বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, রাজনৈতিক আলোচনা চলতে থাকলে সমান্তরালভাবে কর্মসূচি ঘোষণা করা অযথা চাপ সৃষ্টি করে। এটি গণতন্ত্রের জন্য শুভ নয় এবং সমস্যার সমাধান
সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফেরার পর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তার অবস্থান পরিষ্কার করেন। তিনি বলেন, “আলোচনার মাঝখানে কর্মসূচি ঘোষণা মানে অহেতুক চাপ সৃষ্টি করা, যা গণতন্ত্রের জন্য অশুভ।”
বিস্তারিত
বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে দেশে ফিরে সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল জানান, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে বিএনপি আর কোনো ইস্যুতে আন্দোলনে যায়নি। তার ভাষায়, “আমরা বিশ্বাস করি, সমস্যার সমাধান রাজপথে সংঘর্ষ নয়, বরং আলোচনার মাধ্যমেই সম্ভব।”
তিনি আরও বলেন, বিএনপি কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার পক্ষে নেই। রাজনৈতিক ভিন্নমত গণতন্ত্রের অংশ, এবং আলোচনা হলো সেই ভিন্নমতকে একত্রিত করার পথ।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে আন্দোলন সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা সংগ্রাম, তারপর গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার লড়াই—রাজপথের আন্দোলন বড় বড় পরিবর্তনের সূচনা করেছে। তবে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর বিএনপি যে আন্দোলনে নেমেছিল, তা কাঙ্ক্ষিত ফল আনতে পারেনি।
ফখরুলের বক্তব্য তাই নতুন একটি দিক নির্দেশ করছে। তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে বিএনপি আপাতত সংঘাতমুখী রাজনীতি থেকে সরে এসে আলোচনাভিত্তিক সমাধানকে প্রাধান্য দিতে চায়।
রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রভাব
বিএনপি মহাসচিবের এই মন্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। একদিকে সরকারপক্ষ মনে করছে, বিরোধী দলের এ ধরনের অবস্থান রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য ইতিবাচক। অন্যদিকে বিএনপির ভেতরেই একটি অংশ মনে করছে, রাজপথ ছাড়া পরিবর্তন আনা কঠিন।
বিশ্লেষকদের মতে, নির্বাচনের আগে এই ধরনের বক্তব্য বিরোধী দল ও সরকারের মধ্যে সংলাপের নতুন সুযোগ তৈরি করতে পারে। তবে বাস্তবে কতটা কার্যকর হবে তা নির্ভর করবে উভয় পক্ষের সদিচ্ছার ওপর।
আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট ও জাতিসংঘ অধিবেশন
মির্জা ফখরুল জানিয়েছেন, তিনি জাতিসংঘের আগামী অধিবেশনে যোগ দেবেন। তবে এজেন্ডা এখনো নির্ধারিত হয়নি। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জাতীয় স্বার্থকে সামনে রেখে সমন্বিত প্রচেষ্টায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
আন্তর্জাতিক মহল বরাবরই বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার আহ্বান জানিয়ে আসছে। তাই ফখরুলের জাতিসংঘে যোগদানকে কূটনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
মতামত
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ফখরুলের এই বক্তব্য মূলত একটি ভারসাম্যপূর্ণ কৌশলের ইঙ্গিত দেয়। এতে বিএনপি একদিকে আন্দোলনপ্রিয় কর্মীদের হতাশ করছে না, আবার অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মহল ও সাধারণ ভোটারদের কাছে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের বার্তা পাঠাচ্ছে।
একজন বিশ্লেষক বলেন, “বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য সংলাপ অপরিহার্য। ফখরুলের বক্তব্য হয়তো সেই পথকে সহজ করবে।”
বাংলাদেশের রাজনীতিতে আলোচনা ও আন্দোলন দুটোই গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে বিএনপি আলোচনাকে এগিয়ে নিতে চায় বলে স্পষ্ট করেছে। গণতন্ত্রের জন্য আলোচনাভিত্তিক সমাধান কতটা কার্যকর হয়, তা ভবিষ্যতের রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহই নির্ধারণ করবে।
এম আর এম – ১৪০৪,Signalbd.com
				
					


