গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি ও বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ নুরুল হক নুর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে (ফেসবুক) একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছেন, যা মূলত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তুলনামূলকভাবে নিরাপদ অবস্থায় আছেন। তিনি আরও পরামর্শ দিয়েছেন, চুপচাপ থাকলে তাদের অবস্থা আরও ভালো থাকবে, তবে অযথা আন্দোলন বা উত্তেজনার কারণে বিপদে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
নুরুল হকের মূল বক্তব্য
নুরুল হক নুর তার বার্তায় বলেছেন, “আওয়ামী লীগের আমলে বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধী দলগুলোর নেতাকর্মীরা যেভাবে জেল-জুলুম, নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তার সঙ্গে বর্তমান সময়ের পরিস্থিতি তুলনা করলে দেখা যায়, বর্তমান আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অনেক বেশি নিরাপদ।”
তিনি আরও যোগ করেন, নেতা বা কর্মী হিসেবে চুপচাপ থাকা মানে কেবল নিরাপদ থাকা নয়, বরং তা ভবিষ্যতের জন্যও ভালো। উক্ত বক্তব্যে তিনি উল্লেখ করেছেন, যারা অহেতুক রাস্তায় নেমে উত্তেজনা সৃষ্টি করবেন, তাদের জন্য বিপদ অপেক্ষা করছে।
বিদেশে থাকা নেতাদের বিষয়ে নুরুল হকের সতর্কবার্তা
নুর তার বার্তায় বলেন, “স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বিদেশে নিরাপদে থাকা শত-সহস্র কোটি টাকার মালিক নেতাদের কথায় হুজুগে রাস্তায় নামবেন না। এতে আপনি নিজেকে ও পরিবারের জন্য অনিরাপদ করে তুলবেন। বিপ্লবী জনতার ধোলাই খেলে নেতা হওয়ার সুযোগ নেই। গ্রেফতার হলে জেলখানায় কলা বা রুটি পাঠানোর কেউ থাকবে না।”
এতে বোঝা যায়, নুরুল হক নুর রীতিমতো সতর্ক করেছেন যে, প্রদর্শনী বা অযথা আন্দোলনের কারণে নেতাকর্মীরা বিপদে পড়তে পারেন। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, নেতাদের কথায় উচ্ছল হয়ে অযথা ঝুঁকি নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
মুখোশ ও গোপন মিছিল নিয়ে নুরের মন্তব্য
নুরুল হক বলেন, “মুখোশ বা মাস্ক পরে ঝটিকা বা গোপন মিছিল করার কী দরকার? ধরা পড়লে পাবলিকের মার-ধরের শিকার হতে হবে।”
তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, আজকের রাজনীতির বাস্তবতা হলো, অযথা উত্তেজনা বা অবৈধ আন্দোলনের মাধ্যমে কেউ নিরাপদ থাকতে পারবে না।
ইতিহাসের দিক থেকে বর্তমান রাজনীতির বিশ্লেষণ
নুরুল হক নুর বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসের দিকে তাকিয়ে বলেছেন, “পালিয়ে থাকা নেতাদের কথায় উচ্ছল হয়ে লাভ নেই। আওয়ামী লীগ এ দেশের রাজনীতিতে আগামী ৫০ বছরেও ফেরার উপযুক্ত অবস্থায় নেই। ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার পর ২০০৪ সালে তার কন্যা শেখ হাসিনা যখন বিদেশে নিরাপদে ছিলেন, তখনও দলের রাজনীতি অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। বর্তমান সময়ে আওয়ামী লীগ এক প্রকার ‘মরা লাশ’।”
তিনি আরও যোগ করেন, “বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এখন এ দলের দাফন-কাফন সম্পন্ন হবে।”
নতুন দিনের জন্য নুরুল হকের পরামর্শ
নুরুল হক নুর সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মাধ্যমে জনগণকে বলেছেন, “মরা লাশের পিছনে ছুটে গিয়ে নিজেদের বিপদে ফেলবেন না। নতুন দিনের সম্ভাবনার সঙ্গে থাকুন। নতুন বাংলাদেশ আমরা সবাই মিলে গড়ব।”
তিনি বিশ্বাস ব্যক্ত করেছেন, নতুন বাংলাদেশ হবে এমন একটি দেশ যেখানে:
- কোনো ক্ষমতালোভী বা শাসক খুনি থাকবে না
- ফ্যাসিবাদের ছায়া থাকবে না
- মানুষের ভয়হীন চিত্তে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ থাকবে
- দেশপ্রেম, সততা, দায় ও দরদ থাকবে
রাজনৈতিক বিশ্লেষণ: নুরের বার্তার গভীরতা
রাজনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা মনে করেন, নুরুল হক নুরের এই বার্তা সতর্কবাণী এবং দিকনির্দেশনার সংমিশ্রণ। এটি শুধু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের জন্য নয়, বরং সমগ্র রাজনীতিক পরিবেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
বেশিরভাগ রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, নুরের বক্তব্য থেকে বোঝা যায় যে, বর্তমান সময়ে অযথা উত্তেজনা সৃষ্টি করা এবং ক্ষমতাসীন দলের প্রতি আক্রমণাত্মক মনোভাব প্রকাশ করা বিপজ্জনক। এটি কেবল ব্যক্তিগত নয়, দলীয় নিরাপত্তার জন্যও হুমকি হতে পারে।
সামাজিক প্রতিক্রিয়া
ফেসবুক এবং অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নুরুল হক নুরের বার্তার ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকেই মনে করছেন, এটি রাজনীতিতে যুক্তি ও সতর্কতার আহ্বান, যা বর্তমান রাজনৈতিক উত্তেজনা প্রশমিত করতে পারে।
কিছু বিশ্লেষক মন্তব্য করেছেন, নুরের বক্তব্য রাজনৈতিক ইতিহাসের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। এটি স্মরণ করিয়ে দেয়, অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়া কতটা জরুরি।
নুরুল হক নুরের বার্তা স্পষ্টভাবে তুলে ধরে যে, রাজনীতি মানে অযথা ঝুঁকি নেওয়া নয়, বরং যুক্তি, সচেতনতা এবং পরিকল্পিত পদক্ষেপের মাধ্যমে সমাজ ও দেশের জন্য কাজ করা।
তিনি সকল নেতাকর্মী এবং রাজনীতিবিদদের আহ্বান জানিয়েছেন, নিরাপদ ও স্থিতিশীলভাবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করুন, এবং নতুন বাংলাদেশ গঠনে সক্রিয় থাকুন।
এ ধরনের বক্তব্য আজকের প্রজন্মের জন্যও শিক্ষণীয়। এটি শুধু রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা নয়, বরং দেশের ভবিষ্যতের জন্য সতর্কবার্তা।
MAH – 13743 I Signalbd.com



