রাজনীতি

চট্টগ্রাম-৮: বিএনপি নেতার সঙ্গে নির্বাচনী গণসংযোগে গুলিবিদ্ধ সরোয়ার বাবলার মৃত্যু

Advertisement

চট্টগ্রামে বিএনপির নির্বাচনী জনসংযোগের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে সরোয়ার বাবলা (৪৩) মারা গেছেন। এরশাদ উল্লাহ ও আরও একজন আহত রয়েছেন।

ঘটনার বিবরণ

চট্টগ্রামের হামজারবাগ এলাকায় বুধবার বিকেলে চট্টগ্রাম-৮ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী এরশাদ উল্লাহর সঙ্গে নির্বাচনী গণসংযোগে অংশ নেওয়া সরোয়ার হোসেন বাবলা (৪৩) গুলিবিদ্ধ হন। আহতদের মধ্যে সরোয়ার বাবলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এছাড়া এরশাদ উল্লাহ ও আরেকজন ব্যক্তি ‘শান্ত’ নামের আহত হন।

চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের উত্তর জোনের উপ-কমিশনার (ডিসি) আমিরুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, সরোয়ার বাবলার মৃত্যু হয়েছে এবং আহতরা বর্তমানে চিকিৎসাধীন।

ঘটনার পেছনের কারণ

পুলিশ সূত্র জানায়, সরোয়ার বাবলার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, অস্ত্র, হত্যা এবং আরও ১৫টি মামলা রয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে ধরা পড়েছে, স্থানীয় সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদের সঙ্গে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সরোয়ারকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়েছে।

বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসি জসিম উদ্দিন জানান, চলতি বছরের ৩০ মার্চ নগরের বাকলিয়া অ্যাকসেস রোড এলাকায় প্রাইভেট কারে গুলি চালিয়ে সরোয়ারকে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছিল। ওই ঘটনায় প্রাইভেট কারে থাকা দুজন নিহত হয়েছিলেন, তবে সরোয়ার ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান।

পুলিশ জানিয়েছে, হামজারবাগের ঘটনার পিছনে দীর্ঘদিন ধরে চলা আধিপত্য বিরোধ এবং প্রতিপক্ষের সংঘর্ষ মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

বিএনপির অবস্থান

বিএনপি নেতারা ঘটনার সঙ্গে নিজেদের কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানিয়েছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, জনসংযোগের সময় সরোয়ার সেখানে অংশ নিলেও, তার সঙ্গে দলের কোনো আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক নেই।

পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, জনসংযোগে শত শত মানুষ অংশ নেন এবং ঘটনার সময় স্থানীয় দু’পক্ষের পূর্ববিরোধের কারণে গুলি চালানো হয়।

আহতদের অবস্থা ও চিকিৎসা

এরশাদ উল্লাহ বর্তমানে চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার পেটে ছররা গুলির আঘাত রয়েছে। চিকিৎসা সাপেক্ষে তিনি আশঙ্কামুক্ত রয়েছেন।

ঘটনার সময় আহতদের তৎক্ষণাত হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। স্থানীয় হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, জরুরি অস্ত্রোপচার শেষে তাদের অবস্থা স্থিতিশীল।

পূর্ব ইতিহাস ও ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি

সরোয়ার বাবলা এক মাস আগে বিয়ে করেছেন এবং তার বিয়েতে বিএনপি নেতা এরশাদ উল্লাহসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা উপস্থিত ছিলেন।

পুলিশ ও বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সরোয়ারের এবং সাজ্জাদ হোসেনের মধ্যে দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও স্থানীয় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে। ২০১৫ সালের পর থেকে সরোয়ার এ দলের কাছ থেকে সরে যান, যা তার ওপর অতিরিক্ত হুমকি তৈরি করেছিল।

স্থানীয় নিরাপত্তা পরিস্থিতি

চট্টগ্রামের হামজারবাগ এবং আশেপাশের এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে শক্ত করার জন্য পুলিশ সর্তক অবস্থায় রয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন এবং অভিযান অব্যাহত আছে। পুলিশ বলেছে, এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে সতর্ক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

বিশ্লেষণ ও প্রভাব

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নির্বাচনী সময়ে এমন সহিংসতা রাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি করতে পারে। স্থানীয় জনগণ এবং রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা এখন অতি জরুরি।

পুলিশ ও প্রশাসন উভয়ই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য বিশেষ নজরদারি চালাচ্ছেন। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, চট্টগ্রাম-৮ আসনের নির্বাচনী পরিবেশের ওপর এই ধরনের ঘটনা দীর্ঘমেয়াদে প্রভাব ফেলতে পারে।

চট্টগ্রাম-৮ আসনের নির্বাচনী গণসংযোগে গুলিবিদ্ধ হওয়া সরোয়ার বাবলার মৃত্যু রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে বড় প্রভাব ফেলেছে। প্রশাসন, রাজনৈতিক দল ও স্থানীয় জনগণ একযোগে পরিস্থিতি শান্ত রাখার চেষ্টা করছেন। আগামী দিনগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার এবং নির্বাচনী প্রচারণা শান্তিপূর্ণভাবে পরিচালনা করা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

এম আর এম – ২১১১,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button