রাজনীতি

বিজয়ের পর অহংকার নয়, সুযোগকে আমানত মনে করে দায়িত্ব পালন করুন

Advertisement

বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতির নতুন যুগে নেতৃত্বের দায়িত্ব এবং সততার উপর জোর দিয়ে কেন্দ্রীয় শিবির নেতা জাহিদুল ইসলাম একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছেন। ফেনী জেলার কিং অব ফেনী কমিউনিটি সেন্টারে মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ‘সাথী সমাবেশ’-এ তিনি বলেন, “বিজয়ের পর অহংকারী হওয়া যাবে না। সুযোগকে আমানত মনে করে কাজে লাগাতে হবে।” এই বক্তব্য শুধুমাত্র শিবিরের অভ্যন্তরীণ আলোচনা নয়, বরং সাম্প্রতিক জুলাই গণঅভ্যুত্থান এবং ছাত্র সংগঠনগুলোর নির্বাচনী বিজয়ের প্রেক্ষাপটে একটি বৃহত্তর সামাজিক-রাজনৈতিক সতর্কতা। জাহিদুল ইসলামের এই কথা ডাকসু এবং জাকসুর মতো কেন্দ্রীয় ছাত্র সংস্থার সাম্প্রতিক সাফল্যকে মনে করিয়ে দেয় যে, ক্ষমতা অর্জন মানে দায়িত্বের বোঝা বহন করা, অহংকারের নয়।

এই সমাবেশে উপস্থিত শতাধিক সাধারণ সদস্য, স্বেচ্ছাসেবক এবং শুভানুধ্যায়ীরা জাহিদুলের বক্তব্যে অনুপ্রাণিত হয়েছেন। তিনি জুলাই আন্দোলনের স্মৃতিকে জাগিয়ে তুলে বলেন, “জুলাই মানে হাসিনার পতন নয়, জুলাই মানে ন্যায়ের পক্ষে এবং অন্যায়ের বিপক্ষে দাঁড়ানো। প্রয়োজনে শহীদ হবো, কিন্তু অন্যায়ের সামনে মাথা নত করা যাবে না।” এই কথাগুলো বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে নৈতিকতা এবং আত্মত্যাগের আদর্শকে পুনরুজ্জীবিত করেছে। সিঙ্গনালবিডি.কম-এর স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এই সমাবেশ ফেনী জেলা এবং শহর শাখার কর্মীদের মধ্যে নতুন কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের সূচনা করেছে।

সাথী সমাবেশের পটভূমি: ফেনীর কিং অব ফেনী কমিউনিটি সেন্টারে অনুপ্রেরণার মেলা

ফেনী শহরের কিং অব ফেনী কমিউনিটি সেন্টার একটি পরিচিত স্থান, যা স্থানীয় জনসভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং রাজনৈতিক আলোচনার জন্য ব্যবহৃত হয়। ম্যাপকার্টা এবং স্থানীয় রেকর্ড অনুসারে, এই সেন্টারটি ফেনী শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত, যা সহজে পৌঁছানো যায় এবং স্থানীয় যুবকদের মিলনমেলার আদর্শ স্থান। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এখানে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ফেনী জেলা এবং শহর শাখার নেতাকর্মীরা অংশ নিয়েছিলেন। সমাবেশের উদ্বোধন করেন জেলা সভাপতি এবং অন্যান্য স্থানীয় নেতারা।

সমাবেশের মূল উদ্দেশ্য ছিল সাম্প্রতিক ছাত্ররাজনীতির বিজয়কে বিশ্লেষণ করা এবং ভবিষ্যতের দায়িত্ব নির্ধারণ করা। জাহিদুল ইসলাম, যিনি ২০২৫ সালের মে মাসে কেন্দ্রীয় সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন, তাঁর বক্তব্যে শিবিরের ঐতিহাসিক ভূমিকাকে তুলে ধরেন। প্রোথম আলোর রিপোর্ট অনুসারে, জাহিদুলের নির্বাচন ছিল শিবিরের নতুন প্রজন্মের উত্থানের প্রতীক, যা জুলাই আন্দোলনের পর দেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের সাথে যুক্ত। সমাবেশে উপস্থিত একজন স্থানীয় কর্মী বলেন, “এই সমাবেশ আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে যে, বিজয় শুধু জয় নয়, এটি একটি আমানত যা জনগণের কল্যাণে ব্যবহার করতে হবে।”

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ইতিহাসে এমন সমাবেশগুলো গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংগঠন দেশের ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম অগ্রগামী শক্তি। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থান পর্যন্ত শিবিরের ভূমিকা অস্বীকার্য। ঢাকা পোস্টের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, জুলাই আন্দোলনের সময় শিবিরের কর্মীরা সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়ে ন্যায়বিচারের দাবি তুলেছিলেন, যা শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটায়। এই প্রেক্ষাপটে ফেনীর সমাবেশ একটি স্থানীয় স্তরে জাতীয় আন্দোলনের ধারাবাহিকতা।

