রাজনীতিআঞ্চলিক

চট্টগ্রামে রাজনৈতিক সহিংসতার রক্তছাপ: ১৩ মাসে ১৫ জন খুনে অস্থির নগরী

Advertisement

১৩ মাসে ১৫ খুন: রাজনীতিতে সহিংসতার জোয়ার

চট্টগ্রামে গত ১৩ মাসে রাজনৈতিক বিরোধ ও সন্ত্রাসী দ্বন্দ্বে খুন হয়েছেন ১৫ জন। এর মধ্যে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলেই প্রাণ হারিয়েছেন ১০ জন। শহরজুড়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং নির্বাচনী সহিংসতা নতুন উদ্বেগ তৈরি করেছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।

নির্বাচনী জনসংযোগে গুলিবর্ষণ, নিহত সরোয়ার

বুধবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম-৮ আসনে বিএনপির প্রার্থী এরশাদ উল্লাহর নির্বাচনী জনসংযোগ চলাকালে ভিড়ের মধ্যে এক ব্যক্তি পিস্তল তাক করে গুলি চালান। গুলিতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন সরোয়ার হোসেন। তিনি বিএনপির স্থানীয় কর্মী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। পুলিশ জানায়, তাঁর বিরুদ্ধে ১৫টি মামলা রয়েছে এবং তিনি সম্প্রতি জামিনে মুক্তি পেয়েছিলেন।

বিএনপির উদ্বেগ ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

ঘটনার পর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বিবৃতিতে বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে এবং নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতেই এমন ঘটনা ঘটানো হচ্ছে।”
বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, আওয়ামী শাসকগোষ্ঠীর পতনের পর দুষ্কৃতকারীরা দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে।

একই এলাকায় পরদিন আরও গুলির ঘটনা

বৃহস্পতিবার দুপুরে একই এলাকায় রিকশাচালক ইদ্রিস আলীকে হাঁটুতে গুলি করে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এর একদিন আগেই রাউজানে বিএনপির দুই পক্ষে গোলাগুলির ঘটনায় পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হন।

রাউজানে সবচেয়ে বেশি রক্তপাত

গত ১৩ মাসে বিএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে যে ১০টি খুনের ঘটনা ঘটেছে, তার ৭টিই রাউজানে। নিহতদের মধ্যে আছেন আলমগীর আলম, আবদুল হাকিম, কমর উদ্দিন, মো. ইব্রাহিম, মানিক আবদুল্লাহ, মুহাম্মদ সেলিম ও দিদারুল আলম।
তাঁরা কেউ গিয়াস কাদের চৌধুরীর অনুসারী, কেউ গোলাম আকবর খন্দকারের।

ছাত্রদল ও যুবদলের দ্বন্দ্বেও খুন

চট্টগ্রামের বাকলিয়া, খুলশী ও মিরসরাই এলাকায় ছাত্রদল ও যুবদলের দ্বন্দ্বেও রক্তপাত হয়েছে। ২৫ অক্টোবর বাকলিয়ায় গোলাগুলিতে নিহত হন ছাত্রদলের কর্মী মো. সাজ্জাদ। ব্যানার টানানোকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান যুবদলের কর্মী মো. জিহাদও।

আওয়ামী লীগের পাঁচ কর্মী খুন

বিএনপির পাশাপাশি কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগেরও পাঁচজন কর্মী গত ১৩ মাসে খুন হয়েছেন। এ পাঁচজনই রাউজান এলাকায় নিহত হন, যা পুরো অঞ্চলে উত্তেজনা বাড়িয়েছে।

সরোয়ার হত্যার পেছনে সন্ত্রাসী দ্বন্দ্ব

পুলিশ জানায়, নিহত সরোয়ার একসময় কুখ্যাত সন্ত্রাসী সাজ্জাদ আলীর অনুসারী ছিলেন। পরবর্তীতে তাদের মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়, যা থেকেই খুনের সূত্রপাত। সাজ্জাদের বাহিনীতে এখনও ২৫ জন সক্রিয় রয়েছে বলে পুলিশের দাবি।

জামিনে বেরিয়ে আবার অপরাধে

গত বছরের ৫ আগস্টের পর অন্তত ৩৫ জন সন্ত্রাসী জামিনে বেরিয়ে পুনরায় অপরাধে জড়িয়ে পড়েছেন। তাঁদের মধ্যে অনেকে রাজনৈতিক সভা-সমাবেশেও দেখা যাচ্ছে, যা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্য নতুন হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

খুনোখুনির পরিসংখ্যান ও পুলিশি অভিযান

গত এক বছরে চট্টগ্রামে খুন হয়েছেন ৩৫ জন, এর মধ্যে ২২ জন গুলিতে নিহত। বাকি ১৩ জনকে পিটিয়ে বা ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ৯৪৫টি লুট হওয়া অস্ত্রের মধ্যে ৭৮০টি উদ্ধার করা গেলেও বাকিগুলো এখনও অপরাধমূলক কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।

সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থতা নিয়ে সমালোচনা

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী বলেন, “আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যর্থতার কারণেই অপরাধীরা একের পর এক খুন করছে। অস্ত্রধারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার না করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।”

পুলিশের দাবি: পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে

চট্টগ্রাম নগর পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ বলেন, “আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আমরা বেশ কয়েকজন অস্ত্রধারীকে গ্রেপ্তার করেছি এবং তদন্ত দ্রুত এগোচ্ছে।”

চট্টগ্রামের রাজনৈতিক সহিংসতা এখন শুধু দলীয় কোন্দল নয়, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তাকেও হুমকির মুখে ফেলছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

SRS – 20002 | Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button