রাজনীতি

নারীর সম্ভাবনা কাজে লাগাতে ‘শিশু পরিচর্যা নীতি’ আনতে চায় বিএনপি

Advertisement

বাংলাদেশে এখনও বহু তরুণী মা পর্যাপ্ত শিশু পরিচর্যার সুযোগ না পেয়ে চাকরি ছাড়তে বাধ্য হন। অনেক ছাত্রী সন্তান লালন-পালনের দায়িত্বে পড়ে পড়াশোনা বন্ধ করে দেন। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় শুধু পরিবার নয়—ক্ষতিগ্রস্ত হয় গোটা দেশের উন্নয়নযাত্রা।
এই বাস্তবতা বদলাতে নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ ও শিশু পরিচর্যা (চাইল্ডকেয়ার) ব্যবস্থা জাতীয় অর্থনৈতিক কৌশলের অংশ করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)

বিএনপির মতে, দেশের টেকসই উন্নয়নের জন্য নারীর অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ বাড়ানো অপরিহার্য। নারী যেন কাজ ও পরিবার—দুই দিক সামলাতে পারেন, সে লক্ষ্যেই আসছে এই “শিশু পরিচর্যা নীতি”।

প্রস্তাবিত উদ্যোগ ও নীতিমালা

বিএনপি তাদের পরিকল্পনায় শিশু পরিচর্যা ব্যবস্থাকে একটি বাধ্যতামূলক অর্থনৈতিক অবকাঠামো হিসেবে দেখতে চায়। প্রস্তাবিত মূল উদ্যোগগুলো হলো—

  • দেশের সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন
  • সরকারি অফিসগুলোতে ধাপে ধাপে ডে-কেয়ার সেন্টার প্রতিষ্ঠার জাতীয় পরিকল্পনা
  • বড় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও শিল্প কারখানায় বাধ্যতামূলক ডে-কেয়ার সুবিধা চালু
  • যেসব প্রতিষ্ঠান শিশু পরিচর্যার ব্যবস্থা রাখবে, তাদের জন্য কর ছাড় ও সিএসআর ক্রেডিট প্রদান
  • নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মান অনুযায়ী কেয়ারগিভারদের প্রশিক্ষণ ও সার্টিফিকেশন প্রোগ্রাম চালু

বিএনপির বক্তব্য—“শিশু পরিচর্যা কোনো সামাজিক দয়া নয়, এটি অপরিহার্য অবকাঠামো। যেমন সড়ক বাজারকে সংযুক্ত করে, তেমনি ডে-কেয়ার সেন্টার নারীদের কর্মজীবনের সঙ্গে সংযুক্ত করে।”

নারীর শ্রমবাজারে বাস্তব চিত্র

২০২৪ সালের শ্রমশক্তি জরিপে দেখা যায়, দেশে পুরুষ শ্রমশক্তির প্রায় ৮০ শতাংশ কর্মরত হলেও নারীদের মধ্যে এই হার মাত্র ৪৩ শতাংশ। বিএনপি মনে করে, এটি শুধু একটি সংখ্যা নয়—এটি জাতির অর্ধেক সম্ভাবনা অপচয়ের প্রতিফলন।

যদি কর্মক্ষেত্রে ডে-কেয়ার সুবিধা নিশ্চিত হয়, তাহলে অনেক নারী চাকরি বা পড়াশোনা ছাড়তে বাধ্য হবেন না। এতে কর্মজীবী নারীর সংখ্যা যেমন বাড়বে, তেমনি সামগ্রিক উৎপাদনশীলতাও বৃদ্ধি পাবে।

অর্থনৈতিক সুফল ও জিডিপিতে প্রভাব

বিএনপির হিসাব অনুযায়ী, প্রস্তাবিত শিশু পরিচর্যা নীতি বাস্তবায়িত হলে দেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) অন্তত ১ শতাংশ পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি যোগ হতে পারে।
নারীদের কর্মসংস্থান ও পারিবারিক আয় বৃদ্ধি পেলে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা শক্তিশালী হবে, মধ্যবিত্ত শ্রেণি আরও স্বচ্ছল হবে, এবং ভোক্তা ব্যয় বাড়বে—যা অর্থনীতির চাকা আরও দ্রুত ঘুরাবে।

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই নারী। শিশু পরিচর্যার সুযোগ থাকলে তাদের কর্মপরিবেশ উন্নত হবে, অনুপস্থিতি কমবে, এবং উৎপাদনশীলতা বাড়বে। আন্তর্জাতিক সংস্থার গবেষণায়ও প্রমাণিত হয়েছে—যেসব প্রতিষ্ঠানে ডে-কেয়ার সুবিধা আছে, সেখানে কর্মী ধরে রাখার হার বেশি এবং বিনিয়োগের রিটার্নও দ্রুত আসে।

রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও দলের অঙ্গীকার

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, “যখন কোনো তরুণী মা পর্যাপ্ত শিশু পরিচর্যার সুযোগ না পেয়ে চাকরি ছাড়েন অথবা কোনো ছাত্রী পড়াশোনা বন্ধ করেন, তখন বাংলাদেশ হারায় সম্ভাবনা, উৎপাদনশীলতা ও অগ্রগতি।”
তার ভাষায়, শিশু পরিচর্যা, সমান মজুরি এবং কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা—এই তিনটি স্তম্ভই হবে নারীর ক্ষমতায়নের ভিত্তি।

দলটি ২০৩৪ সালের মধ্যে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ট্রিলিয়ন-ডলারের অর্থনীতি গড়ার লক্ষ্য নিয়েছে। তাদের দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট—কোনো নারী যেন পরিবার ও ভবিষ্যতের মধ্যে বেছে নিতে বাধ্য না হন।

বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ

তবে পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নে রয়েছে নানা চ্যালেঞ্জ। প্রথমত, সরকারি ও বেসরকারি খাতে পর্যাপ্ত অর্থায়ন ও কাঠামো গড়ে তোলা প্রয়োজন। দ্বিতীয়ত, ডে-কেয়ার সেন্টারের মান নিয়ন্ত্রণ, কেয়ারগিভারদের প্রশিক্ষণ ও তদারকি কার্যক্রম যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি শুধু একটি নীতিগত ঘোষণা নয়—এটি দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের অংশ। শিশুকেয়ার নীতি কার্যকর করতে হলে সরকার, বেসরকারি খাত এবং নাগরিক সমাজের সমন্বয় অপরিহার্য।

বাংলাদেশে নারীর সম্ভাবনা অপরিসীম। কিন্তু উপযুক্ত শিশু পরিচর্যা ব্যবস্থা না থাকায় সেই সম্ভাবনার বড় অংশ অপচয় হচ্ছে। বিএনপির প্রস্তাবিত “শিশু পরিচর্যা নীতি” সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে নারীর শ্রমবাজার অংশগ্রহণ বাড়বে, পারিবারিক স্থিতিশীলতা আসবে, এবং জাতীয় অর্থনীতিও হবে আরও শক্তিশালী।

এই নীতি কেবল রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি নয়—এটি সামাজিক বাস্তবতার সঙ্গে অর্থনৈতিক উন্নতির একটি সেতুবন্ধন। নারী-পুরুষ সমানভাবে কাজের সুযোগ পেলে বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যাবে, আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে।

এম আর এম – ২০০৯,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button