বাংলাদেশ

ইসি সচিবালয় ও নির্বাচন কর্মকর্তা অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন

Advertisement

উপদেষ্টা পরিষদ বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) তার ৪৩তম বৈঠকে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ এবং নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫-এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

এই সিদ্ধান্ত দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী এবং স্বচ্ছ করার দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। সংশোধিত অধ্যাদেশ দুটি নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কার্যকারিতা বৃদ্ধি, নির্বাচন কর্মকর্তাদের ক্ষমতা ও দায়িত্বের পরিসর সম্প্রসারণ এবং নির্বাচন কমিশনের স্বায়ত্তশাসনের ক্ষমতা সংরক্ষণে সহায়ক হবে।

উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক: সংক্ষিপ্ত প্রেক্ষাপট

উপদেষ্টা পরিষদের ৪৩তম বৈঠকে প্রধান বিষয় হিসেবে আলোচিত হয়েছে তিনটি অধ্যাদেশের খসড়া। সভার আলোচনায় প্রধান গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে নির্বাচনী কাঠামো ও প্রশাসনিক দক্ষতা উন্নয়নের উপর। সভায় উপস্থিত সদস্যরা খসড়ার নীতিগত বিষয়াদি বিস্তারিতভাবে পর্যালোচনা করেছেন এবং প্রয়োজনীয় সংশোধনের পর চূড়ান্ত অনুমোদন প্রদান করা হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এই অধ্যাদেশগুলোর খসড়া লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের ভেটিং-এর পরে চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে। এতে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও কার্যকারিতা বৃদ্ধি পাবে।

নির্বাচন কমিশন সচিবালয় (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫

নির্বাচন কমিশন সচিবালয় (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫-এর খসড়া মূলত নির্বাচন কমিশনের প্রশাসনিক কাঠামো এবং কর্মকর্তাদের দায়িত্ব ও ক্ষমতা সম্প্রসারণকে কেন্দ্র করে তৈরি করা হয়েছে। অধ্যাদেশটি চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে:

  • কমিশনের সচিবালয়ের কার্যক্রম আরও স্বচ্ছ ও দক্ষ হবে।
  • নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হবেন।
  • নির্বাচন কমিশনের স্বায়ত্তশাসন এবং রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা শক্তিশালী হবে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই অধ্যাদেশ প্রয়োগ হলে নির্বাচন কমিশন দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থায় আরও প্রগতিশীল এবং আধুনিক ভূমিকা পালন করতে পারবে।

নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫

নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫-এর খসড়া মূলত নির্বাচনী কর্মকর্তাদের দায়িত্ব ও ক্ষমতা সম্প্রসারণের দিকে লক্ষ্য রাখে। অধ্যাদেশটি অনুমোদনের মাধ্যমে:

  • নির্বাচনী কর্মকর্তাদের ভূমিকা সুসংহত ও প্রভাবশালী হবে।
  • ভোটগ্রহণ, ভোট গণনা এবং ফলাফল ঘোষণার প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ ও নির্ভরযোগ্য হবে।
  • নির্বাচন পরিচালনায় প্রশাসনিক জটিলতা কমানো সম্ভব হবে।

এটি বিশেষভাবে নির্বাচনী পর্যবেক্ষণ, ভোটের সঠিকতা এবং সময়মতো ফলাফল প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

অর্থ সংক্রান্ত কতিপয় আইন (দ্বিতীয় সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫

উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আরও অনুমোদিত হয়েছে অর্থ সংক্রান্ত কতিপয় আইন (দ্বিতীয় সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫। এই অধ্যাদেশ মূলত দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো ও প্রশাসনিক নীতিমালার প্রভাবশালী বাস্তবায়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এই খসড়া লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের পর্যালোচনার পরে চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এর প্রভাব বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে যাতে বাজেট, অর্থায়ন এবং প্রশাসনিক নীতি কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা যায়।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

নির্বাচনী এবং আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই অধ্যাদেশগুলোর চূড়ান্ত অনুমোদন দেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় গুণগত পরিবর্তন আনবে।

  • ড. সায়মা রহমান, নির্বাচন বিশ্লেষক: “নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও নির্বাচন কর্মকর্তা অধ্যাদেশ সংশোধনের মাধ্যমে কর্মকর্তাদের দায়িত্ব ও ক্ষমতা সুসংহত হয়েছে। এটি নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি করবে।”
  • মো. হুমায়ূন কবীর, সাংবিধানিক আইন বিশেষজ্ঞ: “নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) সংশোধন অধ্যাদেশ প্রয়োগ করলে ভোটগ্রহণের প্রক্রিয়া আরও নির্ভুল ও সুষ্ঠু হবে। নির্বাচনী জটিলতা কমবে।”

এছাড়াও অর্থ সংক্রান্ত আইন সংশোধন দেশের অর্থনৈতিক নীতির স্থায়িত্ব এবং প্রশাসনিক কার্যকারিতা উন্নয়নে সহায়ক হবে।

দেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় প্রভাব

এই অধ্যাদেশগুলোর প্রয়োগের মাধ্যমে দেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলবে:

  1. স্বচ্ছতা বৃদ্ধি: নির্বাচনী কর্মকর্তাদের ভূমিকা ও দায়িত্ব স্পষ্ট হওয়ায় ভোটের সময় জটিলতা কমবে।
  2. দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ: সচিবালয় ও কর্মকর্তাদের ক্ষমতা সম্প্রসারণ নির্বাচনের বিভিন্ন পর্যায়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণকে নিশ্চিত করবে।
  3. নিরপেক্ষতা নিশ্চিতকরণ: কমিশনের স্বাধীনতা ও রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা সুরক্ষিত হবে।
  4. আধুনিক প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন: ডিজিটাল ও প্রযুক্তিনির্ভর নির্বাচন ব্যবস্থায় এই অধ্যাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

উপদেষ্টা পরিষদের এই সিদ্ধান্ত নির্বাচনী ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে একটি নতুন দিগন্তের সূচনা করবে। এটি শুধুমাত্র প্রশাসনিক কাঠামো উন্নত করবে না, বরং দেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতা ও কার্যকারিতা বৃদ্ধি করবে।

বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা (ইসি) সচিবালয় ও নির্বাচন কর্মকর্তা অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন ও অর্থনৈতিক কাঠামোর জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই অধ্যাদেশ বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় নতুন যুগের সূচনা হবে।

MAH – 12894 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button