রাজনীতি

১৩৪ ঘণ্টা পর অনশন ভাঙলেন তারেক, নেয়া হলো হাসপাতালে

Advertisement

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে দীর্ঘ সময় ধরে আলোচনার কেন্দ্রে থাকা আমজনতার দলের সদস্যসচিব মো. তারেক রহমান ১৩৪ ঘণ্টা পর অনশন ভেঙেছেন। রবিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদের উপস্থিতিতে তাকে অ্যাম্বুল্যান্সে করে রাজধানীর গণস্বাস্থ্য হাসপাতালের উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়।

তারেক রহমান এই অনশন শুরু করেছিলেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রধান ফটকের সামনে। কারণ, তাদের দল ‘আমজনতার দল’ এখনও ইসির দল নিবন্ধনের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি। দীর্ঘ অনশনের পর তিনি স্বাস্থ্য পরিস্থিতি বিবেচনা করে অনশন ভাঙার সিদ্ধান্ত নেন।

অনশন ভাঙার পেছনের কারণ

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ জানান, 

“আমজনতার দলের সদস্যসচিব তারেক রহমান ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের উজ্জ্বল নক্ষত্র। তার সঙ্গে যারা আন্দোলনে ছিলেন তাদের অনেকেই শহীদ হয়েছেন, পঙ্গু হয়েছেন। তারেকও অনেক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।”

তিনি আরও বলেন,

সামনের দিনে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার কারণে তার দল নিবন্ধনের আবেদন করেছে। কিন্তু দীর্ঘ বিচার-বিবেচনার পর তাদের দলকে এখনও নিবন্ধন দেওয়া হয়নি। এই পরিস্থিতিতে আমরা তারেককে অনুরোধ করে অনশন ভাঙতে বলেছি। তিনি তা মেনে নিয়েছেন।”

তারেক রহমানের অবস্থা এবং হাসপাতালে নেওয়া

অনশন ভাঙার পর তারেককে অবিলম্বে অ্যাম্বুল্যান্সে করে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে নেওয়া হয়। বর্তমানে তার স্বাস্থ্য স্থিতিশীল, তবে চিকিৎসকরা পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যাচ্ছেন। হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, দীর্ঘ সময় ধরে অনশন করার কারণে তার শারীরিক অবস্থা কিছুটা দুর্বল হলেও তৎক্ষণাৎ চিকিৎসা শুরু হওয়ায় আশঙ্কা কমেছে।

বিস্তারিত জানা গেছে, তারেকের সাথে অনশনকালে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ দেখা করতে আসতেন। অনশন ভাঙার আগে তাকে বিভিন্ন প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, তবে তিনি সেগুলো প্রত্যাখ্যান করেছেন। অবশেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যের কথায় তিনি অনশন ভাঙতে রাজি হয়েছেন।

তারেক রহমানের অনশন শুরু হয় মঙ্গলবার থেকে। দীর্ঘ ১৩৪ ঘণ্টা ধরে তিনি ইসি প্রধান ফটকের সামনে অনশন চালিয়ে আসছিলেন। এই অনশন রাজনৈতিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে বিবেচিত হয়, কারণ এটি রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের বিষয়কে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেছে।

‘আমজনতার দল’ সরকারের কাছে দল নিবন্ধনের আবেদন জানিয়েছিল, কিন্তু দীর্ঘ বিচার-বিবেচনার পর এখনও ন্যায্য সিদ্ধান্ত আসেনি। অনশন এই প্রক্রিয়ায় উত্তেজনা এবং সমর্থন বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে।

রাজনৈতিক প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া

তারেকের দীর্ঘ অনশন এবং হাসপাতালে নেওয়ার বিষয়টি দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার সৃষ্টি করেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এটি দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি রাজনৈতিক দলের মনোভাব এবং আইনি কাঠামোর গুরুত্বকে তুলে ধরে।

বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং সামাজিক অঙ্গন তারেকের অনশন নিয়ে সমালোচনা এবং সমর্থন প্রকাশ করেছে। অনশন ভাঙার মাধ্যমে রাজনৈতিক উত্তেজনা কিছুটা কমেছে, তবে দল নিবন্ধনের বিষয়টি এখনও অমীমাংসিত।

স্বাস্থ্য ও পুনর্বাসন

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তারেক রহমানকে হাসপাতালে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। দীর্ঘ সময় অনশন করার কারণে তার শরীরে শারীরিক দুর্বলতা লক্ষ্য করা গেছে। পুনর্বাসনের জন্য তাকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও মেডিকেল তত্ত্বাবধানের প্রয়োজন।

বর্তমানে তার অবস্থা স্থিতিশীল। চিকিৎসকরা তাকে পর্যবেক্ষণে রাখার পাশাপাশি তার শক্তি ও স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরে আসার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

তারেক রহমানের অনশন ভাঙার পর রাজনৈতিক এবং সামাজিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এটি রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের প্রক্রিয়ায় নতুন আলো সৃষ্টি করেছে। তার দলের নিবন্ধন এবং ইসিতে আপিল পুনর্বিবেচনার প্রক্রিয়া এখন প্রধান আলোচ্য বিষয়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, তারেকের স্বাস্থ্য এবং রাজনৈতিক অবস্থান দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। তার সুস্থতা নিশ্চিত হলে তিনি আবারো দলের কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।

মো. তারেক রহমানের ১৩৪ ঘণ্টা অনশন এবং পরবর্তীতে হাসপাতালে নেওয়া দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। দীর্ঘ অনশন এবং আদালতীয় প্রক্রিয়ার মধ্যে তার অবস্থার স্থিতিশীলতা দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতি সমর্থন বৃদ্ধি করেছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, তারেকের দ্রুত সুস্থতা এবং দলের নিবন্ধনের প্রক্রিয়া দেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় প্রভাবশালী হতে পারে। ভবিষ্যতে দল ও নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে তার অবদান গুরুত্বপূর্ণভাবে বিবেচিত হবে।

এম আর এম – ২১৫৮,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button