রাজনীতি

নির্বাচনের আগে একটি দল জাতির মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করতে চায়: সালাহউদ্দিন আহমদ

Advertisement

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে একটি রাজনৈতিক দল ইসলামকে ব্যবহার করে জাতির মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি জনগণকে এই ষড়যন্ত্র থেকে সাবধান থাকার আহ্বান জানান।

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ বাড়ছে। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ অভিযোগ করেছেন, একটি রাজনৈতিক দল ইসলামকে বারবার ব্যবহার করে জনগণের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করতে চাইছে। তিনি বলেছেন, এ ধরনের কর্মকাণ্ড কেবল ইসলাম নয়, বরং জাতির ঐক্যকেও ক্ষতিগ্রস্ত করছে। শনিবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ শহরের মাসদাইর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে আয়োজিত 

নির্বাচনের আগে বিভক্তির রাজনীতি নিয়ে সতর্কবার্তা

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “নির্বাচনের আগে একটি রাজনৈতিক দল ইসলামকে বারবার ব্যবহার করে জাতির মধ্যে বিভক্তি তৈরি করতে চাইছে। তারা ইসলামের ক্ষতি করতে চায়। আমাদের সজাগ থাকতে হবে, যেন এ ধরনের অপচেষ্টা সফল না হয়।”

তিনি আরো বলেন, ধর্মীয় অনুভূতি ব্যবহার করে জনগণকে বিভ্রান্ত করা ইসলামবিরোধী কাজ। ইসলাম শান্তি ও ঐক্যের ধর্ম, কিন্তু কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী রাজনৈতিক লাভের আশায় ইসলামের নাম ব্যবহার করছে।

মদিনার ইসলামে বিশ্বাসের আহ্বান

বিএনপির এই নেতা বলেন, “আমরা মদিনার ইসলামে বিশ্বাস করি, রাসুল (সা.) যেভাবে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেছেন, আমরা সেই পথের অনুসারী। এখানে আমরা মওদুদী ইসলামের অনুসারী নই।”

তিনি জনগণকে সতর্ক করে বলেন, “যারা ফিতনা সৃষ্টি করে মুসলমানদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াতে চায়, তাদের থেকে সাবধান থাকা প্রয়োজন। আমাদের একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত সত্যিকারের ইসলামের চর্চা ও ঐক্য বজায় রাখা।”

রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তনের আহ্বান

সালাহউদ্দিন আহমদ তার বক্তৃতায় বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ইসলামবিদ্বেষী রাজনীতি করেছে। তারা আলেমদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে, মুসলিমবিদ্বেষী আচরণ করেছে। এই রাজনীতি দেশের জন্য ক্ষতিকর।”

তিনি জোর দিয়ে বলেন, দেশের সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনতে হলে আদর্শিক রাজনীতির চর্চা বাড়াতে হবে। “আমাদের আগামী দিনের রাজনীতি হতে হবে নীতি ও আদর্শের ভিত্তিতে। অপরাজনৈতিক সংস্কৃতি বিলুপ্ত করতে হলে জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে সত্যিকারের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে,” বলেন সালাহউদ্দিন।

বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের দূরত্ব

বক্তৃতায় সরাসরি নাম না বললেও সালাহউদ্দিন আহমদের বক্তব্যে ইঙ্গিত পাওয়া যায়, তিনি জামায়াতে ইসলামীকেই উদ্দেশ্য করে কথা বলেছেন। একসময় বিএনপির জোটসঙ্গী থাকা জামায়াতের সঙ্গে দলটির দূরত্ব এখন বেড়েছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দুই দলের আদর্শিক অবস্থান স্পষ্টভাবে ভিন্ন হয়ে পড়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিএনপি এখন নিজেদের ইসলামী ভাবমূর্তিকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করতে চাইছে, যাতে জামায়াতের মতো দলগুলোর ধর্মভিত্তিক রাজনীতি থেকে তারা আলাদা অবস্থান তৈরি করতে পারে।

আজমতে সাহাবা সম্মেলনের তাৎপর্য

নারায়ণগঞ্জের মাসদাইর ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত ‘আজমতে সাহাবা সম্মেলন’-এ দেশ-বিদেশের আলেম, পীর ও রাজনৈতিক নেতারা অংশ নেন। কাসেমী পরিষদের আয়োজিত এ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন আওলাদে রাসুল আল্লামা সাইদ আল হোসাইনী (পাকিস্তান), আল্লামা খলিল আহমাদ কুরাইশী, মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মামুন মাহমুদসহ স্থানীয় বিএনপি ও যুবদলের নেতারা। বক্তারা ইসলামি ঐক্যের গুরুত্ব এবং রাজনৈতিক স্বার্থে ধর্মের অপব্যবহার বন্ধের আহ্বান জানান।

বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সালাহউদ্দিন আহমদের এই বক্তব্য মূলত আসন্ন নির্বাচনের প্রাক্কালে বিএনপির অবস্থান স্পষ্ট করার একটি প্রচেষ্টা। সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মীয় বিষয়কে ঘিরে নানা রাজনৈতিক বিতর্ক তৈরি হওয়ায় বিএনপি চায় নিজেকে ‘ধর্মনিরপেক্ষ কিন্তু ইসলামপন্থী’ দল হিসেবে উপস্থাপন করতে।

একজন বিশ্লেষক বলেন, “বাংলাদেশে ইসলাম একটি সংবেদনশীল ইস্যু। যে দলই ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনীতি করতে চায়, তারা স্বল্পমেয়াদে কিছু সুবিধা পেলেও দীর্ঘমেয়াদে জনগণের বিশ্বাস হারায়। সালাহউদ্দিনের বক্তব্য হয়তো সেই দিকেই ইঙ্গিত করছে।”

ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে ঐক্যের ডাক

বক্তৃতার শেষাংশে সালাহউদ্দিন আহমদ দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান, যাতে তারা বিভেদের রাজনীতি থেকে দূরে থেকে ঐক্যের পথে এগিয়ে যায়। তিনি বলেন, “আমাদের সকলকে একত্র হয়ে ইসলাম ও দেশের স্বার্থে কাজ করতে হবে। ঐক্যই হচ্ছে জাতির শক্তি, বিভক্তি নয়।”

তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, আদর্শভিত্তিক রাজনীতি ও নৈতিক নেতৃত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশে একটি সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশ গড়ে উঠবে।

সালাহউদ্দিন আহমদের এই বক্তব্য শুধু নির্বাচনের আগের রাজনৈতিক উত্তাপ নয়, বরং ধর্ম ও রাজনীতির সম্পর্ক নিয়েও নতুন করে আলোচনা সৃষ্টি করেছে। আগামী নির্বাচনে এই ইস্যু কীভাবে প্রভাব ফেলবে, তা এখন সময়ই বলে দেবে। তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, ধর্মীয় আবেগের বদলে নীতিনিষ্ঠ রাজনীতি ও জনগণের ঐক্যই হতে পারে ভবিষ্যতের পথ।

এম আর এম – ২০৩০,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button