রাজধানীতে আজ ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। শিবিরের এই কর্মসূচি ‘জুলাইসহ সকল গণহত্যার বিচার’, ‘জুলাই সনদের আইনি স্বীকৃতি’ এবং ‘নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নাশকতা প্রতিরোধ’ এ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে আয়োজিত হয়।
বৃহস্পতিবার ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা কলেজ থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়। মিছিলটি শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে একটি সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
জুলাই হত্যাকাণ্ড ও বিচার দাবি
আজকের দিনটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ আজই জুলাই অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের মামলায় মানবতাবিরোধী অপরাধের রায় ঘোষণা করা হয়েছে। এই মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আরও তিনজনের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করা হয়েছে।
এ উপলক্ষে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল। তবে ইসলামী ছাত্রশিবির এই নাশকতা রুখে দিতে রাত থেকেই প্রস্তুতি নেয়। বুধবার রাত থেকেই শিবিরের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় অবস্থান নেয় এবং বৃহস্পতিবার সকাল ৭টায় বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়।
মিছিলে নেতৃত্বে ছিলেন কেন্দ্রীয় নেতারা
মিছিলে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম, সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম, এবং ডাকসুর সহসভাপতি (ভিপি) আবু সাদিক কায়েম। তারা মিছিলে নেতৃত্ব দেন এবং বিভিন্ন স্থানে জনসাধারণকে জানিয়ে দেন তাদের কর্মসূচির উদ্দেশ্য।
মিছিলে শিক্ষার্থী, যুবক এবং সাধারণ নাগরিক অংশ নেন। শিবিরের বক্তব্য ছিল, দেশের ইতিহাসে জুলাই হত্যাকাণ্ড একটি দুঃখজনক অধ্যায়, এবং এর বিচার ছাড়া জাতির ন্যায় প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।
রাজধানীর ১৪টি স্থানে অবস্থান কর্মসূচি
মিছিল শেষে শিবিরের নেতাকর্মীরা রাজধানীর অন্তত ১৪টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থান নেন। এই স্থানগুলো হলো:
- উত্তরা বিএনএস
- খিলখেত
- বসুন্ধরা গেট
- গাবতলী
- মিরপুর ১০
- ধানমন্ডি ৩২
- সায়েন্স ল্যাব
- শাহবাগ
- রামপুরা
- মহাখালী
- গুলিস্তান
- বাহাদুর শাহ পার্ক
- যাত্রাবাড়ী
- চিটাগাং রোড
শিবিরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শুধুমাত্র রাজধানীতেই নয়, দেশের প্রতিটি বিভাগীয় শহর এবং জেলা শহরেও একযোগে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। এতে সংগঠনের সাধারণ সদস্য ও নেতারা সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছেন।
বিক্ষোভ মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের বক্তব্য
মিছিলে উপস্থিত শিক্ষার্থী রাশেদ খান বলেন, “জুলাই হত্যাকাণ্ডের ন্যায় বিচারের দাবিতে আমরা আজ মিছিল করেছি। আমাদের দাবি, দেশের সকল নাগরিককে সঠিক তথ্য দেওয়া এবং ইতিহাসের সঙ্গে নিরপেক্ষ আচরণ নিশ্চিত করা হোক।”
আরেক শিক্ষার্থী সুমাইয়া ইসলাম বলেন, “আমরা চাই, দেশের রাজনৈতিক সংঘাত ও নাশকতা যাতে আর কখনো যুব সমাজকে প্রভাবিত করতে না পারে। এর জন্য ছাত্রশিবিরের অবস্থান কর্মসূচি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতারা বলেন, শুধুমাত্র বিচার দাবি করা নয়, বরং যুব সমাজকে সঠিক রাজনৈতিক চেতনা দিতে এই কর্মসূচি অপরিহার্য।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিক্ষোভের পেছনে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটও জড়িত। বাংলাদেশে জুলাই হত্যাকাণ্ড একটি বিতর্কিত ইতিহাস। মুক্তিযুদ্ধের পর দেশীয় রাজনীতিতে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনাগুলি সময়ে সময়ে আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠে।
ছাত্রশিবিরের মতে, ক্ষমতাচ্যুত রাজনৈতিক দলগুলো যুব সমাজের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। এ কারণে তারা বৃহত্তর সচেতনতা সৃষ্টি করতে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় অবস্থান কর্মসূচি চালাচ্ছে।
দেশের অন্যান্য শহরে কর্মসূচি
শিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটি জানিয়েছে, শুধু রাজধানী নয়, দেশের সকল বিভাগীয় শহর এবং জেলা শহরেও আজ একযোগে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। এতে বিভিন্ন শিক্ষার্থী, শিক্ষক, যুবক ও রাজনৈতিক দলের সমর্থকরা অংশ নিয়েছেন।
এ ধরনের কর্মসূচি দেশের যুব সমাজের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়ক বলে শিবিরের পক্ষ থেকে উল্লেখ করা হয়েছে।
শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতা জাহিদুল ইসলাম বলেন, “আমরা চাই, দেশের আইন ও বিচার ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা বজায় থাকুক। আমরা যুব সমাজকে সঠিক রাজনৈতিক শিক্ষার মাধ্যমে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে চাই। আমাদের এই মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি সেই প্রচেষ্টার অংশ।”
তিনি আরও বলেন, “জুলাই হত্যাকাণ্ডের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হওয়া অত্যন্ত জরুরি। এ দাবিতে আমাদের অবস্থান অব্যাহত থাকবে।”
আজ ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি একটি শক্তিশালী বার্তা হিসেবে ধরা হয়েছে। শুধু রাজধানীতেই নয়, দেশের সব বিভাগীয় ও জেলা শহরে একই সময়ে এই কর্মসূচি পরিচালনা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে তারা বিচার দাবি, রাজনৈতিক সচেতনতা এবং যুব সমাজের একতার বার্তা প্রদান করেছে।
MAH – 13781 I Signalbd.com



