বাংলাদেশ

ঈদে মিলবে না নতুন নোট, বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘোষণা

আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে জনসাধারণের মাঝে নতুন নোট বিনিময় স্থগিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পূর্বনির্ধারিত পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী ১৯ মার্চ থেকে নতুন নোট বিনিময়ের কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা থাকলেও, তা বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত

আজ সোমবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর-২০২৫ উপলক্ষে জনসাধারণের মধ্যে ফ্রেশ নোট বা নতুন নোট বিনিময় কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়েছে যে, যেসব ব্যাংকের শাখায় ইতোমধ্যে নতুন নোট গচ্ছিত রয়েছে, সেগুলো বিনিময় না করে সংশ্লিষ্ট শাখায় সংরক্ষণ করতে হবে। পাশাপাশি, পুনঃপ্রচলনযোগ্য নোটের মাধ্যমে সব নগদ লেনদেন পরিচালনার জন্য ব্যাংকগুলোর প্রতি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

নতুন নোট না থাকায় জনসাধারণের প্রতিক্রিয়া

প্রতিবছর ঈদুল ফিতর উপলক্ষে নতুন নোট সংগ্রহের একটি বিশেষ আগ্রহ দেখা যায় সাধারণ মানুষের মাঝে। উপহার হিসেবে বড়দের কাছ থেকে নতুন নোট পাওয়া শিশুদের জন্য আনন্দের বিষয়। ব্যবসায়ী, ব্যাংক কর্মকর্তা ও সাধারণ জনগণ প্রত্যেকেই ঈদের সময় নতুন নোটের চাহিদা বাড়ে বলে জানান।

ঢাকার গুলিস্তান এলাকার একজন পোশাক ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, “প্রতিবছর আমরা ঈদের আগে নতুন নোট সংগ্রহ করি এবং খুচরা লেনদেনের জন্য নতুন নোট বেশি ব্যবহার করি। এবার নতুন নোট না থাকায় আমাদের জন্য কিছুটা অসুবিধা হবে।”

অন্যদিকে, একাধিক ব্যাংক কর্মকর্তা জানান, সাধারণত ঈদের সময় নতুন নোটের চাহিদা তুঙ্গে থাকে। এ কারণে ব্যাংকের সামনে দীর্ঘ লাইন পড়ে। কিন্তু এবার নতুন নোট না থাকায় গ্রাহকদের হতাশ হতে হবে।

নতুন নোট বিতরণ স্থগিতের কারণ কী?

বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন নোট বিতরণ স্থগিতের নির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করা হয়নি। তবে, সাম্প্রতিক সময়ে দেশের আর্থিক খাতের চাপে মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব ও নগদ ব্যবস্থাপনার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হতে পারে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

একজন অর্থনীতিবিদ জানান, “নতুন নোট ছাপানোর ফলে অতিরিক্ত নগদ অর্থ বাজারে প্রবেশ করে, যা মুদ্রাস্ফীতির চাপ বাড়াতে পারে। এছাড়া, কাগজের নোট মুদ্রণ ও বিতরণ প্রক্রিয়াটি ব্যয়বহুল। সুতরাং, সম্ভবত এই কারণগুলোর জন্য নতুন নোট বিতরণ স্থগিত করা হয়েছে।”

ঈদে নতুন নোট না থাকলে কী হবে?

নতুন নোট না থাকলেও সাধারণ মানুষ পুরোনো নোট ব্যবহার করেই লেনদেন করতে পারবেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ব্যাংকগুলোকে পুনঃপ্রচলনযোগ্য নোটের মাধ্যমে লেনদেন পরিচালনার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ব্যাংকিং খাতের একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, “নতুন নোটের অভাব ঈদের আনন্দকে কিছুটা কমিয়ে দিতে পারে। তবে, এটি সাময়িক সমস্যা। পুনঃপ্রচলনযোগ্য নোট ঠিকমতো সরবরাহ করা গেলে কোনো সমস্যা হবে না।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের এই সিদ্ধান্ত জনসাধারণের মধ্যে কিছুটা হতাশা তৈরি করলেও এটি অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে। অর্থনীতিবিদদের মতে, নতুন নোটের অভাবে সাময়িক অসুবিধা হলেও এটি বাজারে অতিরিক্ত নগদ অর্থের প্রবাহ কমাতে সহায়ক হবে। এখন দেখার বিষয়, ব্যাংকগুলো কীভাবে এই পরিস্থিতি সামাল দেয় এবং সাধারণ মানুষের জন্য কী ধরনের বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button