রাজনীতি

নির্বাচনে পিআর ও কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের পক্ষে নয় বিএনপিঃ মির্জা ফখরুল

Advertisement

চলমান রাজনৈতিক আলোচনার মধ্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্পষ্ট জানালেন, নির্বাচন প্রক্রিয়ায় কোনো ‘পিআর’ বা সীমাবদ্ধতা চান না তারা। একইসঙ্গে কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের পক্ষেও নেই বিএনপি।

আলোচনাই সমাধানের পথ: ফখরুল

সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরে বৃহস্পতিবার বিকেলে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তার দলের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি সমস্যার সমাধান রাজপথে সংঘর্ষ নয়, বরং আলোচনার মাধ্যমেই সম্ভব। বিএনপি কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের পক্ষে নয়, কারণ ভিন্নমত গণতন্ত্রের স্বাভাবিক অংশ।”

নির্বাচনে পিআর নিয়ে বিএনপির অবস্থান

মির্জা ফখরুল স্পষ্ট করেন যে, নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর কোনো ধরনের ‘পিআর’ বা নিষেধাজ্ঞা চাপানো উচিত নয়। বিএনপির মতে, নির্বাচনী প্রক্রিয়া সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকা উচিত। তার ভাষায়, “গণতান্ত্রিক সমাজে প্রতিটি দলেরই নির্বাচনে অংশগ্রহণের সমান অধিকার থাকা প্রয়োজন। পিআর বা অপ্রয়োজনীয় সীমাবদ্ধতা গণতন্ত্রকে বাধাগ্রস্ত করে।”

এছাড়া তিনি বলেন, রাজনৈতিক ভিন্নমতকে দমন করা নয়, বরং সংলাপ ও সমঝোতার মাধ্যমে নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করতে হবে।

রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার বিপক্ষে বিএনপি

বিএনপি মহাসচিব বলেন, কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করা গণতন্ত্রের জন্য হুমকি হতে পারে। তিনি মনে করেন, ভিন্নমতের দলগুলো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার শক্তি বৃদ্ধি করে। “আমরা চাই সব রাজনৈতিক শক্তি মাঠে থাকুক, তাদের মতামত জানাক। এটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ারই অংশ।”

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিএনপির এই অবস্থান আন্তর্জাতিক মহলেও ইতিবাচক বার্তা দেবে। কারণ বিদেশি কূটনীতিকরাও দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিসরে অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশ চেয়ে আসছেন।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে আন্দোলন ও আলোচনা — দুটিই পরিবর্তনের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করেছে। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ কিংবা গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার লড়াই—সব ক্ষেত্রেই রাজপথ ছিল মুখ্য। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাজপথের আন্দোলন কাঙ্ক্ষিত সাফল্য আনতে ব্যর্থ হয়েছে।

২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে বিএনপি এখন আলোচনার কৌশলকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এতে দলটি সংঘাতমুখী রাজনীতি থেকে সরে এসে আপস ও আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খুঁজতে চায় বলে ধারণা করা হচ্ছে।

প্রতিক্রিয়া ও রাজনৈতিক অঙ্গনের বিশ্লেষণ

বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্য রাজনৈতিক মহলে নানা প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে।

  • সরকারপক্ষের দৃষ্টিভঙ্গি: তারা মনে করছে, বিরোধী দলের এই অবস্থান রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য ইতিবাচক।
  • বিএনপির ভেতরকার অংশ: অনেকেই বিশ্বাস করেন, কেবল আলোচনার মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আনা কঠিন; রাজপথও সমান্তরালভাবে সক্রিয় রাখতে হবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির এই অবস্থান একটি কৌশলগত সিদ্ধান্ত। এতে দলটি একদিকে আন্তর্জাতিক মহলকে আশ্বস্ত করছে, অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ কর্মীদেরও হতাশ করছে না।

জাতিসংঘ অধিবেশন ও আন্তর্জাতিক গুরুত্ব

মির্জা ফখরুল জানিয়েছেন, তিনি জাতিসংঘের আগামী অধিবেশনে যোগ দেবেন। তবে এজেন্ডা এখনো নির্ধারিত হয়নি। বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, জাতীয় স্বার্থকে সামনে রেখে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

আন্তর্জাতিক মহল বরাবরই বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করার আহ্বান জানিয়ে আসছে। তাই ফখরুলের জাতিসংঘে যোগদান কূটনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।

বিশেষজ্ঞ মতামত

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ফখরুলের বক্তব্য মূলত একটি ভারসাম্যপূর্ণ কৌশলের প্রতিফলন। এতে বিএনপি একদিকে সংঘাত এড়াতে চাইছে, আবার অন্যদিকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক করার আহ্বান জানাচ্ছে।

একজন বিশ্লেষক মন্তব্য করেন, “বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য আলোচনার বিকল্প নেই। বিএনপির এই অবস্থান হয়তো সংলাপকে আরও কার্যকর করবে।”

“আমরা কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের পক্ষে নই। গণতান্ত্রিক সমাজে ভিন্নমতই শক্তির উৎস।” — মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

বাংলাদেশের রাজনীতিতে আলোচনা ও আন্দোলন দুটোই গুরুত্বপূর্ণ। তবে বিএনপি এখন আলোচনাকে প্রাধান্য দিতে চাচ্ছে। গণতন্ত্রের জন্য এটি কতটা কার্যকর হয়, তা নির্ভর করবে সরকার ও বিরোধী দলের পারস্পরিক সদিচ্ছার ওপর। আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির এই অবস্থান রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

এম আর এম – ১৪০৬,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button