রাজনীতি

জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধসহ ৫ দাবিতে যমুনামুখী ৮ দলের বিক্ষোভ

Advertisement

৬ নভেম্বর, ২০২৫। রাজধানীর পল্টন এলাকা আজ সকালে পরিণত হয়েছে বিক্ষোভমুখর জনসমুদ্রে। জামায়াতসহ আটটি রাজনৈতিক দল তাদের পাঁচ দফা দাবিতে মিছিল ও সমাবেশের মাধ্যমে সরকারের প্রতি রাজনৈতিক ইঙ্গিত দিয়েছেন। এই দাবিগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা এবং নভেম্বর মাসেই গণভোট আয়োজন

মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন

আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ঢাকা দক্ষিণ শাখা জামায়াতের হাজারো নেতা-কর্মী পল্টনের দিকে পদযাত্রা শুরু করেন। মিছিলটি পরিচালিত হয় ঢাকা দক্ষিণের বিভিন্ন থানার ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের অংশগ্রহণে। মিছিলে তারা ব্যানার, ফেস্টুন এবং প্ল্যাকার্ড নিয়ে অংশ নেন, যা শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে দৃশ্যমান হয়ে ওঠে।

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার মিছিলের নেতৃত্ব দেন। তার নেতৃত্বে মিছিলটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশে চলতে থাকে। মিছিলের মূল লক্ষ্য হলো জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধসহ পাঁচ দফা দাবিতে সরকারের মনোযোগ আকর্ষণ করা।

পাঁচ দফা দাবি

মিছিলের পেছনের মূল প্রেক্ষাপট হলো পাঁচ দফা দাবি। এগুলো হলো:

  1. জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।
  2. নভেম্বর মাসেই গণভোট আয়োজন।
  3. অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদে রাজনৈতিক হয়রানি ও গ্রেপ্তার বন্ধ করা।
  4. নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলের সমান সুযোগ নিশ্চিত করা।
  5. ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং রাজনৈতিক সংগঠনের কার্যক্রমে বাধাহীনতা নিশ্চিত করা।

জামায়াতের নেতা হারিস উদ্দিন সমাবেশে বলেন, “জনগণের মতামত ছাড়া রাষ্ট্র পরিচালনা করা যায় না। আমরা শান্তিপূর্ণ উপায়ে জনগণের রায়ের মাধ্যমে দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে চাই।”

অন্যান্য দলের অংশগ্রহণ

জামায়াতের পাশাপাশি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এবং জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) এই সমাবেশে অংশগ্রহণ করে। তারা মিছিলে যোগ দিয়ে সরকারের প্রতি তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরনের সমাবেশ রাজধানীর রাজনৈতিক দৃশ্যপটে একটি শক্তিশালী বার্তা প্রেরণ করে।

স্মারকলিপি প্রদান

এর আগে ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের দাবিতে জামায়াত সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্মারকলিপি দেওয়ার কথা ঘোষণা করে। গতকাল বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবন-এ প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন এর সঙ্গে বৈঠক শেষে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ এ তথ্য জানান।

মিছিল শেষে জামায়াতসহ অন্যান্য দলের নেতা-কর্মীরা যমুনা নদীর তীরে প্রধান উপদেষ্টার বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করবেন। এটি সরকারের প্রতি গণভোট আয়োজন এবং পাঁচ দফা দাবির গুরুত্বের উপর জোর দেয়।

নিরাপত্তা ও বিশৃঙ্খলা এড়াতে পদক্ষেপ

পল্টন এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শান্তিপূর্ণ সমাবেশে বিঘ্ন না ঘটাতে তারা যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছে।

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

জাতীয় পার্টি এবং ১৪ দলের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ ও সীমিত করার বিষয়টি নতুন নয়। এটি মূলত রাজনৈতিক উত্তাপ সৃষ্টি করতে পারে। সম্প্রতি জাতীয় নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে জামায়াতসহ অন্যান্য দলগুলোর গণভোটের দাবি রাজনৈতিক মহলে সরব হয়েছে। তারা মনে করে, জনগণের সরাসরি মতামত ছাড়া দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করা সম্ভব নয়।

পল্টন মিছিলের মাধ্যমে তারা সরকারের নীতি ও সিদ্ধান্তের প্রতি মৌলিক প্রশ্ন তোলেন, যা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দেশের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে।

বিশেষ বিশ্লেষণ

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই ধরনের বিক্ষোভ ও গণমত প্রদর্শন একটি দেশে গণতন্ত্রের চর্চার অংশ। তবে তারা সতর্ক করে বলেন, মিছিল ও সমাবেশ শান্তিপূর্ণ হতে হবে। কোনো রকম বিশৃঙ্খলা বা সহিংসতা ঘটলে তা সরকারের জন্য প্রশাসনিক চাপ তৈরি করতে পারে।

মিছিল এবং স্মারকলিপি প্রদানের মাধ্যমে জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধসহ পাঁচ দফা দাবির গুরুত্ব দেশের রাজনীতিতে বিশেষ স্থান দখল করতে সক্ষম হবে।

আজকের মিছিলের মাধ্যমে জামায়াতসহ আটটি রাজনৈতিক দল সরকারের প্রতি তাদের প্রধান দাবির গুরুত্ব তুলে ধরেছে। গণভোট আয়োজন, রাজনৈতিক স্বাধীনতা, সমান নির্বাচনী সুযোগ এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ—এই দাবিগুলো দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে প্রভাব ফেলবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

পল্টনের এই বিক্ষোভ মিছিল এবং যমুনা নদীর তীরবর্তী স্মারকলিপি প্রদান কার্যক্রম আগামী নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক উত্তাপ ও সমর্থন উভয়ই বৃদ্ধি করবে।

MAH – 13650 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button