রাজনীতি

বিএনপি ক্ষমতায় এলে আল্লাহর ওপর আস্থা পুনর্বহাল

Advertisement

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, বিএনপি সরকারে ক্ষমতায় আসলে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে মহান আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস পুনর্বহাল করা হবে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান সংবিধানে সর্বপ্রথম “বিসমিল্লাহ” সংযোজন করেছিলেন এবং সেখানে আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস প্রতিষ্ঠার তাগিদ দিয়েছিলেন।

শনিবার (১৫ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আন্তর্জাতিক খতমে নবুওয়ত মহাসম্মেলনে এই মন্তব্য করেন সালাহউদ্দিন। তিনি বলেন, “বর্তমানে আমাদের সংবিধানে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস দেখা যাচ্ছে না। আমরা যদি সরকারে আসি, তবে রাষ্ট্র পরিচালনার নীতিমালায় এই বিশ্বাস ও আস্থা পুনরায় প্রতিষ্ঠা করা হবে।”

ইসলামী নীতিমালা অনুসারে রাষ্ট্র পরিচালনার গুরুত্ব

সালাহউদ্দিন আরও বলেন, “আমরা মুসলিম জাতি। আমরা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’ এই মহান কণ্ঠনির্দেশে বিশ্বাস রাখি। মহান আল্লাহ আমাদের প্রেরিত নবীজিকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমত হিসেবে পাঠিয়েছেন। নবীজি বলেছেন, আমি শেষ নবী ও রসুল। আমার পরে আর কোনো নবী আসবেনা। যদি কেউ নিজেকে নবী হিসেবে ঘোষণা করেন, তাহলে তিনি এই মহান বাণীর মধ্যে পড়েন না।”

তিনি এসময় আরও জোর দেন, রাষ্ট্রের সকল নীতি, আইন ও প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা আল্লাহর নির্দেশনা ও ন্যায়নিষ্ঠার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। সালাহউদ্দিন বলেন, “ধর্মনিরপেক্ষতার নামে রাষ্ট্র যখন আল্লাহর নীতি থেকে বিচ্যুত হয়, তখন জাতির মধ্যে নৈতিক ও সামাজিক সংকট তৈরি হয়। তাই আমাদের লক্ষ্য হবে ইসলামী নীতিমালাকে রাষ্ট্র পরিচালনায় সঠিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করা।”

সংবিধানে বিসমিল্লাহ সংযোজন: ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়

সালাহউদ্দিন আহমদ উল্লেখ করেন, বিএনপি নেতা ও রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান প্রথম সংবিধান প্রণয়নের সময় “বিসমিল্লাহ” সংযোজন করেছিলেন। এটি ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত।

তিনি বলেন, “এই সংযোজন শুধু ধর্মীয় আস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য নয়, বরং রাষ্ট্রীয় নীতির মধ্যে ন্যায়, সততা এবং জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করার প্রতীক হিসেবেও প্রয়োগ করা হয়। আমরা বিশ্বাস করি, রাষ্ট্র পরিচালনায় ধর্মীয় মূল্যবোধ ও নৈতিকতার সমন্বয় জাতির জন্য উন্নয়ন ও শান্তির পথ সুগম করবে।”

আন্তর্জাতিক খতমে নবুওয়ত মহাসম্মেলন

উক্ত অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ইসলামী শিক্ষাবিদ, ধর্মগুরু এবং রাজনৈতিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সালাহউদ্দিন আহমদ বক্তৃতায় বলেন, “নবীজি আমাদের জন্য চিরন্তন দিশারী। তাঁর শিক্ষার আলোকে রাষ্ট্র ও সমাজ পরিচালনা করলে জনগণের নৈতিক মান বৃদ্ধি পাবে এবং সামাজিক দূর্নীতি হ্রাস পাবে।”

তিনি আরও বলেন, “বিএনপি ক্ষমতায় এলে আমরা এমন নীতি ও কার্যক্রম শুরু করব যা দেশের শিশু, যুবক ও নারীদের মধ্যে ইসলামী নৈতিক শিক্ষা নিশ্চিত করবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রশাসন—সব ক্ষেত্রেই আল্লাহর নৈতিক বিধানকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।”

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনৈতিক মানচিত্রে বিএনপি শক্তিশালী বিরোধী দল হিসেবে অবস্থান করছে। বিভিন্ন সময় বিএনপি নেতারা বলেছেন, তারা ক্ষমতায় এলে ইসলামী নীতিমালাকে রাষ্ট্র পরিচালনায় প্রতিষ্ঠা করবে। সালাহউদ্দিন আহমদের বক্তব্য এই সংলাপের ধারাবাহিকতা বহন করে।

রাজনীতিবিদদের মতে, সংবিধানে আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস প্রতিষ্ঠা করা মানে শুধু ধর্মীয় নীতি চালু করা নয়, বরং রাষ্ট্র পরিচালনার নৈতিক ভিত্তি পুনঃস্থাপন করা। এটি দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

নাগরিক প্রতিক্রিয়া

রাজধানীর সাধারণ মানুষও এই বক্তব্যকে গুরুত্বসহকারে নিচ্ছে। এক ব্যবসায়ী বলেন, “রাষ্ট্র যখন নৈতিক ভিত্তিতে পরিচালিত হয়, তখন সুশাসন ও আইন শৃঙ্খলা সহজ হয়। এটা দেশের জন্য খুবই প্রয়োজন।”
একজন ছাত্র বলেন, “আমরা চাই শিক্ষা ও প্রশাসন নীতিতে নৈতিকতার প্রাধান্য থাকুক। ইসলামিক নীতি মানলে সমাজে শৃঙ্খলা ও সহমর্মিতা বৃদ্ধি পাবে।”

ধর্ম, নীতি ও রাষ্ট্রের সমন্বয়

বিশ্লেষকরা মনে করেন, ধর্ম ও রাষ্ট্র নীতির মধ্যে সঠিক সমন্বয় দেশের জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। সালাহউদ্দিন আহমদের বক্তব্য এই ধারণাকে শক্তি দিচ্ছে যে, রাষ্ট্র পরিচালনায় ধর্মীয় মূল্যবোধ গুরুত্বপূর্ণ।

সালাহউদ্দিন বলেন, “আমাদের লক্ষ্য হবে রাষ্ট্রকে এমনভাবে পরিচালনা করা যাতে জনগণ নৈতিকভাবে বিকশিত হয় এবং সমাজে শৃঙ্খলা, শান্তি ও সমৃদ্ধি আসে।”

সালাহউদ্দিন আহমদের ভাষ্য অনুসারে, বিএনপি সরকারে ক্ষমতায় এলে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনর্বহাল করা হবে। এটি শুধু ধর্মীয় পুনরুজ্জীবন নয়, বরং রাষ্ট্র ও সমাজের নৈতিক ভিত্তি সুদৃঢ় করার একটি উদ্যোগ।

বাংলাদেশে রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় প্রেক্ষাপটে এই প্রস্তাবিত নীতি জনগণ ও বিশ্লেষকদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছে।

MAH – 13809 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button