বিনিয়োগ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ঢাকা চেম্বারের প্রতিনিধিদলের শ্রীলংকা সফর

বাংলাদেশ ও শ্রীলংকার মধ্যকার বাণিজ্যিক সম্পর্ককে আরও জোরদার করতে এবং নতুন বিনিয়োগের সুযোগ অন্বেষণে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) একটি উচ্চপর্যায়ের বাণিজ্যিক প্রতিনিধিদল শ্রীলংকা সফরে গিয়েছে। ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদের নেতৃত্বে ২২ সদস্যের এই প্রতিনিধিদল সোমবার (১৬ জুন) দুপুরে ঢাকা ত্যাগ করে। সফরের উদ্দেশ্য হচ্ছে—দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং শ্রীলংকায় সম্ভাবনাময় খাতে বাংলাদেশি বিনিয়োগ ও পণ্য রফতানির নতুন দিগন্ত উন্মোচন।
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নতুন অধ্যায়
সার্কভুক্ত দেশ হিসেবে শ্রীলংকা বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক গন্তব্য। ভূরাজনৈতিক অবস্থান, সমুদ্রবন্দর সুবিধা এবং দ্রুত উদীয়মান ভোক্তা বাজারের কারণে দেশটি দক্ষিণ এশিয়ার বাণিজ্য ও বিনিয়োগে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে। এই সফর ঢাকার ব্যবসায়ী সমাজের জন্য সেই সম্ভাবনাগুলিকে কাজে লাগানোর এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
সফরের অংশ হিসেবে ১৭, ১৮ ও ১৯ জুন প্রতিনিধিদল যথাক্রমে সিলন চেম্বার অব কমার্স, ন্যাশনাল চেম্বার অব এক্সপোর্টার্স অব শ্রীলংকা এবং ন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স অব শ্রীলংকা’র সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অংশগ্রহণ করবে। এসব সভায় থাকবে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য আলোচনা এবং বিটুবি (ব্যবসা-থেকে-ব্যবসা) ম্যাচ-মেকিং সেশন। এসব উদ্যোগের মাধ্যমে শ্রীলংকায় বাংলাদেশি পণ্যের বাজার সম্প্রসারণ, যৌথ উদ্যোগ প্রতিষ্ঠা এবং বিনিয়োগ সহযোগিতা গড়ে তোলার পথ সুগম হবে।
বিনিয়োগ ও রফতানির সম্ভাবনাময় খাত
বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে রফতানি খাত একটি বড় চালিকাশক্তি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ-শ্রীলংকা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১৩৪.০৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম হলেও বিশ্লেষকদের মতে, এটি বৃদ্ধি করার বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে, বিশেষ করে যেসব খাতে দুই দেশের পারস্পরিক সম্পূরকতা রয়েছে।
ঢাকা চেম্বারের ভাষ্যমতে, কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, স্বাস্থ্যসেবা ও ফার্মাসিউটিক্যালস, পর্যটন ও আতিথেয়তা, নবায়নযোগ্য জ্বালানী, নির্মাণ ও অবকাঠামো, লজিস্টিক ও সাপ্লাই চেইন, তথ্যপ্রযুক্তি এবং ডিজিটাল ও আর্থিক পরিষেবা খাতে বাংলাদেশ-শ্রীলংকা যৌথভাবে কাজ করতে পারে। এসব খাতেই বাংলাদেশের বিনিয়োগকারীদের জন্য রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ।
উচ্চপর্যায়ের সৌজন্য সাক্ষাৎ
সফরকালে ডিসিসিআই প্রতিনিধিদলের সদস্যরা শ্রীলংকার শিল্পমন্ত্রী, পররাষ্ট্র উপমন্ত্রী ও অর্থ উপমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। এসব বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা, শুল্ক সুবিধা, যৌথ শিল্পপার্ক গঠন ও অবকাঠামো উন্নয়নে সহযোগিতার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হবে।
উল্লেখ্য, ডিসিসিআই পূর্বেও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশের ব্যবসায়ী সমাজের জন্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের দ্বার উন্মুক্ত করেছে। শ্রীলংকা সফর সেই ধারাবাহিকতারই অংশ।
অঞ্চলিক বাণিজ্যে শ্রীলংকার ভূমিকায় নতুন গুরুত্ব
বর্তমানে শ্রীলংকা তাদের অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করতে চাইছে। এমন সময় বাংলাদেশি বিনিয়োগকারীদের আগমন দেশটির জন্য ইতিবাচক বার্তা বহন করে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে একটি কার্যকর আঞ্চলিক বাণিজ্য কাঠামো গড়ে তোলার জন্য এই ধরনের সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত সাপ্লাই চেইন সংযোগ, ট্রানজিট সুবিধা ও ব্যবসা-সহযোগিতার ক্ষেত্র তৈরি হলে দুই দেশেরই লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
বিটুবি সেশনের গুরুত্ব
ব্যবসা-থেকে-ব্যবসা বা বিটুবি সেশন হলো এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যেখানে উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীরা সরাসরি আলাপচারিতা করতে পারেন। এতে করে দুই দেশের কোম্পানিগুলোর মধ্যে সরাসরি বাণিজ্য ও বিনিয়োগ চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। শ্রীলংকায় আয়োজিত এই বিটুবি সেশনগুলোতেও একই ধরনের কার্যকর সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
চেম্বারের অবস্থান ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
ঢাকা চেম্বার দীর্ঘদিন ধরেই বেসরকারি খাতে ব্যবসা সম্প্রসারণ, বিদেশি বাজারে প্রবেশ ও রফতানি বহুমুখীকরণে কাজ করে যাচ্ছে। এই সফরের মাধ্যমে শ্রীলংকার মতো উদীয়মান অর্থনীতির সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ে তোলা সেই পরিকল্পনারই একটি অংশ।
চেম্বার প্রেসিডেন্ট তাসকীন আহমেদ বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, শ্রীলংকার সঙ্গে এই ধরনের উচ্চপর্যায়ের বাণিজ্যিক যোগাযোগ ভবিষ্যতে দুই দেশের জন্যই নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। আমাদের সদস্যরা নতুন বাজার, প্রযুক্তি ও যৌথ বিনিয়োগের সুযোগ সম্পর্কে বিস্তারিত জানার মাধ্যমে বাস্তব উদ্যোগ গ্রহণে সক্ষম হবেন।”
উপসংহার
শ্রীলংকা সফরে ঢাকা চেম্বারের প্রতিনিধিদলের এই কার্যক্রম বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে একটি সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপ। আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান আরও শক্তিশালী করতে এ ধরনের বাণিজ্যিক কূটনীতি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এটি শুধু রফতানি বা বিনিয়োগ নয়, বরং দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা, অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং দক্ষিণ এশিয়ার একত্রীকরণ প্রক্রিয়াকেও ত্বরান্বিত করবে।