
সুস্থ থাকতে নিয়মিত ও পর্যাপ্ত ঘুম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে বর্তমান ব্যস্ত জীবনধারায় অনেকে ঘুমের সময় ঠিক রাখতে পারছেন না। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, অনিয়মিত ঘুম শুধুমাত্র ক্লান্তি নয়, বরং বিভিন্ন গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকিও বাড়াতে পারে।
অনিয়মিত ঘুম ও তার প্রভাব
ঘুম আমাদের শরীরের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে পুনর্গঠন ও শক্তি সঞ্চয় করতে সহায়তা করে। ঘুম কম বা অনিয়মিত হলে শরীরের হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়, যা দীর্ঘমেয়াদে বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনিয়মিত ঘুম সরাসরি হৃৎপিণ্ড, রক্তনালি, মস্তিষ্ক এবং পাচনতন্ত্রের কার্যকারিতায় প্রভাব ফেলে।
উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি
পর্যাপ্ত ঘুম না হলে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। ঘুমের সময় শরীরের রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে এবং হৃদপিণ্ড ও রক্তনালি বিশ্রাম পায়। ঘুম কম হলে এই প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়, যার ফলে হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
হার্টের সমস্যা
ঘুম কম হলে কার্ডিওভাসকুলার সমস্যা বাড়তে থাকে। ঘুমের সময় হার্টের পেশি ও রক্তনালিগুলি পুনরায় শক্তি সঞ্চয় করে। অনিয়মিত ঘুম হলে হার্টের ক্রিয়া ব্যাহত হয় এবং দীর্ঘমেয়াদে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক ও অন্যান্য হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে।
ডায়াবেটিসের ঝুঁকি
অনিয়মিত ঘুম শরীরে ইনসুলিনের উৎপাদনকে প্রভাবিত করে। রাতে পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শরীরের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে সমস্যা দেখা দেয়, যার ফলে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যায়। গবেষণা বলছে, যারা নিয়মিত কম ঘুমান তাদের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ক্ষতি
ঘুম আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। ঘুম কম হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে যায়, যার ফলে সংক্রমণ, ঠান্ডা-জ্বর ও অন্যান্য রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে দীর্ঘ সময় অনিয়মিত ঘুম থাকলে সংক্রমণের প্রতি সংবেদনশীলতা বেড়ে যায়।
মস্তিষ্কের কার্যকারিতায় প্রভাব
মস্তিষ্কে ওরেক্সিন নামের নিউরোট্রান্সমিটার থাকে, যা মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখে। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে ওরেক্সিনের উৎপাদন কমে যায়, যার ফলে মনোযোগ, স্মৃতি ও মানসিক স্থিতিশীলতায় সমস্যা দেখা দেয়। অনিয়মিত ঘুম মানসিক চাপ, উদ্বেগ এবং ডিপ্রেশনের ঝুঁকিও বাড়ায়।
হজমের সমস্যা
ঘুমের সময় পাচনতন্ত্রও বিশ্রাম পায় এবং খাবারের হজম কার্যকরভাবে সম্পন্ন হয়। অনিয়মিত ঘুম হলে হজমে সমস্যা দেখা দেয়, পাচক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না এবং হজমের জন্য প্রয়োজনীয় পাচক রস নিঃসরণের গতি কমে যায়।
স্বাস্থ্যকর ঘুমের পরামর্শ
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিদিন অন্তত ৭–৮ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত। ঘুমের সময়সূচি নিয়মিত রাখা, রাতের খাবার হালকা ও সময়মতো নেওয়া এবং ঘুমের জন্য অপ্রয়োজনীয় ওষুধ থেকে বিরত থাকা জরুরি। ঘুমের সমস্যার ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া সবচেয়ে কার্যকর।
এম আর এম – ১১৭৬, Signalbd.com