
বরিশালের শের–ই–বাংলা মেডিকেল কলেজ (SBMC) ক্যাম্পাসে গত সোমবারই ৩০ সদস্যের নতুন কমিটি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল (ছাত্রদল)। ঘোষণা করা হয় কমিটিতে সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকসহ ৩০ জনকে। ওই তালিকায় ১৮ জন এমন নাম রয়েছে যাদের পরিচয়ে বলা হচ্ছে তারা মূলত ছাত্রলীগ‐সংশ্লিষ্ট। এই নিয়ে ছাত্ররাজনীতিতে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
কমিটি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা হয় ছাত্রদলের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে। আগামী এক মাসের মধ্যে নতুন কমিটিকে পূর্ণাঙ্গভাবে কমিটি গঠন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ক্যাম্পাসে আগে থেকেই ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকলেও এই ঘোষণার আগে একটি মিছিল হয় ছাত্রদলের ব্যানারে, এরপরই কমিটি অনুমোদন পায়।
আলোচিত বিষয়-বিস্তারিত
১. রাজনীতির কার্যক্রম ও নিয়ন্ত্রণ
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ২০২৪ সালের ১১ আগস্ট SBMC একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্তে কলেজে “প্রকাশ্যে কিংবা গোপনে সব ছাত্র সংগঠনের রাজনীতি নিষিদ্ধ” করা হয়। সেই অবস্থা থেকে ১১ বছর পর এই কমিটি ঘোষণা হওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে রাজনীতি কোথায় ও কীভাবে পরিচালিত হচ্ছে সেই প্রসঙ্গে।
২. কমিটিতে সদস্যসংখ্যা ও পরিচয়
নবগঠিত কমিটিতে রয়েছে: সভাপতি মো. আসাদুজ্জামান প্রিন্স, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল ফাহিদ ও আরও ২৮ জন সদস্য। অভিযোগ উঠেছে, সভাপতিসহ ১৮ জনেরই ছাত্রলীগ‐রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে বলা হচ্ছে–
- সভাপতি প্রিন্স ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে অংশ নেয় ও আওয়ামী লীগের আয়োজনে ছিলেন।
- সাধারণ সম্পাদক ফাহিদ নির্বাচনী প্রচারণায় সক্রিয় ছিলেন।
- আরও অনেকে ছাত্রলীগ‐ম লিংক থাকলেও ছাত্রদল‐কমিটিতে নাম হয়েছেন।
৩. বিরোধিতা ও উদ্বেগ
এই কমিটি ঘোষণা-প্রক্রিয়ায় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের বরিশাল মহানগর শাখার নেতারা বলছেন, কেন্দ্র থেকে কোনো আলোচনা-মত বিনিময় ছাড়াই কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে এবং বড় অংশে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের অন্তর্ভুক্ত করেছে। তারা দায়ভার নিচ্ছেন না এমন নিয়োগের ক্ষেত্রে। এই নিয়ে ত্যাগী নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে।
৪. সাক্ষাৎকার ও তথ্যপ্রমাণের অভাব
যদিও সাংবাদিকরা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক‐সহ বেশ কিছু নেতার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছেন, কিন্তু তারা কথা বলতে রাজি হননি বা ফোন রিসিভ করেননি। ফলে তথ্য সংগ্রহে জটিলতা দেখা দিয়েছে।
৫. প্রেক্ষাপট ও সমস্যার বড় ছবি
SBMC–তে পড়াশোনা, শিক্ষক সংকট ও রাজনীতির প্রভাব নিয়ে আগে থেকেই বিভিন্ন প্রতিবেদন রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, গত ফেব্রুয়ারি মাসে স্টুডেন্টরা শিক্ষকের অভাব নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন। New Age+1 আবার আগস্টে স্বাস্থ্য খাতের সংস্কারের দাবিতে ক্যাম্পাসসংলগ্ন আন্দোলনও হয়েছিল। bdnews24.com+1 এই প্রেক্ষাপটে ওই কলেজে ছাত্ররাজনীতির পুনরাবির্ভাব বা সেটি কতটা নিয়ন্ত্রিত তা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে।
বিশ্লেষণ — কেন এই কমিটি সমস্যা সৃষ্টি করল?
