কক্সবাজার ও বান্দরবান সীমান্ত এলাকায় গত এক বছরে উদ্ধার করা আনুমানিক ১ হাজার ৩২১ কোটি ৯০ লাখ ৫৯ হাজার ১১৬ টাকা মূল্যের মাদকদ্রব্য ধ্বংস করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। বুধবার দুপুরে কক্সবাজার রিজিয়ন কার্যালয়ের মাঠে আনুষ্ঠানিকভাবে এসব মাদক ধ্বংস করা হয়।
ধ্বংসকৃত মাদকের বিস্তারিত
বিজিবি সূত্র জানায়, ধ্বংস করা মাদকের মধ্যে রয়েছে ২ কোটি ৩৩ হাজার ৯৪৯ পিস ইয়াবা, ১৪০ কেজি ৪৯ গ্রাম ক্রিস্টাল মেথ (আইস), ৬১ হাজার ৪৯১ ক্যান বিয়ার, ২২ হাজার ১৫৫ বোতল বিদেশি মদ, ২৬ কেজি হেরোইন, ১৬৯ বোতল ফেনসিডিল, ৫২ কেজি ৮০০ গ্রাম গাঁজা, ১ হাজার ৮০০ লিটার বাংলা মদ, ১৯২ ক্যান কমান্ডো এনার্জি ড্রিংক, ৫৪০ কৌটা বার্মিজ জর্দা, ৪ কেজি ৪০৫ গ্রাম কোকেন, ২ বোতল হুইস্কি, ৩ লাখ ৩৭ হাজার ৬৪২ প্যাকেট সিগারেট এবং ৪ কেজি আফিম।
বুলডোজার ও মাটির চাপ ব্যবহার করে ধ্বংসকৃত মাদকগুলো সম্পূর্ণভাবে উধ্বংস করা হয়েছে। বিজিবি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই ধ্বংস প্রক্রিয়া দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
অনুষ্ঠানের উপস্থিতি ও বক্তব্য
ধ্বংস অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিজিবি কক্সবাজার রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ আকসার খান। তিনি বলেন, “বিজিবি সীমান্ত রক্ষার পাশাপাশি মাদকদ্রব্য নির্মূলে নিরলসভাবে কাজ করছে। মাদকপাচারকারী ও চোরাকারবারিরা যাতে কোনো ধরনের সুবিধা না পায়, সে ব্যাপারে সকলকে সজাগ থাকতে হবে।”
অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবু সালেহ মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ, কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন শাহীন, র্যাব-১৫ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল কামরুল হাসান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাহীদুল ইসলাম এবং বান্দরবানের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নামজুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সীমান্ত এলাকা ও মাদক পাচারের পটভূমি
কক্সবাজার ও বান্দরবানের ২৭১ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তের মধ্যে ৮৪ কিলোমিটার জলসীমানা রয়েছে, যা মিয়ানমার থেকে মাদকপাচারের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। বিজিবি এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়মিত অভিযান চালিয়ে এ ধরনের চোরাচালান রোধের চেষ্টা করছে।
গত এক বছরে সীমান্ত এলাকা দিয়ে ইয়াবা, আইস এবং অন্যান্য মাদকদ্রব্যের অসংখ্য চালান ধরা পড়েছে। তবে দুষ্কৃতকারীরা নারী ও তরুণদের ব্যবহার করে মাদক পাচার চালিয়ে যাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, রামুর ৩০ বিজিবি ব্যাটালিয়নের একটি অভিযান চলাকালে একটি অটোরিকশা থেকে ১০ হাজার ২০০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। এ সময় নাজুমা বেগম (৩৫) নামের এক রোহিঙ্গা নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা
বিজিবির পাশাপাশি র্যাব, পুলিশ, কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরও নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে তাদের অভিযানেও বিপুল পরিমাণ মাদকের চালান ধরা পড়েছে। এসব অভিযান মূলত মাদকপাচার বন্ধ করা এবং অপরাধীদের গ্রেপ্তারে সহায়ক হিসেবে কাজ করছে।
মাদক নির্মূলের প্রভাব ও বিশ্লেষণ
মাদক ধ্বংসের মাধ্যমে সমাজে একটি ইতিবাচক বার্তা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। যদিও সীমান্ত এলাকার ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও মাদক চোরাচালানকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন, তবুও বিজিবি ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ মাদকপাচারের বিরুদ্ধে জনমনে সচেতনতা বাড়াচ্ছে।
বিজিবি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নয়, স্থানীয় জনগণ এবং জনপ্রতিনিধিদেরও অংশগ্রহণে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা গেলে মাদক চোরাচালান আরও কার্যকরভাবে রোধ করা সম্ভব হবে।
শেষ কথা
গত এক বছরে উদ্ধারকৃত ১ হাজার ৩২১ কোটি টাকার মাদক ধ্বংস বাংলাদেশের সীমান্ত নিরাপত্তা ও সামাজিক সচেতনতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মাদক নির্মূলের দীর্ঘমেয়াদি সাফল্যের জন্য সামাজিক, প্রশাসনিক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সকল ক্ষেত্রেই সমন্বয় প্রয়োজন।
এই উদ্যোগ মাদকদ্রব্য নির্মূলের ক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী বার্তা দিচ্ছে, যা ভবিষ্যতে সমাজ ও যুবসমাজের জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
এম আর এম – ০৮৫১, Signalbd.com
				
					


