ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে বিএনপির দুই পক্ষের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের পর পুলিশের কাছে পাল্টাপাল্টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। শনিবার গভীর রাতে বোয়ালমারী থানা পুলিশ দুটি পৃথক মামলার রেকর্ড নথিভুক্ত করে। একটি মামলায় ৩৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং অজ্ঞাতপরিচয় তিন থেকে চারশ লোককে আসামি করা হয়েছে। অপর মামলায় ১৮৮ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় ২০০–২৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মুখ্য মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ মোহাম্মদ আবু জাফরকেও আসামি করা হয়েছে। এই ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও জনতা পার্টির উপদেষ্টা।
সংঘর্ষের পটভূমি
শুক্রবার বিকেলে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের কর্মসূচি কেন্দ্র করে বোয়ালমারী সদর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। বিএনপির দুই পক্ষের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে ১৫ জন আহত হন। একই সময়ে ২০টি মোটরসাইকেলে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে এবং একটি শপিং কমপ্লেক্সে হামলার অভিযোগ পাওয়া যায়।
ফরিদপুর-১ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে উত্তেজনা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছিল। মধুখালী, বোয়ালমারী ও আলফাডাঙ্গা উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনে কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ও সাবেক এমপি খন্দকার নাসিরুল ইসলাম এবং উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনু মনোনয়নপ্রত্যাশী।
২৩ অক্টোবর বোয়ালমারী উপজেলা ও পৌর বিএনপির কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল নাসিরুল ইসলামের সমর্থকদের, আর শামসুদ্দিন ঝুনুর কিছু সমর্থক সীমিতভাবে কমিটিতে স্থান পান। এ অবস্থাই দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ চরমে পৌঁছায় এবং শুক্রবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
মামলা ও অভিযোগের বিস্তারিত
নাসিরুল ইসলামের পক্ষে নবগঠিত উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম থানায় লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। এতে প্রধান আসামি করা হয় শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনুকে। এছাড়া শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর ও খারদিয়ার মাওলানা আবুল কালাম আজাদকে ৩৮ জনের মধ্যে নাম উল্লেখ করা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় তিন থেকে চারশ লোককে আসামি করা হয়েছে।
অপরদিকে শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনুর পক্ষে উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবর রহমান বাবু থানায় অভিযোগ দাখিল করেন। এতে খন্দকার নাসিরুল ইসলামকে ১ নম্বর আসামি করা হয়েছে। মামলায় ১৮৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয় এবং ২০০–২৫০ জন অজ্ঞাতপরিচয় আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পুলিশ দুটি অভিযোগ আমলে নিয়ে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে পৃথক মামলা নথিভুক্ত করেছেন।
থানার ওসি মাহমুদুল হাসান জানান, “এখন পর্যন্ত কোনো আসামি গ্রেপ্তার হয়নি, তবে গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।”
দুই পক্ষের প্রতিক্রিয়া
শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনু অভিযোগের ভিত্তি নেই বলে জানান। তিনি বলেন, “আমরা অফিসের সামনে মিটিং করছিলাম। মিটিং শেষে নাসির মিয়ার লোকজন কামারগ্রাম থেকে ওয়াপদার মোড়ের দিকে আসছিল। আমাদের লোকজন দেখে তারা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে, বোমা ফাটায় ও গুলি চালায়। দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়নি।”
অপরদিকে খন্দকার নাসিরুল ইসলাম বলেন, “আমি মধুখালীতে মিটিং শেষে ১০-১৫ হাজার মানুষের মিছিলে ছিলাম। কিছু দুষ্কৃতকারী খারদিয়া থেকে এসে ঝামেলা শুরু করে। ঝুনু মিয়ার লোকজন আগুন ধরিয়ে দেয়। খালেদা জিয়ার ছবি ভাঙচুর করলে আমাদের লোকজন প্রতিরোধ করে।”
শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর এই মামলায় নাম থাকায় বিস্ময় প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “আমি বিএনপির কেউ না। হয়তো আতংকে আমাকে নামের মধ্যে রেখেছে। আমি চাই সবাই শান্তিপূর্ণভাবে রাজনীতি করুক।”
বিশ্লেষণ
বোয়ালমারীর এই সংঘর্ষ বিএনপির অভ্যন্তরীণ মতবিরোধকে প্রকাশ করেছে। নির্বাচনের আগে দলীয় সংঘাত প্রার্থী মনোনয়ন এবং স্থানীয় নেতৃত্বের আধিপত্যকে কেন্দ্র করে তীব্র আকার ধারণ করেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ধরনের সংঘর্ষ দলের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
নিরাপত্তা বাহিনী ও প্রশাসন সচেতন থাকলে ভবিষ্যতে এ ধরনের সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তবে রাজনৈতিক উত্তেজনা কমাতে দলের অভ্যন্তরীণ সমঝোতা ও সংলাপ জরুরি।
বোয়ালমারীতে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি মামলার ঘটনা জাতীয় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্ব বহন করছে। প্রার্থী মনোনয়ন, দলীয় নেতৃত্ব ও নির্বাচনের পূর্বপ্রস্তুতিকে কেন্দ্র করে এ ধরনের ঘটনা পুনরায় ঘটতে পারে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়ায় নিজেদের অবস্থান প্রতিষ্ঠা করা এবং আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা।
এম আর এম – ২১৬১,Signalbd.com