জাহিদুল ইসলামের বক্তব্য: নেতৃত্বের তিনটি মূল স্তম্ভ

জাহিদুল ইসলামের বক্তব্যকে তিনটি প্রধান অংশে ভাগ করা যায়, যা ছাত্ররাজনীতির ভবিষ্যতকে নির্দেশ করে। প্রথমত, নেতৃত্ব এবং দায়িত্ববোধ। তিনি বলেন, “বিজয়ের পর অনেক কিছু অর্জন করেছি মনে করলে পতন সেখান থেকেই শুরু হয়।” এই কথা ডাকসু (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ) এবং জাকসু (জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ)-এর সাম্প্রতিক নির্বাচনের সাথে যুক্ত। প্রোথম আলোর রিপোর্ট অনুসারে, ২০২৫ সালের জাকসু নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্যানেলের বিজয় ঘটেছে, যা ক্যাম্পাস রাজনীতিতে নতুন দিশা দেখিয়েছে। কিন্তু জাহিদুল সতর্ক করেন, অহংকার এই বিজয়কে ধ্বংস করতে পারে। তিনি উদাহরণ দেন যে, ঐতিহাসিকভাবে অনেক নেতা বিজয়ের পর অহংকারে পড়ে যান, যা তাদের পতন ঘটায়।

দ্বিতীয়ত, সুযোগকে আমানত হিসেবে গ্রহণ। জাহিদুল বলেন, রাজনৈতিক বা সামাজিক অবস্থানকে ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য নয়, জনকল্যাণের জন্য ব্যবহার করতে হবে। এই ধারণা ইসলামী নৈতিকতার সাথে যুক্ত, যেখানে ক্ষমতা একটি আমানত। ঢাকা পোস্টের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, শিবিরের নেতৃত্ব সততা এবং স্বচ্ছতার উপর জোর দেয়, যাতে কর্মীরা সমাজসেবায় নিয়োজিত থাকেন। উদাহরণস্বরূপ, শিবিরের স্থানীয় শাখাগুলো শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং নারী অধিকারের ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রকল্প চালু করেছে। ফেনীর সমাবেশে তিনি বলেন, “সততা ছাড়া নেতৃত্ব অর্থহীন। সুশাসন এবং জবাবদিহিতা আমাদের মূলমন্ত্র।”

তৃতীয়ত, জুলাই আন্দোলন এবং ন্যায়বোধ। জাহিদুল জুলাইকে শুধু একটি মাস নয়, ন্যায়ের প্রতীক বলে বর্ণনা করেন। রয়টার্সের আন্তর্জাতিক রিপোর্ট অনুসারে, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া ছাত্র আন্দোলন দেশব্যাপী গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়, যা শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটায়। এই আন্দোলনে শতাধিক শহীদ হন, এবং হাজারো আহত হন। জাহিদুল বলেন, “জুলাই আমাদের শেখায় যে, অন্যায়ের সামনে মাথা নত করা যাবে না। প্রয়োজনে প্রাণ দিতে হলেও ন্যায়ের পথ ছাড়ব না।” এই বক্তব্য আন্দোলনের আত্মত্যাগের চেতনাকে জাগিয়ে তোলে এবং তরুণ নেতাদের মধ্যে আত্মবল বাড়ায়।

সাম্প্রতিক ছাত্ররাজনীতির প্রেক্ষাপট: ডাকসু, জাকসু এবং জুলাইয়ের ছায়া

বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর ছাত্ররাজনীতি নতুন মোড় নিয়েছে। প্রোথম আলো এবং রয়টার্সের রিপোর্ট অনুসারে, এই আন্দোলন কোটা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে শুরু হলেও, এটি সরকারের স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে একটি বড় বিদ্রোহে পরিণত হয়। ফলে ইন্টারনেট বন্ধ, কারফিউ জারি এবং সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ ঘটে। আন্দোলনের পর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংস্থাগুলো পুনর্গঠিত হয়েছে।

ডাকসুতে ২০২৫ সালের নির্বাচন স্বচ্ছতার প্রতীক হয়ে উঠেছে। প্রোথম আলোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বিজয়ী হয়ে ক্যাম্পাসে নতুন নেতৃত্ব গড়ে তুলেছে। একইভাবে, জাকসুর নির্বাচনে জুলাই আন্দোলনের অংশগ্রহণকারী ছাত্ররা নেতৃত্বে এসেছেন। এই নির্বাচনগুলোতে ভোটার অংশগ্রহণ ৭০% ছাড়িয়েছে, যা ছাত্রদের রাজনৈতিক সচেতনতার ইঙ্গিত। কিন্তু জাহিদুলের বক্তব্য এই বিজয়গুলোকে সতর্ক করে যে, অহংকার এই অর্জনকে বিপন্ন করতে পারে।

শিবিরের ভূমিকা এখানে বিশেষ। বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষায় সক্রিয়। ২০১৮ সালের রোড সেফটি আন্দোলন থেকে জুলাই পর্যন্ত তাদের অবদান উল্লেখযোগ্য। প্রোথম আলোর একটি ফলো-আপ রিপোর্টে বলা হয়েছে, শিবিরের কর্মীরা আন্দোলনের সময় স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে আহতদের সেবায় নিয়োজিত ছিলেন। ফেনীর সমাবেশ এই ঐতিহ্যকে স্থানীয় স্তরে ছড়িয়ে দিয়েছে।

MAH – 13222 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button