জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর থেকেই দেশের বিভিন্ন জেলায় মনোনয়নবঞ্চিত নেতাদের সমর্থকদের ক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। সড়ক অবরোধ, রেল অবরোধ থেকে শুরু করে দলীয় কার্যালয়ে হামলার মতো ঘটনাও ঘটছে।
বিক্ষোভের আগুন থামছে না মনোনয়নবঞ্চিত নেতাদের সমর্থকদের
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি ২৩৭টি আসনে প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা ঘোষণা করেছে। এই ঘোষণার পর থেকেই মনোনয়নবঞ্চিত নেতাদের সমর্থকরা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন বিভিন্ন জেলায়।
রোববারও দেশের একাধিক স্থানে বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ ও সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। এতে দলীয় কার্যালয় ভাঙচুরসহ সহিংসতার ঘটনাও ঘটেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় নেতারা।
কুমিল্লায় সংঘর্ষ, আহত অন্তত ১৮ জন
কুমিল্লা-৯ (লাকসাম) আসনে বিএনপির মনোনয়নবঞ্চিত নেতা সামিরা আজিম দোলার সমর্থকদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়রা জানান, দুপুরে কান্দিরপাড় ইউনিয়নে গণসংযোগের সময় দোলার গাড়িবহরে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী আবুল কালামের সমর্থকরা অতর্কিত হামলা চালায়।
এ সময় বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয় এবং দোলা সহ অন্তত ১৮ জন আহত হন। আহতদের লাকসাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
তবে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে আবুল কালামের পক্ষের নেতারা বলেছেন, “এটি ছিল পরিকল্পিত উস্কানি।”
গাইবান্ধায় ১৪৪ ধারা, উত্তেজনায় দুই পক্ষ
গাইবান্ধা-৫ (সাঘাটা) আসনে বিএনপির প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে দ্বন্দ্ব চরমে উঠেছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান জেলা বিএনপির বহিষ্কৃত সহ-সভাপতি নাহিদুজ্জামান নিশাদ।
তার সমর্থক ও বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ফারুক আলম সরকারের সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে প্রশাসন এলাকাজুড়ে ১৪৪ ধারা জারি করে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রাত ১২টা পর্যন্ত সাঘাটা উপজেলা শহর ও আশপাশের এলাকায় এই নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে মহাসড়ক অবরোধ, যানজট কয়েক কিলোমিটার
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনে মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে দুপুরে কানসাটে মহাসড়ক অবরোধ করেন বিএনপির মনোনয়নবঞ্চিত নেতা শাহিন শওকতের কর্মী-সমর্থকরা।
বিক্ষোভকারীরা বলেন, “আসনটিতে ত্যাগী নেতাকে উপেক্ষা করে অযোগ্য প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।”
তাদের দাবি, শাহিন শওকতকে ধানের শীষের প্রার্থী ঘোষণা না করা পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
অবরোধের সময় প্রায় এক ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকায় মহাসড়কে কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়।
সাতক্ষীরায় পুনর্নির্বাচনের দাবিতে মিছিল
সাতক্ষীরা-৩ আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে আজও বিক্ষোভ করেছেন কাজী আলাউদ্দীনের সমর্থকরা। তারা ডা. শহিদুল আলমকে প্রার্থী ঘোষণার দাবি জানিয়ে বিকেলে কালিগঞ্জের তারালী বাজারে সমাবেশ করেন।
ডা. শহিদুল আলমের সমর্থকরা বলেন, “দলীয় নেতৃত্ব ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আমরা যোগ্য প্রার্থীকে ফিরিয়ে চাই।”
তারা মনোনয়ন পুনর্বিবেচনা না হওয়া পর্যন্ত বিক্ষোভ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন।
কক্সবাজারে মশাল মিছিল ও টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ
কক্সবাজার-৪ আসনেও মনোনয়নবঞ্চিত প্রার্থীর সমর্থকদের বিক্ষোভ থামছে না। শনিবার রাতে আবদুল্লাহর সমর্থকরা মশাল মিছিল বের করে ও সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে।
বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ করেন, “যে নেতাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, তার কোনো সাংগঠনিক ভিত্তি নেই। দলের ত্যাগী কর্মীদের সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে।”
পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এলাকায় অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করেছে।
দলীয় নেতৃত্বের অবস্থান ও বিশ্লেষকদের মন্তব্য
বিএনপির কেন্দ্রীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রার্থী তালিকা প্রাথমিক পর্যায়ের এবং তা এখনো চূড়ান্ত নয়। তবে মনোনয়ন নিয়ে এই বিভাজন নিয়ে দলটি উদ্বিগ্ন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাব ও মাঠ পর্যায়ে কর্মীদের ত্যাগের মূল্যায়ন না হওয়ায় এমন অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।
একজন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক বলেন, “দলের ঐক্য রক্ষা করতে হলে নেতৃত্বকে এখনই শক্ত ভূমিকা নিতে হবে, না হলে নির্বাচনের আগে ভেতরের বিভাজন আরও গভীর হবে।”
মনোনয়নকে ঘিরে বিএনপির অভ্যন্তরীণ ক্ষোভ এখন প্রান্তিক পর্যায়েও ছড়িয়ে পড়েছে। নির্বাচনী মাঠে এটি দলের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে বিরোধী রাজনীতির ঐক্য ও গণআন্দোলনের পরিকল্পনাও বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
এখন দেখার বিষয়, বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব কেমনভাবে এই সংকট সামাল দেয় এবং ক্ষোভে ফুঁসতে থাকা তৃণমূলকে কতটা শান্ত করতে পারে।
এম আর এম – ২১৪৮,Signalbd.com



