
পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে ১৬ বছর বয়সী মেয়েকে নিজের হাতে গুলি করে হত্যা করেন এক বাবা। অভিযোগ, মেয়েকে টিকটক থেকে দূরে রাখতে চাইলেও মেয়ে তার কথা মানেনি। সম্মান রক্ষার অজুহাতে ঘটে এই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড, যা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
ঘটনাটি কীভাবে ঘটল?
পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে ঘটে যাওয়া এক হৃদয়বিদারক হত্যাকাণ্ড সারা দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছে। ১৬ বছর বয়সী এক কিশোরীকে গুলি করে হত্যা করেন তার বাবা, শুধুমাত্র এই কারণে যে মেয়েটি টিকটকে সক্রিয় ছিল এবং অ্যাকাউন্ট ডিলিট করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল।
ঘটনাটি ঘটে গত বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই)। পুলিশ জানিয়েছে, মেয়েকে বারবার টিকটক অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলতে বলেছিলেন বাবা। কিন্তু মেয়ে তার কথা না শোনায়, ‘সম্মান রক্ষার্থে’ তাকে গুলি করেন।
ঘটনার পর প্রথমে পরিবার মেয়েটির মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু তদন্তে পুলিশের কাছে স্পষ্ট হয় এটি ছিল পরিকল্পিত ‘অনার কিলিং’।
‘অনার কিলিং’: পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের সামাজিক সমস্যা
পাকিস্তানে ‘সম্মান রক্ষার’ নামে নারীদের ওপর সহিংসতা নতুন নয়। মেয়েদের স্বাধীনতা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উপস্থিতি এখনও দেশটির অনেক পরিবারে ‘সম্মানের হানি’ হিসেবে বিবেচিত হয়।
বিশেষ করে রক্ষণশীল পরিবারগুলোতে মেয়েদের অনলাইন অ্যাক্টিভিটি বহুসময়েই আতঙ্ক ও শঙ্কার জন্ম দেয়। সেই আতঙ্ক থেকেই এমন ভয়ানক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন কেউ কেউ।
মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, পাকিস্তানে প্রতি বছর শতাধিক নারী অনার কিলিংয়ের শিকার হন। এই প্রবণতা প্রতিনিয়ত উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় মেয়েদের উপস্থিতি কেন এমন ‘হুমকি’?
বর্তমানে পাকিস্তানে টিকটক অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি অ্যাপ, বিশেষ করে তরুণ ও তরুণীদের মধ্যে। অনেক মেয়ে এই প্ল্যাটফর্মে কনটেন্ট তৈরি করে পরিচিতি ও অর্থ দুটোই অর্জন করছে।
কিন্তু সমাজের একাংশ এই বিষয়টিকে নেতিবাচকভাবে দেখে। তাদের মতে, মেয়েদের ‘পাবলিকলি’ ভিডিও বানানো বা নিজেকে প্রকাশ করাটা ‘অশালীনতা’র পরিচায়ক।
এই ধরণের মানসিকতা থেকেই বারবার এমন অনাকাঙ্ক্ষিত এবং সহিংস ঘটনা ঘটছে।
আগে এমন ঘটনা ঘটেছে?
হ্যাঁ, এই ধরনের ঘটনা পাকিস্তানে প্রথম নয়। গত মাসেই করাচিতে সানা ইউসুফ নামের ১৭ বছর বয়সী এক জনপ্রিয় টিকটকারকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
সে সময়ও মেয়েটির সামাজিক মাধ্যমে সক্রিয়তা নিয়ে পরিবারের মধ্যে অশান্তি চলছিল। তদন্তে উঠে আসে, একজন যুবক রেগে গিয়ে তার বাড়িতে ঢুকে গুলি করে।
এই ধারাবাহিকতা প্রমাণ করে যে, টিকটক বা অন্য সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে নারীদের উপস্থিতি দেশটির এক শ্রেণির মানুষের জন্য এখনো ‘অপরাধ’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
পরিসংখ্যান বলছে, নারীদের নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ
একটি সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, পাকিস্তানে মাত্র ৩০ শতাংশ নারীর নিজস্ব স্মার্টফোন রয়েছে, যেখানে পুরুষদের ক্ষেত্রে এই হার ৫৮ শতাংশ।
এই তথ্যই স্পষ্ট করে যে, দেশটিতে এখনো নারীদের ডিজিটাল স্বাধীনতা বাধাগ্রস্ত। নারীদের অনলাইন উপস্থিতিকে স্বাভাবিক না ভেবে, সমাজের একাংশ এটিকে অবাধ্যতার প্রতীক মনে করে, যার ফল হতে পারে প্রাণঘাতী।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, ‘অনার কিলিং’ সমাজে নারীর প্রতি বিদ্যমান বৈষম্য এবং নিয়ন্ত্রণের প্রকাশ।
তাদের মতে, সরকার এবং সমাজকে একযোগে এগিয়ে আসতে হবে এমন মানসিকতা ভাঙতে। অপরাধীকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া না হলে এই ধরণের সহিংসতা থামবে না।
এম আর এম – ০৩০৯, Signalbd.com