জয়নুল আবদিন : মুজিব স্বাধীনতা চাননি, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন
বিএনপি চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক এক বিতর্কিত মন্তব্যে বলেছেন, বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মুজিবুর রহমান কখনোই স্বাধীনতা চাননি। বরং তিনি চেয়েছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হবেন।
শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় নোয়াখালীর সেনবাগ ডুমুরিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে জাতীয়তাবাদী মহিলা দল আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য রাখার সময় ফারুক এসব কথা বলেন। তিনি আরও দাবি করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা স্বাধীনতা ঘোষণা করতে যখন শেখ মুজিবকে বলেছেন, তখন তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, “আমার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিরোধী মামলা হবে, আমি পাকিস্তান ভাগ করতে পারব না।”
তারপরে, তিনি উল্লেখ করেন, স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন আমাদের প্রিয় নেতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, যিনি সাহসী নেতৃত্ব দেখিয়েছেন এবং স্বাধীনতা অর্জনের পথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
ফারুকের বক্তব্যে তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসের সেই সংবেদনশীল সময়ের দিকেও ইঙ্গিত করেন। তিনি বলেন, “সেই সময় আমাদের দেশের যুবসমাজ এবং ছাত্ররা অত্যন্ত উৎসাহী ছিল। স্বাধীনতার ডাক দিয়ে তারা দেশকে নতুন দিশা দেখাতে চেয়েছিল। কিন্তু যাদের নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব ছিল, তারা স্বাধীনতার পক্ষে দাঁড়ায়নি।”
জামায়াত ও স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র
সমাবেশে তিনি জামায়াতের সমালোচনা করতে ভোলেননি। ফারুক বলেন, “যারা আমাদের দেশের স্বাধীনতার সময় বাধা দিয়েছে, তারা আজ আবার নতুন করে দেশের স্বাধীনতা বিনষ্টের চেষ্টা করছে। তারা সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য ভুল তথ্য প্রচার করছে, বিশেষ করে নারী ও মা-বোনদের। তাদের প্রচারিত ভ্রান্তি হলো, ভোট দিলে জান্নাতে বা বেহেশতে পৌঁছানো যাবে। এটি পুরোপুরি প্রতারণা।”
তিনি আরও বলেন, জামায়াত শুধু রাজনৈতিক দলের রূপে নয়, বরং দেশের যুবসমাজ এবং নারীদের নিরাপত্তার জন্যও হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিএনপি ও দেশের বেকারত্ব সমাধান
ফারুক তার বক্তব্যে বিএনপি এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কেও কিছু তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “জনগণের ভোটের মাধ্যমে যদি বিএনপি সরকার গঠন করে, তবে দেশের বেকার যুবসমাজকে চাকরির সুযোগ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। দেশের প্রায় ১ কোটি বেকার যুবক ও যুবতী কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবেন।”
তিনি আরো বলেন, “বাংলাদেশে ইসলামিক পরিচয়ের কারণে রাজনৈতিক জনপ্রিয়তা যাচাই করা হলে দেখা যাবে, তা জনগণের প্রকৃত চাহিদা ও দেশের উন্নয়নের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। আসুন না, ইসলামকে বাদ দিয়ে দেখাই, জনগণ কোন দিকের নেতা পছন্দ করছে।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা কি মনে করছেন?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, জয়নুল আবদিনের এই মন্তব্য চরম বিতর্কিত। এটি দেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের একটি সংবেদনশীল অধ্যায়ের দিকে ইঙ্গিত করছে। বিশেষ করে, শেখ মুজিবুর রহমান এবং জিয়াউর রহমানের ভিন্ন ভূমিকা নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত হয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ ধরনের বক্তব্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আবারও ইতিহাস নিয়ে বিতর্ককে উস্কে দিতে পারে। এটি শুধু রাজনৈতিক সমাবেশের বক্তব্য নয়, বরং সামাজিক ও রাজনৈতিক দিক থেকেও সমালোচনার জন্ম দিতে পারে।
ইতিহাসে বঙ্গবন্ধু ও জিয়াউর রহমান
শেখ মুজিবুর রহমানকে সাধারণত বাংলাদেশের মুক্তিকামী নেতারূপে ইতিহাসে ধরা হয়। কিন্তু ফারুকের বক্তব্য অনুযায়ী, মুজিব স্বাধীনতার চেয়ে পাকিস্তানের রাজনৈতিক উচ্চপদে আগ্রহী ছিলেন। অন্যদিকে, জিয়াউর রহমান ছিলেন সেই সময়ের সাহসী নেতা, যিনি রাজনৈতিক ঝুঁকি নিয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
এটি ইতিহাসবিদদের মধ্যে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন, স্বাধীনতা অর্জনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা অপরিসীম, তবে রাজনৈতিক চাপে কিছু সময় তিনি সরাসরি পদক্ষেপ নিতে দ্বিধা বোধ করেছিলেন।
সমাবেশে নারী ও যুবসমাজের গুরুত্ব
জয়নুল আবদিন ফারুক সমাবেশে নারী ও যুবসমাজের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন, “নারী ও যুবসমাজ দেশের উন্নয়নে মূল চালিকা শক্তি। তাদের সচেতন করা প্রয়োজন যাতে রাজনৈতিক বিভ্রান্তি থেকে বাঁচতে পারে এবং দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, যুব সমাজকে শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং সচেতন নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্ব রয়েছে।
সংক্ষেপে
জয়নুল আবদিন ফারুকের বক্তব্যে উঠে এসেছে কয়েকটি মূল বিষয়:
- শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পক্ষে ছিলেন না এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন।
- বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন জিয়াউর রহমান।
- জামায়াত এখনো স্বাধীনতা বিরোধী ষড়যন্ত্র করছে এবং সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে।
- বিএনপি সরকার গঠিত হলে দেশের বেকার যুবসমাজের জন্য চাকরির ব্যবস্থা থাকবে।
- নারী ও যুবসমাজের রাজনৈতিক সচেতনতা দেশের উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য।
MAH – 13800 I Signalbd.com



