সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে অন্তত একবার জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকের পর এ দাবি তুলেছেন দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।
বৈঠকের মূল বিষয়বস্তু
মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীতে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন জামায়াতের নেতারা। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সামনে বক্তব্য রাখেন নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।
তিনি বলেন, “আমরা চাই অন্তত একবারের জন্য হলেও জাতীয় নির্বাচন পিআর পদ্ধতিতে হোক। এতে জনগণের প্রকৃত মতামত ও সমর্থন প্রতিফলিত হবে।”
জানা গেছে, বৈঠকে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব
তাহের আরও জানান, ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় ৩১টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ২৬টি দল পিআর পদ্ধতির পক্ষে মত দিয়েছে। এর মধ্যে কিছু দল শুধু উচ্চকক্ষের জন্য পিআর সমর্থন করেছে, আর জামায়াতসহ কয়েকটি দল নিম্ন ও উচ্চ দুই কক্ষেই পিআর চালুর দাবি তুলেছে।
তার মতে, এ ধরনের ভোট ব্যবস্থা কার্যকর হলে দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হবে এবং এককভাবে কেন্দ্র দখল করে জোরপূর্বক ক্ষমতায় যাওয়ার প্রবণতা কমে যাবে।
পিআর পদ্ধতির সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর (Proportional Representation) হলো এমন এক ধরনের ভোট ব্যবস্থা যেখানে কোনো রাজনৈতিক দল দেশের মোট ভোটের আনুপাতিক হারে সংসদে আসন পায়। যেমন, একটি দল যদি জাতীয়ভাবে ৩০ শতাংশ ভোট পায়, তবে সংসদেও সেই দলের আসন প্রায় ৩০ শতাংশ হওয়ার কথা।
বর্তমানে বাংলাদেশে প্রচলিত সরাসরি ভোটে জয়লাভের মাধ্যমে প্রার্থীরা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ফলে অনেক সময় ভোটের সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকলেও কেন্দ্র দখল, প্রভাব খাটানো বা প্রশাসনিক সুবিধার কারণে আসন সংখ্যা বেড়ে যায়। জামায়াতের দাবি, পিআর পদ্ধতি চালু হলে এ ধরনের বৈষম্য কমে আসবে।
ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট প্রতিনিধিদের প্রতিক্রিয়া
বৈঠকে উপস্থিত ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান ও দাবি মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন। জামায়াতের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আন্তর্জাতিক মহলের কাছে তারা গণতন্ত্র, সুষ্ঠু নির্বাচন ও জনগণের মতামতকে মূল্যায়নের বার্তা দিতে চায়।
জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন, বৈঠক অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে। প্রতিনিধি দল বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে গভীর আগ্রহ দেখিয়েছে এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে জোরদার করার বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষণ
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশে পিআর পদ্ধতি চালুর দাবি নতুন নয়। বিভিন্ন সময় ছোট ও মাঝারি রাজনৈতিক দলগুলো এই দাবি তুলেছে। কারণ, বর্তমান ব্যবস্থায় জাতীয় ভোটে উল্লেখযোগ্য সমর্থন থাকলেও আসন কম পাওয়া যায়।
তাদের মতে, জামায়াতের এই দাবি রাজনৈতিক কৌশলের অংশ হতে পারে। একদিকে তারা গণতান্ত্রিক কাঠামোর পক্ষে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরছে, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মহলের কাছে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর চেষ্টা করছে।
বিরোধী দলগুলোর অবস্থান
অন্য বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর অনেকেই ইতোমধ্যে পিআর পদ্ধতির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। তবে শীর্ষ দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে স্পষ্ট অবস্থান এখনও দেখা যায়নি। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বড় দলগুলো সাধারণত বর্তমান পদ্ধতিকে বজায় রাখতে আগ্রহী থাকে, কারণ এতে তাদের ক্ষমতায় আসার সুযোগ বেশি থাকে।
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে পিআর পদ্ধতির আনুষ্ঠানিক প্রয়োগ হয়নি। তবে এ নিয়ে আলোচনা বহু বছর ধরে চলছে। নির্বাচন কমিশনও একাধিকবার বিষয়টি নিয়ে মতামত নিয়েছে।
তাহেরের বক্তব্যের পর আবারও আলোচনায় এসেছে পিআর। এখন দেখার বিষয়, আগামী নির্বাচনের আগে এ নিয়ে কোনো আইনি বা রাজনৈতিক উদ্যোগ নেওয়া হয় কি না।
জামায়াত একবারের জন্য হলেও জাতীয় নির্বাচনে পিআর পদ্ধতি চালুর দাবি তুলেছে, যা গণতান্ত্রিক কাঠামোর সংস্কারের আলোচনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তবে বাস্তবে এ দাবি কতটা কার্যকর হবে, সেটি নির্ভর করবে রাজনৈতিক সমঝোতা ও নির্বাচন কমিশনের পদক্ষেপের ওপর।
এম আর এম – ১৩৫৯,Signalbd.com
				
					