- রাজনৈতিক সংযোগ ও স্বায়ত্বস্বত্ব
যখন একটি ছাত্রসংগঠনের কমিটিতে একটি রাজনৈতিক দল (ছাত্রলীগ)‐এর এত বড় অংশ হয়, তখন প্রশ্ন উঠে যায় ওই সংগঠনের কার্যক্রম, স্বাধীনতা ও দলীয় প্রভাব নিয়ে। - অৈধ সভা-রাজনীতি এবং শিক্ষা পরিবেশ
ক্যাম্পাসে প্রকাশ্য বা গোপনে রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকলেও পুনরায় রাজনীতির উপস্থিতি শিক্ষা পরিবেশে প্রভাব ফেলতে পারে। - নেতা-নিযুক্তি ও স্বচ্ছতা
নতুন কমিটি ঘোষণা হওয়ার পদ্ধতি নিয়ে যে আলোচনা-আলোচনা হয়নি, তা সংগঠনের ভিতর বিভাজন ও স্বীকৃত নেতৃত্বপ্রত্যয়ের সংকটে পরিণত হয়েছে। - ছাত্রদের পড়াশোনা ও স্বার্থ
আজ থেকে শিক্ষার্থীরা বলছেন– তারা রাজনীতি নয় পড়াশোনায় মনোযোগ দেওয়া চান। যদিও কলেজরা দায়িত্ব নিচ্ছে বলছে– শিক্ষাগত সমস্যা রয়েছে (যেমন শিক্ষক সংকট) সে দিকে নজর দেওয়া।
কেন্দ্রীয় নির্দেশ ও স্থানীয় বাস্তবতা
২০২৪ সালের আগস্টে কলেজ একাডেমিক কাউন্সিলে সিদ্ধান্ত হয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হবে। এই নির্দেশ কার্যকর হলে ক্যাম্পাসকে শিক্ষার পরিবেশ বানাতে সহায়ক হতো। কিন্তু কমিটি ঘোষণা ও রাজনীতির উপস্থিতি এই সিদ্ধান্তের ব্যতিক্রম বলে বিচার করা হচ্ছে।
স্থানীয় নেতা-কর্মীরা বলছেন– কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহসভাপতি দীপু পটোয়ারীর নেতৃত্বে পদপ্রত্যাশীদের যাচাই-বাছাই করা হয়েছিল– কিন্তু ছাত্রলীগের অন্তর্ভুক্তি বিষয়টি অব্যাহত রয়েছে।
প্রভাব ও সম্ভাব্য ফলাফল
- শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি হতে পারে– রাজনীতিতে যারা যুক্ত তারা ও যারা যুক্ত নন তাদের মধ্যে।
- শিক্ষার মান ও পরিবেশে (“রাজনীতি-বিহীন”) পরিবেশ গঠন উদ্যোগে প্রভাব পড়তে পারে।
- সংগঠনটির সার্বিক ভাবমূর্তি নির্ভর করবে- নতুন কমিটি কতটা স্বচ্ছভাবে কাজ চালায়, ছাত্রদের স্বার্থ কতটুকু রক্ষা করে– তার ওপর।
- বড় রাজনৈতিক দলের (যেমন ছাত্রলীগ) প্রভাব পড়তে পারে সংস্থা-নির্বাচন, দলে মর্যাদা ও কাজের ধরনে।
কি হওয়ার কথা ছিল? এবং এখন কি হওয়া উচিত?
- ছাত্ররাজনীতি সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ বলে কলেজ চেয়েছিল- তবে দেখছি পুনরায় অনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতি-ভিত্তিক কমিটি গঠন করা হয়েছে।
- নতুন কমিটিকে ছাত্রদের স্বার্থ তুলে ধরে, স্বাধীনতা ও পড়াশোনার পরিবেশ নিশ্চিত করে কাজ করতে হবে।
- সংগঠন এবং কলেজ কর্তৃপক্ষ– উভয়কে মিলে নিশ্চিত করতে হবে যে, ছাত্ররাজনীতি নয় শিক্ষা এবং দক্ষতা উন্নয়নের দিকে মনোযোগ দেওয়া হয়।
- কমিটির সদস্যদের নিরপেক্ষভাবে ও শিক্ষার্থীর স্বার্থে কাজের জন্য উদ্বুদ্ধ করা প্রয়োজন।
বরিশালের শের–ই–বাংলা মেডিকেল কলেজে ৩০ সদস্যের ছাত্রদল কমিটিতে ১৮ জন ছাত্রলীগ‐সংশ্লিষ্টদের নাম থাকায় গভীর প্রশ্ন তুলেছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে: একটি শিক্ষাঙ্গনে রাজনীতি কি আবার জায়গা নিচ্ছে? যা একসময়ে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। ছাত্ররাজনীতি, সংগঠন ও শিক্ষার্থীর স্বার্থ— তিনের মধ্যে সমন্বয় আসা জরুরি। নতুন কমিটি যদি স্বচ্ছ, দায়িত্বশীল ও শিক্ষার্থীর কল্যাণমূলক হয়, তাহলে পরিবেশ ইতিবাচক দিকে পরিবর্তন হতে পারে। না হলে, পুনরায় বিতর্ক ও বিভাজন বাড়তে পারে।
MAH – 13453 I Signalbd.com