রাজনীতি

মির্জা ফখরুলের ভারতকে আহ্বান: ‘দাদাগিড়ি বন্ধ করুন’

Advertisement

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শনিবার (১৫ নভেম্বর) ভারতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যে, বাংলাদেশকে দাদাগিড়ি করা বন্ধ করে বন্ধুসুলভ এবং সহযোগিতামূলক আচরণ করা হোক। দেশের স্বার্থরক্ষার জন্য নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠার গুরুত্বও তিনি তুলেছেন।

এই আহ্বান তিনি জানান মহানন্দা নদীর রাবার ড্যাম প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনের সময়। ফখরুল বলেন, “পানির হিস্যা নিয়েও বারবার ভারতের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা করেছি, কিন্তু তারা কোনও গুরুত্ব দিচ্ছে না। বাংলাদেশে জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার থাকলে দেশের স্বার্থ রক্ষার জন্য যে কোনো দাবিই আদায় করা সহজ হবে।”

বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, “পদ্মার পানি আটকে দিয়ে মানুষের জীবিকা নষ্ট করা হয়েছে। এ ধরনের সমস্যা সমাধান করা গেলে তবেই নদীর পানির ন্যায্য বণ্টন নিশ্চিত করা সম্ভব। নির্বাচিত সরকার না থাকলে এই ধরনের স্বার্থরক্ষা করা কঠিন।”

ফখরুলের ভাষ্য অনুযায়ী, বিএনপি ক্ষমতায় এলে পদ্মা ও তিস্তা নদীর পানি বণ্টন, ফারাক্কা বাঁধ ইস্যু এবং অন্যান্য জলের উৎসের সমস্যা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সমাধান করা হবে। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক হওয়া উচিত বন্ধুত্বপূর্ণ এবং সহযোগিতামূলক। তবে, দেশের স্বার্থকে উপেক্ষা করে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা চলবে না।”

পদ্মা নদী এবং পানি সমস্যা:

পদ্মা নদী বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ নদী। নদীর পানির পর্যাপ্ততা কৃষি, জ্বালানি উৎপাদন এবং সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার সাথে সরাসরি সম্পর্কিত। ভারতের ফারাক্কা বাঁধ এবং অন্যান্য জলসম্পদ ব্যবস্থাপনা পদ্মার পানির স্বাভাবিক প্রবাহকে প্রভাবিত করছে। বাংলাদেশ বরাবরই ন্যায্য পানির ভাগ চেয়ে আসছে, তবে দীর্ঘদিন ধরে এই ইস্যুতে দুই দেশের মধ্যে সমাধান সম্ভব হয়নি।

মির্জা ফখরুলের বক্তব্যের মাধ্যমে স্পষ্ট হলো, বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এলে এ ধরনের জলবণ্টন ইস্যু সমাধানকে তাদের প্রধান অগ্রাধিকার হিসেবে নেবে। তিনি বলেন, “নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে জনগণের সমর্থন নিয়ে দেশের স্বার্থ রক্ষা করা সহজ হবে। পদ্মা, তিস্তা এবং ফারাক্কা নিয়ে যে সমস্যাগুলো রয়েছে, সেগুলোর সমাধানে আমরা দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট:

ফখরুলের এই আহ্বান বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিতে পারে। পদ্মা এবং তিস্তা নদীর পানি বণ্টন ইস্যু দীর্ঘদিন ধরেই দেশের কৃষি এবং শিল্পে সমস্যা তৈরি করছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নদীর পানি বণ্টন নিয়ে কার্যকর সমাধান ছাড়া কৃষি উৎপাদন এবং স্থানীয় জনগণের জীবনমান উন্নয়ন কঠিন হবে।

এদিন, দুপুর ২টায়, চাপাইনবাবগঞ্জের নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত হবে বিএনপির ‘পদ্মা বাঁচাও’ গণসমাবেশ। এতে যোগ দেবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সমাবেশটি মূলত পদ্মার পানি রক্ষার দাবিতে এবং বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষার উদ্দেশ্যে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

মির্জা ফখরুলের এই আহ্বান শুধু রাজনৈতিক বক্তব্য নয়; এটি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব এবং দেশের জলসম্পদ রক্ষার একটি বাস্তব প্রতিফলন। ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার পাশাপাশি বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষা নিশ্চিত করা যে কতটা জরুরি, তা তিনি স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, নদী বণ্টন ইস্যুতে রাজনৈতিক সহমত এবং জনগণের সমর্থন ছাড়া সমস্যার সমাধান করা কঠিন। তাই নির্বাচিত সরকার ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এই ইস্যুর সমাধানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ফখরুলের আহ্বান শুধু রাজনৈতিক নেতা হিসেবে নয়, বরং দেশের নাগরিকদের স্বার্থ রক্ষার ক্ষেত্রে এক দৃঢ় বার্তা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। পদ্মা, তিস্তা ও ফারাক্কা নদী নিয়ে যে দীর্ঘদিনের বিতর্ক চলমান, সেটিকে সমাধানের দিকে এগিয়ে নেওয়া একান্ত প্রয়োজন।

MAH – 13808 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button