বানিজ্য

পাবনায় দুই ঘণ্টার মধ্যে কাঁচা মরিচের দাম অর্ধেকে

Advertisement

পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার করমজা চতুর হাটে শনিবার সকালে কাঁচা মরিচের দাম অস্বাভাবিকভাবে ওঠানামা করে কৃষকদের মধ্যে হতাশা ছড়িয়েছে। মাত্র দুই ঘণ্টার ব্যবধানে মরিচের কেজির দাম ১৯০ থেকে ২২০ টাকা থেকে হঠাৎ করে নেমে আসে ৯০ থেকে ১২০ টাকায়। এতে করে মরিচ বিক্রেতা ও চাষিদের মধ্যে উদ্বেগ-চিন্তার পারদ চড়েছে। এই পরিস্থিতি কৃষকদের মাঝে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি করেছে।

মরিচের দাম অস্বাভাবিক পতনে হতাশা

সাঁথিয়ার ছেঁচানিয়া গ্রামের একজন মরিচ চাষি আবদুল আলীম জানান, তিনি সকালে নিজের জমি থেকে ১০ কেজি মরিচ তুলে নিয়ে করমজা চতুর হাটে যান। সেখানে সকাল ৯টা ৩০ মিনিটের দিকে মরিচ বিক্রি হচ্ছিল ১৯৫ টাকা কেজিতে। তিনি আশাবাদী ছিলেন, যদি দাম ২০০ টাকার কাছাকাছি হয় তবে লাভবান হবেন। কিন্তু তার ধারণার বিপরীত হয়ে দাঁড়ায়। হঠাৎ দুই ঘণ্টার মধ্যে দাম হ্রাস পেয়ে নেমে আসে মাত্র ১০০ টাকায়। তিনি বলেন,
“একই হাটে ১৯৫ টাকায় যে মরিচ বিক্রি করা যেত, সেটি পরে ১০০ টাকায় বিক্রি করতে হয়েছে। এর আগে মরিচের দাম খুবই কম ছিল, মাঝে মাঝে কেজিতে ১০-১৫ টাকা দরে বিক্রি করেছি। তখন লোকসান হয়েছিল, এখন দাম আবার অর্ধেক হয়ে গেলে তো আরও বড় ক্ষতি।”

বাজার পরিস্থিতি ও কারণসমূহ

গত শুক্রবার করমজা চতুর হাটসহ আশপাশের এলাকায় মরিচের দাম ছিল ২০০ থেকে ২৪০ টাকা কেজি প্রতি। তখন কৃষকরা আশাবাদী ছিলেন, মরিচের ভালো দাম পাবেন। কিন্তু পরবর্তী দিনেই বাজারে সরবরাহ হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় দাম কমে যায়।

মরিচের দাম অস্থিরতার পেছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে:

  1. সরবরাহ বৃদ্ধি: শনিবার সকালে অনেক কৃষক মরিচ তুলতে শুরু করেন, ফলে হাটে মরিচের সরবরাহ একযোগে বেড়ে যায়।
  2. বাজারে আমদানি সম্ভাবনা: ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আমদানির খবর ছড়িয়ে পড়ায় দেশের বিভিন্ন জায়গার পাইকার ও ব্যবসায়ীরা কম কেনাকাটা শুরু করেন, এতে দাম কমে যায়।
  3. আবহাওয়ার প্রভাব: প্রচণ্ড রোদ আর বৃষ্টির কারণে মরিচ তোলা ও বিক্রিতে বাধা আসে, এতে বাজারের অবস্থা একদম অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
  4. ব্যাপারীর অনড়তা: অনেক ব্যবসায়ী কম দামে মরিচ কিনতে আগ্রহী না হওয়ায় দাম দ্রুত নেমে আসে।

করমজা চতুর হাটের ‘হালাল কাঁচামাল’ আড়তের মালিক নজরুল ইসলাম বলেন,
“সকালে মরিচের দাম বেশি থাকলেও ব্যবসায়ীর সংখ্যা কম ছিল। একবার বাজারে মরিচের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দাম অর্ধেকে নেমে যায়।”

কৃষকের সংগ্রাম ও ক্ষতি

ছেঁচানিয়া গ্রামের মরিচচাষি আয়নাল হক জানান,
“এক বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করতে প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত ১৫ হাজার টাকার মতো মরিচ বিক্রি করতে পেরেছি। মরিচগাছের পাতা শুকিয়ে যাচ্ছে, তাই সামনে ফলন কম হওয়ার শঙ্কা আছে।”

সাধারণত এই সময় মরিচের মৌসুম, কিন্তু টানা বৃষ্টিপাত ও গাছের পাতা ঝরার কারণে কৃষকদের চিন্তা বাড়ছে। ফসলের ক্ষতি থেকে বাঁচাতে সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জীব কুমার গোস্বামী জানান,
“২ হাজার ২৭০ হেক্টর জমিতে মরিচের আবাদ হয়েছে, গড়ে বিঘাপ্রতি ৩২ মণ ফলন পাওয়া যাচ্ছে। আমরা কৃষকদের ছত্রাকনাশক প্রয়োগের পরামর্শ দিচ্ছি, যাতে ক্ষতি কমানো যায়।”

মরিচ উৎপাদন ও বাজারের ভবিষ্যত

মরিচ বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ও রপ্তানিযোগ্য ফসল। দেশের সব অঞ্চলে মরিচ চাষ হলেও পাবনা ও সাঁথিয়া এলাকা মরিচ চাষের জন্য বিখ্যাত। দেশের বাজারে মরিচের চাহিদা অনেক বেশি, তাই উৎপাদন ও বাজারের ওঠাপড়া সরাসরি কৃষকের আয়ের সঙ্গে জড়িত।

তবে মৌসুমের শুরুতে আবহাওয়ার ভালো সমর্থনে ফলন ভালো হলেও মাঝামাঝি সময়ের টানা বৃষ্টিপাত কৃষকদের স্বপ্ন নষ্ট করছে। বাজারে দামের অস্থিরতা যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে মরিচ চাষে কৃষকদের আগ্রহ হ্রাস পেতে পারে।

কৃষকদের দিকনির্দেশনা ও সরকারের ভূমিকা

সরকারি এবং কৃষি বিভাগের উচিত মরিচ চাষিদের জন্য বাজারের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা, সঠিক সময়ে কৃষি inputs (যেমন ছত্রাকনাশক, সার) সরবরাহ করা, এবং ফলন রক্ষায় আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা। পাশাপাশি, আমদানির বাজার নিয়ন্ত্রণ করে দেশের চাষিদের স্বার্থ রক্ষা করতে হবে।

কৃষক সংগঠন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মিলিত উদ্যোগে মরিচের বাজারের সঠিক তথ্য পৌঁছানো এবং দাম নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেওয়া গেলে ভবিষ্যতে এই অস্থিরতা কমানো সম্ভব।

পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার করমজা চতুর হাটে শনিবার কাঁচা মরিচের দাম অস্বাভাবিকভাবে দুই ঘণ্টার মধ্যে অর্ধেকে নেমে গিয়েছে, যা কৃষকদের মধ্যে বিরাট উদ্বেগ তৈরি করেছে। বাজারে সরবরাহ বাড়ার পাশাপাশি ভারত থেকে আমদানির সম্ভাবনা ও আবহাওয়ার প্রভাব দামের অস্থিরতার মূল কারণ। কৃষকরা বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। কৃষি বিভাগ দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে মরিচ চাষিদের পাশে দাঁড়াতে হবে।

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button