গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগে হাইকোর্টের বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারকে রাষ্ট্রপতির আদেশে পদচ্যুত করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপন মঙ্গলবার আইন মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপতির আদেশে অপসারণ
সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারকে অপসারণ করা হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি সংবিধানের পুনর্বহালকৃত অনুচ্ছেদ ৯৬-এর দফা (৬)-এর বিধান অনুযায়ী তাকে পদচ্যুত করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের তদন্তে দেখা গেছে, বিচারপতি খুরশীদ আলম সরকার তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনে অযোগ্য হয়ে পড়েছেন।
আইন মন্ত্রণালয় সচিব লিয়াকত আলী মোল্লার স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বিস্তারিত জানানো হয়েছে, রাষ্ট্রপতির আদেশে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
গত ২৭ আগস্ট বিচারপতি খুরশীদ আলম সরকারকে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল তলব করে। তাঁকে অনিয়ম ও অসদাচরণের অভিযোগের ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।
এই তদন্তে বিভিন্ন গুরুতর অসদাচরণের প্রমাণ পাওয়া যায়, যা বিচারপতির দায়িত্ব পালনে অযোগ্যতার ইঙ্গিত দেয়। তদন্তের পর সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল রাষ্ট্রপতিকে সুপারিশ করে বিচারপতিকে অপসারণ করার জন্য।
এই পদক্ষেপ সুপ্রিম কোর্টের স্বচ্ছতা ও বিচারব্যবস্থার আস্থাকে রক্ষা করার লক্ষ্য নিয়ে নেওয়া হয়েছে।
প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
বিচারপতি খুরশীদ আলম সরকারের অপসারণের সিদ্ধান্ত দেশের বিচারব্যবস্থা ও রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি সুপ্রিম কোর্টের স্বচ্ছতা ও দায়িত্বশীলতার উদাহরণ। তারা মনে করেন, উচ্চপর্যায়ের বিচারপতির ক্ষেত্রেও আইন ও নিয়মের প্রয়োগ নিশ্চিত করা হয়েছে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, এই পদক্ষেপ ভবিষ্যতে বিচারপতি নিয়োগ ও পদচ্যুতির ক্ষেত্রে আরও স্বচ্ছতা আনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা হতে পারে।
আইনি প্রক্রিয়া ও সংবিধান
সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিকে অপসারণের জন্য সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
এই ধারা অনুযায়ী, কোনো বিচারপতি যদি তার পদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে অযোগ্য হয়, তাহলে রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের সুপারিশে তাকে অপসারণ করতে পারেন।
এতে বলা হয়েছে যে, বিচারপতির কোনো অধিকার বা পদমর্যাদা সংরক্ষণ হলেও, দায়িত্ব অযোগ্যতার প্রমাণ পেলে পদচ্যুত করা যায়।
বিশেষজ্ঞ মতামত
আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই পদক্ষেপ বিচারব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও ন্যায়বিচারের প্রতি জনগণের আস্থা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ।
প্রসঙ্গত, দেশের বিচারব্যবস্থায় উচ্চপর্যায়ের পদে থাকা কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনে অযোগ্যতার অভিযোগে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
এ ধরনের পদক্ষেপ ভবিষ্যতে বিচারপতি ও আইনজীবীদের জন্য সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করতে পারে।
বিচারপতি খুরশীদ আলম সরকারের অপসারণ দেশের বিচারব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও দায়িত্বশীলতার এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
আইনি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতে বিচারপ্রক্রিয়ায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এছাড়া, এটি সুপ্রিম কোর্টের প্রতি জনগণের আস্থা ও দেশের আইনের প্রতি সম্মান বজায় রাখার ক্ষেত্রে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।
এম আর এম – ২১০৪,Signalbd.com



