বাংলাদেশ

৪ দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে জাপান পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে জাপানে পৌঁছেছেন। ২৮ মে বুধবার বাংলাদেশ সময় সকাল ১১টা ৫ মিনিটে (জাপান সময় দুপুর ২টা ৫ মিনিটে) তিনি টোকিওর নারিতা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। এই সফরের মূল উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে কৌশলগত সহযোগিতা বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার এবং মানবসম্পদ উন্নয়নে নতুন সুযোগ সৃষ্টি করা।

সফরের সূচনা: ঢাকা থেকে টোকিও

২৭ মে দিবাগত রাত ২টা ১০ মিনিটে ক্যাথে প্যাসিফিক এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে হংকং হয়ে টোকিওর উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন ড. ইউনূস ও তাঁর সফরসঙ্গীরা। হংকংয়ে সংক্ষিপ্ত যাত্রাবিরতির পর ২৮ মে নির্ধারিত সময়ের ২৫ মিনিট আগে তিনি টোকিও পৌঁছান।

নিক্কেই ফোরাম: এশিয়ার ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা

ড. ইউনূস ৩০ মে টোকিওতে অনুষ্ঠিতব্য ৩০তম নিক্কেই ফোরাম ‘ফিউচার অব এশিয়া’ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবেন। এ সম্মেলনে তিনি “এশিয়ার চ্যালেঞ্জ ইন অ্যা টার্বুলেন্ট ওয়ার্ল্ড” শীর্ষক মূল বক্তব্য প্রদান করবেন। এছাড়া, তিনি নিক্কেই, আসাহি টিভি ও নিপ্পন টিভিকে একান্ত সাক্ষাৎকার দেবেন, যেখানে বাংলাদেশ-জাপান সম্পর্ক এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরবেন।

দ্বিপক্ষীয় বৈঠক: শিগেরু ইশিবার সঙ্গে আলোচনা

৩০ মে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার সঙ্গে ড. ইউনূসের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এই বৈঠকে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে সাতটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে, যা বিনিয়োগ, জ্বালানি, প্রযুক্তি, অবকাঠামো এবং মানবসম্পদ উন্নয়নসহ বিভিন্ন খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধি করবে।

অর্থনৈতিক সহযোগিতা: বাজেট সহায়তা ও ঋণ

বাংলাদেশ সরকার জাপানের কাছ থেকে ৫০ কোটি মার্কিন ডলার বাজেট সহায়তা এবং অতিরিক্ত ২৫ কোটি ডলার রেল খাতে সহায়তা প্রত্যাশা করছে। এই সহায়তা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এবং অবকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

মানবসম্পদ উন্নয়ন: দক্ষ কর্মী প্রেরণ

সফরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হলো জাপানে ১ লাখ দক্ষ বাংলাদেশি কর্মী প্রেরণের বিষয়ে আলোচনা। এই উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ সৃষ্টি হবে। ড. ইউনূস টোকিওর বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত মানবসম্পদ উন্নয়ন সেমিনারে অংশগ্রহণ করবেন, যেখানে জাপানে দক্ষ কর্মী প্রেরণের ভবিষ্যৎ রূপরেখা উপস্থাপন করা হবে।

অবকাঠামো ও বিনিয়োগ: মাতারবাড়ি-মহেশখালী প্রকল্প

ড. ইউনূসের সফরে মাতারবাড়ি-মহেশখালী প্রকল্পসহ বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে জাপানের বিনিয়োগ বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা হবে। এছাড়া, জাপানি প্রতিষ্ঠান জাইকার সঙ্গে বৈঠকে তিনি বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে জাপানের সহযোগিতা প্রত্যাশা করবেন।

বিমান যোগাযোগ: সরাসরি ফ্লাইট পুনরায় চালু

বর্তমানে এয়ারক্রাফট সংকটে বন্ধ থাকা বাংলাদেশ-জাপান সরাসরি বিমান যোগাযোগ পুনরায় চালুর বিষয়ে আলোচনা হবে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে যাতায়াত সহজ হবে এবং বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও মজবুত হবে।

সফরের সমাপ্তি: ৩১ মে দেশে প্রত্যাবর্তন

চার দিনের এই রাষ্ট্রীয় সফর শেষে ৩১ মে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দেশে ফেরার কথা রয়েছে। এই সফর বাংলাদেশ-জাপান সম্পর্কের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জাপান সফর বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সুযোগ। এই সফরের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে এবং বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা ত্বরান্বিত হবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button