রাজনীতি

কিছু আসনের লোভে জাতীয় স্বার্থের বাইরে গিয়ে কেউ পিআর পদ্ধতি চাইছে: সালাহউদ্দিন

সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবি প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, কয়েকটি আসনের লোভে জাতীয় স্বার্থ উপেক্ষা করা বিপজ্জনক। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, এতে জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট হবে এবং স্বৈরাচার সুযোগ নেবে।

সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়

মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় এ মন্তব্য করেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, “কিছু দল কেবল নিজেদের আসন বাড়ানোর জন্য পিআর পদ্ধতির দাবি তুলছে। জাতীয় স্বার্থ উপেক্ষা করলে দেশের জন্য ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি হবে।”

তিনি আরও জানান, বিএনপি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বিশ্বাসী। তবে জাতীয় স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে কোনো প্রস্তাব বা আন্দোলন বিএনপি সমর্থন করবে না।

পিআর পদ্ধতি নিয়ে বিতর্ক

সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে জাতীয় নির্বাচনে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতি চালুর দাবি ওঠেছে। এতে ভোটের আনুপাতিক হারে আসন বণ্টনের সুযোগ তৈরি হয়। ছোট দলগুলো বলছে, এতে তাদের জাতীয় সমর্থন সঠিকভাবে প্রতিফলিত হবে।

তবে সালাহউদ্দিন মনে করেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণে এ ধরনের দাবি সামনে আনা হচ্ছে। “ঐকমত্য কমিশনের সূচিতে নিম্নকক্ষে পিআর প্রস্তাব নেই। তারপরও যদি কেউ আন্দোলনে নামে, বিএনপি রাজনৈতিকভাবেই তা মোকাবিলা করবে।”

জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে সতর্কবার্তা

সালাহউদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, “জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট হলে কেবল দেশে নয়, আঞ্চলিক নিরাপত্তাও হুমকির মুখে পড়বে। তখন পতিত স্বৈরাচাররা আবার সুযোগ নেবে।”

তিনি জোর দিয়ে বলেন, বিএনপি কখনো নির্বাহী আদেশে কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার পক্ষে নয়। বরং এ বিষয়ে আইনি ও বিচার প্রক্রিয়াই হওয়া উচিত।

নিষিদ্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে আলোচনা

সাম্প্রতিক আলোচনায় জাতীয় পার্টি ও ১৪ দল নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছে। এ প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন বলেন, “নিজেদের সুবিধা হাসিলের জন্য হয়তো কেউ আরও দল নিষিদ্ধের দাবি তুলতে পারে। তবে বিএনপি এমন প্রক্রিয়ার পক্ষে নেই।”

তার মতে, নির্বাচনী রাজনীতিতে প্রতিযোগিতা থাকা জরুরি। কাউকে বাইরে রেখে গণতন্ত্র শক্তিশালী হয় না।

নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও স্থিতিশীলতা

সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, “সঠিক সময়ে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে স্থিতিশীল সরকার গঠন সম্ভব। অন্যথায় জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে আঞ্চলিক নিরাপত্তাও হুমকিতে পড়বে।”

তিনি সংসদের মাধ্যমে বৈধ প্রক্রিয়ায় সংবিধান সংশোধনের প্রতি বিএনপির সমর্থনের কথা উল্লেখ করেন। তবে অরাজকতা সৃষ্টিকারী কোনো প্রস্তাব বিএনপি সমর্থন করবে না।

বিশ্লেষণ ও প্রভাব

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পিআর পদ্ধতি নিয়ে বড় দুই রাজনৈতিক দলের অবস্থানই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ছোট দলগুলো এর পক্ষে থাকলেও বিএনপির মতো বড় দল এ বিষয়ে সরাসরি নেতিবাচক অবস্থান নিলে পিআর বাস্তবায়নের সম্ভাবনা কমে যায়।

তাদের মতে, বিএনপি জাতীয় স্বার্থের কথা বললেও আসলে বড় দল হিসেবে বর্তমান সরাসরি ভোটপ্রক্রিয়াই তাদের জন্য লাভজনক। ফলে পিআর চালু হলে তাদের আসন বণ্টনে অনিশ্চয়তা তৈরি হতে পারে।

আলোচনার টেবিলই সমাধান

সালাহউদ্দিন শেষ পর্যন্ত বলেন, “দেশের যেকোনো সমস্যার সমাধান আলোচনার টেবিলেই সম্ভব। পিআর পদ্ধতি হোক বা অন্য কোনো সংস্কার—এ নিয়ে দ্বন্দ্ব নয়, আলোচনা দরকার।”

বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদের বক্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে, দলটি পিআর পদ্ধতিকে জাতীয় স্বার্থবিরোধী মনে করছে। অন্যদিকে কয়েকটি রাজনৈতিক দল পিআর দাবি অব্যাহত রেখেছে। ফলে সামনে রাজনৈতিক অঙ্গনে এই বিষয়টি নিয়ে তীব্র বিতর্ক চলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এম আর এম – ১৩৬০,Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button