বিশ্বজুড়ে কোটি ভক্তের হৃদয় ভেঙে দিয়ে প্রয়াত হয়েছেন রেসলিং কিংবদন্তি হাল্ক হোগান। ৭১ বছর বয়সে ফ্লোরিডার ক্লিয়ারওয়াটারে নিজ বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছিলেন বলে জানা গেছে। তাঁর মৃত্যুতে শোকাহত ক্রীড়াজগৎ, বিনোদন অঙ্গন ও ভক্তসমাজ।
মৃত্যু ও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা
হাল্ক হোগানের ম্যানেজার ক্রিস ভোলো গণমাধ্যমে জানান, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তিনি মারা যান। মৃত্যুর সময় তাঁর পরিবারের সদস্যরা পাশে ছিলেন। এ ঘটনায় WWE-সহ বিশ্বজুড়ে অসংখ্য সংগঠন ও ভক্তরা শোকপ্রকাশ করেছেন।
সম্প্রতি হোগান হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন এমন গুজব ছড়িয়ে পড়লেও তাঁর স্ত্রী স্কাই সে সময় জানিয়েছিলেন, অস্ত্রোপচারের পর তিনি সুস্থ রয়েছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই গুজবই বাস্তবে পরিণত হলো।
কিংবদন্তি হয়ে ওঠার যাত্রা
১৯৫৩ সালের ১১ আগস্ট টেরি জিন বোলিয়া নামে জর্জিয়ার অগাস্টা শহরে জন্মগ্রহণ করেন হাল্ক হোগান। কৈশোরেই রেসলিংয়ের প্রতি আগ্রহ গড়ে ওঠে তাঁর। ১৯৭৭ সালে পেশাদার রেসলিংয়ে অভিষেক ঘটে তাঁর। শুরুর দিকেই ফ্যানদের মধ্যে তুমুল জনপ্রিয়তা পান।
‘হাল্কাম্যানিয়া’ নামক এক ভক্ত সম্প্রদায়ের সৃষ্টি করেন তিনি, যা ৮০’র দশকে রীতিমতো সাংস্কৃতিক আন্দোলনে পরিণত হয়।
পেশাদার ক্যারিয়ার ও জনপ্রিয়তা
হাল্ক হোগান ছিলেন ৬ ফুট ৭ ইঞ্চি লম্বা এবং ওজন ছিল প্রায় ২৯৫ পাউন্ড। লাল-হলুদ পোশাক, ‘রিয়েল আমেরিকান’ থিম সংগীত আর তাঁর দুর্দান্ত এন্ট্রি তাঁকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তুলেছিল।
ডব্লিউডব্লিউই চ্যাম্পিয়নশিপ তিনি ছয়বার জিতেছেন। ১৯৮৫ সালে প্রথম রেসলম্যানিয়ায় তাঁর উপস্থিতি পুরো আয়োজনকেই এক নতুন মাত্রা দেয়।
তিনি আন্দ্রে দ্য জায়ান্ট, র্যান্ডি স্যাভেজ, দ্য রক এমনকি ভিন্স ম্যাকম্যাহনের মতো তারকাদের সঙ্গে লড়াই করেছেন। পরবর্তীতে ‘হলিউড হোগান’ নামে খলনায়কের ভূমিকাও গ্রহণ করেন তিনি।
বড় পর্দায় হাল্ক হোগান
হাল্ক হোগানের জনপ্রিয়তা কেবল রেসলিংয়েই সীমাবদ্ধ ছিল না। ১৯৮২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সিলভেস্টার স্ট্যালোন অভিনীত ‘রকি থ্রি’ সিনেমায় ‘থান্ডারলিপস’ চরিত্রে অভিনয় করে তিনি হলিউডেও সুনাম কুড়ান।
এছাড়া ‘হোগান নোজ বেস্ট’ নামে একটি রিয়েলিটি শোতেও অভিনয় করেন, যেখানে তাঁর পরিবারকেও দেখা যায়।
বিতর্ক ও সমালোচনার মুখে
তাঁর ক্যারিয়ারে উত্থানের পাশাপাশি বিতর্কও কম ছিল না। ২০১৫ সালে এক গোপন রেকর্ডিংয়ে বর্ণবাদী মন্তব্য শোনা গেলে WWE তাঁকে বরখাস্ত করে। যদিও ২০১৮ সালে তাঁকে পুনরায় Hall of Fame-এ অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
২০১৬ সালে একটি সেক্স টেপ মামলায় গকার মিডিয়ার বিরুদ্ধে রায় পেয়ে তিনি ১৪০ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতিপূরণ পান।
২০২৪ সালে তিনি রিপাবলিকান কনভেনশনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থনে কথা বলেন, যা নিয়েও ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
রেসলিংয়ের সাংস্কৃতিক প্রভাব
হাল্ক হোগান ছিলেন শুধু একজন রেসলার নন, তিনি ছিলেন একটি ব্র্যান্ড, একটি সংস্কৃতি। ভিডিও গেম, কার্টুন, সিনেমা, মার্চেন্ডাইজিং এমনকি রেস্টুরেন্ট চেইনেও তাঁর নাম ছিল যুক্ত।
তাঁর ‘২৪ ইঞ্চি পাইথন’ বাইসেপ, রিংয়ের ভেতরের কৌশল আর অতিমানবীয় উপস্থিতি রেসলিংকে পরিবারের জন্য উপযুক্ত বিনোদনে রূপান্তর করতে সাহায্য করে।
রেসলিং ও ভক্তদের কাছে হাল্ক হোগানের প্রভাব
পাঁচ দশক ধরে হাল্ক হোগান যে প্রভাব রেখে গেছেন, তা আজও অনুপ্রেরণা হয়ে রয়েছে নতুন প্রজন্মের রেসলারদের কাছে। WWE-এর এক পোস্টে বলা হয়, “হাল্ক হোগান ১৯৮০’র দশকে ডব্লিউডব্লিউইকে বিশ্বব্যাপী পরিচিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তাঁর মৃত্যু বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি।”
ব্যক্তিজীবন ও পরিবার
হোগান তিনবার বিবাহ করেন এবং তাঁর দুটি সন্তান রয়েছে। তিনি একজন সঙ্গীতপ্রেমী ছিলেন এবং কৈশোরে গিটার বাজাতেন। রেসলিং জগতে প্রবেশের আগেও তিনি বিভিন্ন ব্যান্ডে বেস গিটার বাজিয়েছেন।
ভবিষ্যতের প্রশ্ন
রেসলিংয়ের কিংবদন্তির এই অবসান বিশ্বব্যাপী ভক্তদের মনে এক শূন্যতা সৃষ্টি করেছে। নতুন প্রজন্মের রেসলাররা তাঁর দেখানো পথ অনুসরণ করলেও, হাল্ক হোগানের স্থলাভিষিক্ত হওয়া সত্যিই কঠিন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, “তিনি ছিলেন রেসলিংয়ের বেব রুথ। তাঁকে ছাড়া এই ইতিহাস অসম্পূর্ণ।”
এখন প্রশ্ন উঠছে—রেসলিং দুনিয়ায় তাঁর রেখে যাওয়া ছায়া কি নতুনদের জন্য পথ দেখাবে, নাকি হারিয়ে যাবে সময়ের ধুলায়?
এম আর এম – ০৫১৬, Signalbd.com



