রাজনীতি

বাগেরহাটে চারটি আসন বহালের দাবিতে আবারও জেলা নির্বাচন অফিস ঘেরাও

বাগেরহাট জেলায় চারটি সংসদীয় আসন বহালের দাবিতে সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির নেতাকর্মীরা পুনরায় জেলা নির্বাচন অফিস ঘেরাও করেছেন। এই প্রতিবাদী কর্মসূচি দ্বিতীয় দিন জারি রয়েছে।

সকাল ৯টার দিকে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে মিছিল নিয়ে সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির নেতাকর্মীরা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে একত্রিত হন। তারা প্রধান গেট ঘিরে রেখেছেন, যার ফলে নির্বাচন সংক্রান্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অফিসে প্রবেশ করতে সমস্যা হয়েছে। এই ঘেরাও কর্মসূচি দুপুর ১টা পর্যন্ত চলবে বলে কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

হাইকোর্টে রুল জারি: চারটি আসন কেন কমানো হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে

বাগেরহাটের চারটি আসন পুনঃস্থাপনের দাবিতে হাইকোর্ট রুল জারি করেছেন। রুলে নির্বাচন কমিশনকে জানতে চাওয়া হয়েছে, কেন বাগেরহাটের চারটি আসনের মধ্যে একটি আসন কমিয়ে তিনটি আসন করা হচ্ছে। একইসাথে, রুলে প্রশ্ন করা হয়েছে, কেন এই গেজেট অবৈধ হবে না। নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট পক্ষকে আগামী ১০ দিনের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির অবস্থান

সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির নেতাকর্মীরা জানান, হিন্দু ধর্মালম্বীদের দুর্গোৎসব উপলক্ষে হরতাল স্থগিত করা হয়েছে, তবে নির্বাচন অফিস ঘেরাও অব্যাহত থাকবে। তাদের দাবি, ন্যায়বিচার না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

সদস্য সচিব ও জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের জেলা সেক্রেটারি শেখ মোহাম্মাদ ইউনুস বলেন, “দুর্গোৎসব, ব্যবসায়ীদের ক্ষতি ও সাধারণ মানুষের অসুবিধার কথা মাথায় রেখে আমরা হরতালের কর্মসূচি আপাতত বাতিল করেছি। তবে হাইকোর্টের ১০ দিনের রুল আমাদের আশা জাগিয়েছে। আমরা যতদিন চারটি আসন না পাই, ততদিন আন্দোলন চালিয়ে যাব।”

আন্দোলনের পটভূমি

গেল ৩০ জুলাই, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাথমিক প্রস্তুতি হিসেবে বাগেরহাটের চারটি আসনের মধ্যে একটি কমিয়ে তিনটি আসন করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। এরপর থেকেই বাগেরহাটবাসী আন্দোলন শুরু করেন।

বাগেরহাটবাসী সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের শুনানিতে অংশগ্রহণ করেন। তবে ৪ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশন শুধু সীমানা পরিবর্তন করে তিনটি আসন চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করে। এই সিদ্ধান্তকে গণ মানুষের দাবি উপেক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

চূড়ান্ত গেজেট অনুযায়ী, আসনগুলো এখন এভাবে বিন্যস্ত হয়েছে:

  • বাগেরহাট-১: বাগেরহাট সদর, চিতলমারী, মোল্লাহাট
  • বাগেরহাট-২: ফকিরহাট, রামপাল, মোংলা
  • বাগেরহাট-৩: কচুয়া, মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা

নেতাকর্মীরা মনে করেন, এই নতুন আসন বিন্যাস জনগণের আস্থা ও গণতান্ত্রিক চাহিদা উপেক্ষা করেছে।

স্থানীয় জনগণের প্রতিক্রিয়া

স্থানীয়রা এই সিদ্ধান্তকে অবিচার এবং ভোটাধিকার হরণের প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছেন। বাগেরহাটবাসীর একাংশ জানান, “আমরা চাই যে আমাদের জেলায় চারটি আসন অক্ষুণ্ণ থাকে। এটি শুধুমাত্র রাজনৈতিক দাবি নয়, এটি আমাদের সাংবিধানিক অধিকার।”

বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাধারণ কর্মী এবং নাগরিকরা জানান, আসন হ্রাসের ফলে স্থানীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অবাধ ও সমান সুযোগ কমে যাবে। তাই তারা আবারও সড়কে নেমে দাবি আদায়ের জন্য প্রস্তুত।

আন্দোলনের কৌশল ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটি বলেছে, আন্দোলন আইনি লড়াই এবং রাজপথে আন্দোলন একসাথে চলবে। তারা ইতিমধ্যেই স্থানীয় বিভিন্ন জায়গায় সভা, মিছিল ও প্রতিবাদ কর্মসূচি শুরু করেছে।

শেখ ইউনুস জানান, “আমরা চাই যে নির্বাচন কমিশন এবং সরকার জনগণের দাবির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোক। যদি দাবি না মানা হয়, তবে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।”

দেশের অন্যান্য প্রেক্ষাপট

বাংলাদেশে নির্বাচনী আসনের পুনর্বিন্যাস নতুন নয়। বিভিন্ন সময়ে নির্বাচন কমিশন আসন সংখ্যা বা সীমানা পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছে। তবে অনেক ক্ষেত্রে, স্থানীয় জনগণ এই পরিবর্তনকে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় গণতান্ত্রিক স্বার্থ ক্ষুন্নের প্রচেষ্টা হিসেবে দেখেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “নির্বাচন কমিশনকে স্বচ্ছ ও ন্যায়সংগত প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে হবে। জনগণ যদি বিশ্বাস হারায়, তাহলে ভোট ও ভোটাধিকার প্রতি আস্থা কমে যায়।”

নির্বাচন কমিশনের প্রতিক্রিয়া

নির্বাচন কমিশন এখনও বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্য মন্তব্য করেনি। তবে, হাইকোর্টের রুল অনুযায়ী তারা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জবাব দিতে বাধ্য। নির্বাচনী বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বাগেরহাটের এই মামলা ভোটারদের অধিকার এবং রাজনৈতিক স্বচ্ছতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ বিন্দু হতে পারে।

বিশ্লেষণ: বাগেরহাটের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

বাগেরহাট জেলা রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল এলাকা। এখানে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমর্থন এবং কার্যক্রম প্রায় সমানভাবে বিস্তৃত।

  • বাগেরহাট-১, ২, ৩: প্রতিটি আসন গুরুত্বপূর্ণ ভোট কেন্দ্র।
  • আসন হ্রাস করলে স্থানীয় মানুষের প্রতিনিধিত্বের সুযোগ কমে যায়।
  • রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই ধরনের পরিবর্তন স্থানীয় রাজনীতি ও উন্নয়ন কার্যক্রমে প্রভাব ফেলে

ভবিষ্যতের সম্ভাবনা

নির্বাচন কমিশন এবং হাইকোর্টের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করে, বাগেরহাটে রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং আন্দোলনের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে। কমিটির নেতারা ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছেন যে, তারা চূড়ান্ত গেজেট বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

MAH – 12866  Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button