রাজনীতি

মসজিদে আলোচনা করতে বাধা, বিএনপি নেতাকে গণধোলাই

Advertisement

কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বটতৈল ইউনিয়নের বরিয়া জামে মসজিদে শনিবার বিকেলে একটি বিতর্কিত ঘটনা ঘটেছে; মসজিদে নামাজের পর বক্তৃতা করছিলেন ইসলামি বক্তা মুফতি আমির হামজা। ওই সময় মসজিদ কমিটির সভাপতি ও স্থানীয় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) নেতা শাজাহান আলী হান্নান হান্নান বক্তাকে নির্দেশ দেন ‘ধর্মীয় আলোচনা করা যেতে পারে, কিন্তু রাজনৈতিক বিষয়ে কোনো আলোচনা করা যাবেনা।’ তিনি এই নির্দেশ কার্যকর করার সময় হান্নানকে মসজিদ থেকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হয়—যার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে।

ঘটনা যা ঘটেছে

বরিয়া জামে মসজিদে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে আসরের নামাজ পর মুফতি আমির হামজা মঞ্চ গ্রহণ করেন ও বক্তব্য শুরু করেন। অনুষ্ঠানের সময়ই শাজাহান আলী হান্নান দাঁড়িয়ে বক্তাকে কিছু বলার অনুমতি চান। হান্নানের মুখে শুনা যায়:

“হুজুর, ধর্মীয় আলোচনা যত পারেন করবেন, কিন্তু রাজনৈতিক কোনো আলোচনা করবেন না।”

এরপর মসজিদে থাকা মুসল্লিরা উত্তেজিত হন। তারা হান্নানের দিকে এগিয়ে যান, তাকে ধাক্কা দিয়ে মসজিদ থেকে বের করে দেন। এই সময় কয়েকজন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসেন। ঘটনার পর পুরো এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে।

অভিযুক্তের দাবি ও বক্তব্য

মসজিদ কমিটির সভাপতি ও বিএনপি নেতা শাজাহান আলী হান্নান আজকের পত্রিকাকে বলেন,

“আমি মসজিদ কমিটির সভাপতি। মুফতি আমির হামজা মসজিদে আসবেন সেটাও আমাকে আগে কেউ জানায়নি। আসরের নামাজ শেষে হঠাৎ তিনি বক্তব্য দেওয়া শুরু করেন। আমি সভাপতি হিসেবে শুধু রাজনৈতিক আলোচনা বাদ দিয়ে ইসলামিক আলোচনা করার অনুরোধ করেছি। এতেই মসজিদের ভেতরে থাকা লোকজন আমার দিকে তেড়ে আসেন। আমাকে ধাক্কা দেওয়া হয়।”

তিনি আরও বলেন, তিনি মসজিদের অন্তরালের অপরিচিত ব্যক্তিদের বিষয়ে উদ্বিগ্ন; স্থানীয় কয়েকজন ছাড়া মসজিদের ভেতর যারা ছিলেন, তারা ছিলেন জামায়াত-শ্রেণীর লোকেরা। তিনি এই ঘটনার বিষয়ে জেলা বিএনপির সদস্য সচিবকে অবহিত করেছেন।

বিএনপির ও জামায়াত-এর প্রতিক্রিয়া

ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. আনিসুর রহমান এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেন,

“হান্নান ভাই নিজেই ওই মসজিদ কমিটির সভাপতি। তাঁর সঙ্গে এমন আচরণ প্রতিহিংসামূলক। মসজিদে হবে ইসলামিক আলোচনা। সেখানে কোনো রাজনৈতিক আলোচনা হতে পারে না।”

অপরদিকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী-এর স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে যে, মুফতি আমির হামজা ওই আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা পেয়েছেন। ২০২৫ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসন থেকে জামায়াতের প্রার্থীরূপে তার নাম চূড়ান্ত হয়নি হলেও ঘোষণা করা হয়েছে।

মুফতি আমির হামজার মন্তব্য

মুফতি আমির হামজা গণমাধ্যমকে বলেন,

“আমরা গণসংযোগ করছিলাম। ওই মসজিদে নামাজ পড়ার পর ইমাম সাহেব আমাকে সালাম দিতে বলে। এক-দেড় মিনিটের মাথায় হান্নান সামনের থেকে উঠে বললেন রাজনৈতিক কোনো কথা বলবেন না। আমি তো শুরুই করিনি। তারপর সাত-আটজন তাঁকে (হান্নানকে) নিষেধ করতে গেলে হট্টগোল বেধে যায়। পরে বিষয়টি আমি ঠিক করে দিয়ে চলে আসছি।”

এই ঘটনা স্বীকার করে তিনি বলেন যে, মসজিদে এমন পরিস্থিতি তাঁর জন্যও অপ্রত্যাশিত ছিল।

