 
						সুদানের দক্ষিণাঞ্চলীয় মাররা পাহাড়ি এলাকায় ভয়াবহ ভূমিধসের ঘটনায় এক গ্রাম সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। স্থানীয় প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, এই দুর্ঘটনায় এক হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গেছেন। এমন এক ঘটনায় মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে যা দেশ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
ভূমিধসটি ঘটেছে গত ৩১ আগস্ট, ভারী বর্ষণ এবং পাহাড়ি এলাকার অতিরিক্ত জলধারণ ক্ষমতার কারণে। নিহতদের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ, নারী এবং শিশু রয়েছে। স্থানীয় সূত্র বলছে, গ্রামে শুধু একজন বেঁচে রয়েছেন।
ঘটনাস্থলের পরিস্থিতি
সুদান লিবারেশন মুভমেন্টের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “গ্রামটি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে। মৃতদেহ উদ্ধার ও বেঁচে থাকা লোকদের নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা প্রয়োজন।”
দক্ষিণ মাররা অঞ্চলের দুর্গম পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় উদ্ধারকর্মী এবং মানবিক সাহায্য পৌঁছানো অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে। একই সঙ্গে, স্থানীয় গৃহযুদ্ধ ও সামরিক সংঘাতের কারণে এলাকায় সরাসরি সাহায্য পৌঁছানো আরও কঠিন হয়েছে।
সুদানের সেনাবাহিনী ও প্যারামিলিটারি র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সের সংঘর্ষের কারণে বহু মানুষ দারফুর অঞ্চলে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজতে বাধ্য হয়েছিল। সেখানে তারা খাদ্য, পানীয় এবং চিকিৎসা সুবিধা ছাড়াই জীবন যাপন করছিল। এবার প্রাকৃতিক দুর্যোগ তাদের জীবন ধ্বংস করে দিয়েছে।
মানবিক সঙ্কট এবং আন্তর্জাতিক সাহায্য
দারফুর অঞ্চলে দুই বছরের বেশি সময় ধরে চলা গৃহযুদ্ধের কারণে দেশটির অর্ধেকের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এই ভূমিধস তাদের দুর্ভাগ্যকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থা উদ্ধারকাজে অংশগ্রহণ করছে। বিশেষ করে মৃতদেহ উদ্ধার এবং বেঁচে থাকা মানুষদের জন্য ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া তাদের মূল চ্যালেঞ্জ।
স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, খাদ্য ও ওষুধের সরবরাহ বাধাগ্রস্ত, ফলে আহতদের চিকিৎসা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। এছাড়া, ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি দুর্গম অঞ্চলের কারণে উদ্ধারকাজ ধীরগতিতে হচ্ছে।
সুদানের ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
দারফুরে দুই বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধের ফলে এই অঞ্চলের মানুষের জীবনমান মারাত্মকভাবে খারাপ হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে নিরাপত্তাহীনতার কারণে মানুষ পাহাড়ি অঞ্চলে আশ্রয় নিয়েছে, যা তাদের জীবনের ঝুঁকি বাড়িয়েছে।
বিগত কয়েক বছর ধরে দারফুরে সামরিক সংঘর্ষ ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে নাগরিকরা নিরাপদ স্থানে বসবাসের সুযোগ পাচ্ছিল না। এই ভূমিধস তাদের জীবন আরও দুর্বিষহ করে তুলেছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
সিএনএন, বিবিসি এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার খবর সম্প্রচার করেছে। জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থাগুলো মৃতদেহ উদ্ধার, আহতদের চিকিৎসা এবং ত্রাণ বিতরণে সহায়তা করার জন্য ইতিমধ্যেই প্রস্তুতি নিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সুদানের পাহাড়ি অঞ্চল এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ভবিষ্যতেও হতে পারে। তাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মানবিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা বৃদ্ধির প্রয়োজন রয়েছে।
সাধারণ মানুষের করুণ বাস্তবতা
দারফুর অঞ্চলে সাধারণ মানুষরা নিত্যনতুন ঝুঁকির মুখে জীবনযাপন করছে। যুদ্ধ, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ মিলিয়ে তাদের জীবন অতীব ঝুঁকিপূর্ণ। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, “আমাদের কাছে বেঁচে থাকার তেমন সুযোগ নেই। ঝড় বা ভূমিধস হলে আমরা প্রায়শই আশ্রয়হীন হয়ে পড়ি।”
এই ধরনের দুর্ঘটনা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করছে। শুধু ত্রাণ বিতরণ নয়, দীর্ঘমেয়াদী পুনর্বাসন ও অবকাঠামোগত উন্নয়নও জরুরি হয়ে উঠেছে।
সুদানের ভূমিধস: একটি মানবিক বিপর্যয়ের চিত্র
- স্থান: মাররা পাহাড়ি অঞ্চল, দক্ষিণ সুদান
- তারিখ: ৩১ আগস্ট, ২০২৫
- নিহত: ১,০০০+ মানুষ
- প্রভাব: পুরো গ্রাম ধ্বংস, আহত ও নিখোঁজ ব্যক্তির সংখ্যা অনিশ্চিত
- কারণ: ভারী বর্ষণ, পাহাড়ি ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল, দীর্ঘমেয়াদি গৃহযুদ্ধ
- সাহায্য: জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক সংস্থা, স্থানীয় ত্রাণকর্মী
সুদানের মাররা অঞ্চলের ভূমিধস প্রমাণ করছে যে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মানবসৃষ্ট সংঘাত একসাথে মিলিত হলে মানবিক বিপর্যয় কতটা ভয়াবহ হতে পারে। এক হাজারেরও বেশি মানুষ এই দুর্যোগে প্রাণ হারিয়েছে, যা দেশ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য একটি গভীর সতর্কবার্তা।
এই ভয়াবহ ঘটনা স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সক্রিয়ভাবে সাহায্য পৌঁছে দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে। শুধু তা নয়, সুদানের দুর্যোগপ্রবণ অঞ্চলে দীর্ঘমেয়াদী পুনর্বাসন এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নও অত্যন্ত জরুরি।
MAH – 12607, Signalbd.com
 
				 
					


