রাজনীতি

বিএনপির মনোনয়ন ঘিরে ৮ জেলায় বিক্ষোভ-সহিংসতা

Advertisement

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য বিএনপির মনোনয়ন ঘোষণা ঘিরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে উত্তেজনা তীব্র আকার ধারণ করেছে। দলীয় মনোনয়ন তালিকায় নাম না থাকায় দেশের অন্তত আট জেলায় বিক্ষোভ, সড়ক ও রেলপথ অবরোধ, এবং মানববন্ধনসহ বিভিন্ন প্রতিবাদমূলক কর্মকাণ্ড হয়েছে।

গত সোমবার (৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় বিএনপি তাদের প্রার্থীদের নামের তালিকা প্রকাশের পরপরই দেশে উত্তেজনার পরিবেশ সৃষ্টি হয়। মনোনয়ন না পাওয়া নেতাকর্মীরা রাতেই বিভিন্ন সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং সড়ক অবরোধের ঘটনা সর্বত্র নজরে আসে।

এর ধারাবাহিকতায় বুধবার (৫ নভেম্বর) বিভিন্ন জেলার মনোনয়ন না পাওয়া নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণ ও সহিংস প্রতিবাদ করেছেন।

মাদারীপুর-১ (শিবচর)

কামাল জামান মোল্লার মনোনয়ন স্থগিতের প্রতিবাদে শিবচরে বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করা হয়। তার সমর্থকরা বলেন, “আমরা আমাদের প্রার্থীকে প্রতিযোগিতা থেকে বঞ্চিত হতে দেখতে পারি না।”

কুমিল্লা-১০ (নাঙ্গলকোট ও লালমাই)

বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়ার সমর্থকরা রেলপথ অবরোধ করেন। তারা দাবি করেন, “নির্বাচনে অংশগ্রহণের অধিকার সকল প্রার্থীকে সমানভাবে দেওয়া উচিত।”

নাটোর-বাগাতিপাড়া

মনোনয়ন না পাওয়া কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপুর সমর্থকরা বিক্ষোভ মিছিল করেন। তারা স্থানীয় প্রশাসনের কাছে দাবি জানান, দলীয় মনোনয়ন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও ন্যায্য হওয়া প্রয়োজন।

পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা-দশমিনা)

গলাচিপা উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলের মাধ্যমে প্রার্থীর নাম ঘোষণা স্থগিতের প্রতিবাদ জানান। তারা বলেন, “আমাদের মতামতকে উপেক্ষা করা মানা যাবে না।”

ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর)

প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার এম ইকবাল হোসাইনের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভের নেতৃত্ব দেন মনোনয়নপ্রত্যাশী আহাম্মদ তায়েবুর রহমান হিরণের অনুসারীরা। নেত্রকোনা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে তারা টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধও করেন।

সাতক্ষীরা-৩ (কালীগঞ্জ-আশাশুনি)

ডা. শহিদুল আলমকে মনোনয়ন না দেওয়ায় তার সমর্থকরা টানা দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভে অংশ নেন। তারা দাবি করেন, “দলের স্বার্থ ও প্রার্থীদের ন্যায্যতা রক্ষা করা আবশ্যক।”

মুন্সীগঞ্জ-১ (শ্রীনগর ও সিরাজদীখান)

মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার দাবিতে শ্রীনগরে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়। এই সমাবেশে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির স্বেচ্ছাসেবক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু এবং শ্রীনগর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মো. মমিন আলী বক্তব্য দেন। তারা বলেন, “দলের কাঠামো শক্তিশালী করার জন্য আমাদের সবাইকে একত্রিত হতে হবে।”

নীলফামারী-১৫ (সৈয়দপুর-কিশোরগঞ্জ)

কণ্ঠশিল্পী বেবী নাজনীনকে মনোনয়ন না দেওয়ায় সমর্থকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, “তিনি দেশের ও দলের জন্য দীর্ঘদিন অবদান রেখেছেন। এই অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া উচিত ছিল।”

রংপুর-৩ (সদর-মহানগর)

মনোনয়ন না পাওয়ায় রিটা রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি অভিযোগ করেন, “যাকে শহরের লোকেরা ‘চাঁদাবাজ ও দখলদার’ হিসেবে উল্লেখ করছে, তার পক্ষে কাজ করতে চাই না। দলের উন্নয়নের স্বার্থে যোগ্য প্রার্থী মনোনয়ন পাওয়া উচিত।”

বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জ)

স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান মনোনয়ন পাওয়ায় সাবেক সংসদ সদস্য মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদের বাসায় গিয়ে সমঝোতার চেষ্টা করেন। তারা একে অপরকে মিষ্টিমুখ করান।

সার্বিকভাবে দেখা যাচ্ছে, মনোনয়ন তালিকায় না থাকার কারণে বিএনপির ভিন্ন ভিন্ন এলাকায় নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ এবং রাজনৈতিক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ বিক্ষোভকারীদের শান্তি বজায় রাখার চেষ্টা করছেন।

রাজনীতিবিদরা মনে করাচ্ছেন, রাজনৈতিক দলগুলোতে মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা থাকা প্রয়োজন। নির্বাচনের পূর্বে এই ধরনের উত্তেজনা ভবিষ্যতে বড় ধরনের রাজনৈতিক অস্থিরতার সূচনা করতে পারে।

বিশেষ মন্তব্য:

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আসন্ন নির্বাচনের আগে মনোনয়ন বিতর্ক ও বিক্ষোভ বিএনপির অভ্যন্তরীণ বিভাজন এবং ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা আরও তীব্র করবে। তারা বলছেন, “মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা না থাকলে দলীয় স্থিতিশীলতা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং সাধারণ ভোটারদের মধ্যে হতাশা তৈরি হতে পারে।”

MAH – 13648 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button