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও ব্যাকগ্রাউন্ড

এই ঘটনার রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতও রয়েছে। জামায়াত-এর প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করেছে এবং তার মধ্যে মুফতি আমির হামজার নাম উল্লেখ রয়েছে। ৩০০ আসনের প্রায় সব কেন্দ্রেই প্রার্থী ঘোষণা করেছে জামায়াত। তবে অংশীদার হিসেবে অন্যান্য ইসলামি দল-জোটের সঙ্গে আলোচনা চলমান রয়েছে।

এর আগে মুফতি আমির হামজা একাধিক বার বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে আলোচনায় এসেছেন।

মসজিদ ও রাজনৈতিক আলোচনার সংবেদনশীলতা

বাংলাদেশে মসজিদ সাধারণত ধর্মীয় উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। এমন একটি স্থানে রাজনৈতিক বক্তব্য দেয়ার চেষ্টা করলে তা তৎক্ষণাৎ বিতর্কের সৃষ্টি করতে পারে—বিশেষ করে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ যদি সেটিকে রাজনৈতিক প্রচারমূলক বক্তব্য হিসেবে দেখতে শুরু করেন। এই প্রসঙ্গে শাজাহান হান্নানের বক্তব্য ছিল: মসজিদে ধর্মীয় আলোচনা করা যাবে, তবে রাজনৈতিক আলোচনা বন্ধ থাকবে।

স্থানীয়রা বলছেন, মসজিদে রাজনৈতিক আলোচনা নিষিদ্ধ না হলেও তার প্রেক্ষাপটে স্থান, সময় ও বিষয়বস্তু বিবেচনায় নিতে হয়। ধর্মীয় মহলে এটি একটি সংবেদনশীল বিষয়।

সামাজিক ও স্থানীয় প্রতিক্রিয়া

এ ঘটনার ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম‐ফেসবুকে দ্রুত ভাইরাল হয়। ভিডিওতে দেখা যায় শাজাহান হান্নান বক্তব্য দিচ্ছেন, মজলুমের মতো মুসল্লিরা উত্তেজিত হয়ে তার দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন ও তাকে বের করে দিচ্ছেন। এই ভিডিও সামাজিক পরিবেশে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।

স্থানীয় কয়েকজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মুসল্লি বলেন, “মসজিদে এমন ধরনের বিবাদ আমরা আগে দেখিনি। ধর্মীয় বক্তার সাথে এমনভাবে আচরণ করা আমাদের অস্বাভাবিক লাগছে।”

বিশ্লেষণ ও ভবিষ্যৎ দৃষ্টিভঙ্গি

এই ঘটনার মাধ্যমে বেশ কয়েকটি বিষয়浮উঠছে:

  1. মসজিদের ব্যবহার ও সীমা বিষয়ে স্থানীয় নেতৃত্ব ও ধর্মীয় বক্তার মধ্যে সংঘাত।
  2. রাজনীতির সঙ্গে ধর্মীয় স্থানের সংযোগ—মসজিদে রাজনৈতিক প্রসার যদি হয় তাহলে সেটি সামাজিক আলোচনায় বেশ স্পর্শকাতর হয়ে ওঠে।
  3. নির্বাচনী প্রেক্ষাপটে মসজিদ ও ধর্মীয় বক্তাদের ভূমিকা—যেমন মুফতি আমির হামজার প্রার্থী ঘোষণার পর এই ঘটনাটি একটি ইঙ্গিত হয়ে দাঁড়াচ্ছে যে, তিনি শুধুই ধর্মীয় বক্তা নয়, রাজনৈতিক বলেও বিবেচনায় রয়েছে।
  4. স্থানীয় নেতৃত্বের ভূমিকায় বিভাজন—শাজাহান হান্নান নিজে মসজিদ কমিটির সভাপতি হওয়ায়, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় দুই ভূমিকার সমন্বয় সম্ভব ছিল না বলে অভিযোক্তা মনে করছেন।

চলতি নির্বাচন ঘূর্ণিতে ধর্মীয় বক্তাদের রাজনৈতিক ভূমিকায় নিয়োজিত হওয়া নতুন ঘটনা নয়; কিন্তু মসজিদে সরাসরি রাজনৈতিক আলোচনা বন্ধ করার নির্দেশ বর্ননায় এটি একটি নতুন রূপ নিয়েছে। ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি কি ঘটবে, তা দেখার বিষয়।

কুষ্টিয়ার বটতৈল ইউনিয়নের বরিয়া জামে মসজিদে নামাজ শেষে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন মুফতি আমির হামজা। মসজিদ কমিটির সভাপতি ও বিএনপি নেতা শাজাহান আলী হান্নান হঠাৎ মঞ্চে উঠে বলেন — “রাজনৈতিক কোনো আলোচনা করবেন না।” এরপর উত্তেজনা শুরু হয়ে হান্নানকে ধাক্কা দিয়ে মসজিদ থেকে বের করে দেওয়া হয়। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয় এবং এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। বিএনপি ও জামায়াত উভয়েই নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছে; পাশাপাশি ধর্মীয় স্থান ও রাজনৈতিক বক্তব্যের সংযোগ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

MAH – 13490 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button