ক্ষেত্রে। তবে বিনিয়োগকারীরা এই সুযোগকে স্বর্ণে বিনিয়োগ বৃদ্ধির দিক থেকে দেখছেন।
একজন জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তা বলেন, “স্বর্ণের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতাদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে। তারা এখন স্বর্ণের মান, ক্যারেট ও বাজার মূল্যের ওপর বেশি মনোযোগ দেবেন।”
সারসংক্ষেপ
বাংলাদেশে স্বর্ণের দাম ফের রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে, যা বিনিয়োগকারীদের নজর কাড়ছে। আন্তর্জাতিক বাজার, মুদ্রাস্ফীতি, এবং স্থানীয় চাহিদা এই বৃদ্ধির মূল কারণ। রুপার দাম অপরিবর্তিত থাকলেও, স্বর্ণের বিনিয়োগ বর্তমানে নিরাপদ ও লাভজনক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামী সপ্তাহগুলোতে আন্তর্জাতিক স্বর্ণের বাজারে ওঠাপড়ার সঙ্গে দেশের বাজারও প্রভাবিত হতে পারে। ক্রেতা ও বিনিয়োগকারীদের জন্য সাবধানতার সঙ্গে বাজার পর্যবেক্ষণ করা গুরুত্বপূর্ণ।
এম আর এম – ১২৩৭,Signalbd.com



