বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, তাঁর দল রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে দেশের জনগণকে অন্ধকারে রেখে কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না। তিনি স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, কোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের আগে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের (Stakeholders) সঙ্গে বসে পরামর্শ করা হবে। মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর শেওড়াপাড়ায় একটি রেস্টুরেন্টে ঔষধ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। জামায়াত আমীর তাঁর বক্তব্যে ‘ইনসাফের ভিত্তিতে আগামীর বাংলাদেশ’ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন এবং দুর্নীতিমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দেন। এই মন্তব্য জামায়াতের রাজনীতিতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার অঙ্গীকার হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশীজনদের সঙ্গে পরামর্শ
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান দেশের নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়ায় জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তিনি বলেন, অতীতের মতো জনগণকে অন্ধকারে রেখে বা তাদের মতামতের তোয়াক্কা না করে জামায়াত কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেবে না।
তাঁর এই বক্তব্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি এক ধরণের জবাবদিহিতার বার্তা বহন করে। তিনি বলেন, ‘ক্ষমতায় গেলে জনগণকে অন্ধকারে রেখে কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না জামায়াতে ইসলামী। কোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের আগে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সাথে বসে পরামর্শ করা হবে।’ তাঁর এই প্রতিশ্রুতি জামায়াতের রাজনীতিতে স্বচ্ছতা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে প্রাধান্য দেওয়ার ইঙ্গিত দেয়। বিশেষত, দেশের অর্থনীতি, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য খাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে জনগণের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।
দুর্নীতিমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা ও অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান
ডা. শফিকুর রহমান একটি দুর্নীতিমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তিনি বলেন, দুর্নীতিমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হলে ধনী-গরিব সবাই উপকৃত হবে। দুর্নীতি সমাজের অগ্রগতির প্রধান বাধা, তাই এই সমস্যার মূল উৎপাটন করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে জামায়াতের কঠোর অবস্থান ভবিষ্যতেও বজায় থাকবে। এই মন্তব্যটি ইঙ্গিত দেয় যে, জামায়াত ক্ষমতায় এলে অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে কঠোর হবে। তিনি মনে করেন, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা দূর করতে পারলে রাষ্ট্রীয় সম্পদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত হবে এবং সাধারণ মানুষ তার সুফল পাবে। এই অঙ্গীকার দেশের সাধারণ জনগণের মধ্যে আস্থা তৈরি করতে সহায়ক হতে পারে।
ওষুধ শিল্প ও চিকিৎসকদের ভূমিকা
ঔষধ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় ডা. শফিকুর রহমান দেশের স্বাস্থ্য খাত এবং ঔষধ শিল্পের সাফল্য নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, একসময় বাংলাদেশ ঔষধ শিল্পে বিদেশিদের ওপর নির্ভরশীল থাকলেও বর্তমানে পরিস্থিতি পরিবর্তিত হয়েছে। ‘বর্তমানে বহু দেশে বাংলাদেশের ওষুধ রপ্তানি হয়,’ যা দেশের জন্য একটি গৌরবের বিষয়।
তবে তিনি স্বাস্থ্য খাতে বিদ্যমান কিছু অনিয়ম ও দুর্নীতির দিকেও আঙুল তোলেন। তিনি উল্লেখ করেন, ওষুধ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অবৈধ সুবিধা নিয়ে কিছু চিকিৎসক মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছেন। তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘বাংলাদেশি চিকিৎসকদের জন্য হালাল পন্থায় বেঁচে থাকার যথেষ্ট সুযোগ সুবিধা রয়েছে।’ জামায়াত আমীর চিকিৎসকদের নৈতিকতার সঙ্গে কাজ করার এবং অবৈধ সুবিধা পরিহার করার আহ্বান জানান। এই মন্তব্য স্বাস্থ্য খাতের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে জামায়াতের কঠোর মনোভাবের ইঙ্গিত দেয়।
ইনসাফের ভিত্তিতে আগামীর বাংলাদেশ
ডা. শফিকুর রহমান তাঁর বক্তব্যের মূল সুর হিসেবে ‘ইনসাফ’ (ন্যায়বিচার)-কে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী ইনসাফের ভিত্তিতে আগামীর বাংলাদেশ গড়তে চায়। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হলে সমাজে শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং সুশাসন নিশ্চিত হবে।
জামায়াত আমীর মনে করেন, ইনসাফ প্রতিষ্ঠার জন্য আইনের শাসন, মানবাধিকার এবং অর্থনৈতিক সমতা নিশ্চিত করা জরুরি। দেশের প্রতিটি নাগরিকের প্রতি যেন ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়, সেদিকেই জামায়াতের মূল লক্ষ্য থাকবে। তিনি বলেন, ইনসাফ নিশ্চিত না হলে দেশের সামগ্রিক উন্নতি অসম্ভব।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও জনসম্পৃক্ততা
জামায়াত আমিরের এই ধরনের বক্তব্য বর্তমান রাজনৈতিক পটভূমিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের পট পরিবর্তনের পর জামায়াত তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম জোরদার করেছে। বিভিন্ন পেশাজীবী ও অংশীজনদের সঙ্গে এই ধরনের মতবিনিময় সভা আয়োজনের মাধ্যমে তারা তাদের রাজনৈতিক ভিত্তি মজবুত করার চেষ্টা করছে।
ডা. শফিকুর রহমানের এই অঙ্গীকারগুলো মূলত জনগণকে জামায়াতের প্রতি আকৃষ্ট করার একটি কৌশল। অতীতে জামায়াতের বিরুদ্ধে গোপনীয়তা এবং স্বৈরাচারী সিদ্ধান্ত গ্রহণের অভিযোগ ছিল। এই নতুন অঙ্গীকারগুলো সেই সমালোচনার বিপরীতে একটি স্বচ্ছ ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা। এই জনসম্পৃক্ততা এবং বিভিন্ন পেশাজীবী গোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনা তাদের নির্বাচনী কৌশল এবং সাংগঠনিক প্রস্তুতিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
প্রতিশ্রুতি ও চ্যালেঞ্জ
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের এই ঘোষণা যে, ‘জনগণকে অন্ধকারে রেখে কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না জামায়াত’, তা দেশের রাজনীতিতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার গুরুত্বকে তুলে ধরে। দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠন এবং ঔষধ শিল্পে নৈতিকতা নিশ্চিত করার তাঁর প্রত্যয় সমাজের বিভিন্ন স্তরে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা যায়। তবে অতীতের বিতর্ক এবং রাজনৈতিক সমালোচনার মুখে জামায়াত তাঁর এই প্রতিশ্রুতি কতটা বাস্তবায়ন করতে পারে, সেটাই এখন দেখার বিষয়। জনগণের সমর্থন অর্জন এবং ইনসাফভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করাই তাঁর সামনে প্রধান চ্যালেঞ্জ।
এম আর এম – ২৪৬৫, Signalbd.com



