বিশ্ব

মেয়র নির্বাচিত হলে নেতানিয়াহুকে গ্রেফতারের হুঁশিয়ারি মামদানীর

Advertisement

নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচিত হলে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে গ্রেফতারের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মার্কিন ডেমোক্র্যাট দলের প্রার্থী জোহরান মামদানী। শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) কর্তৃক জারি করা গ্রেফতারি পরোয়ানার ভিত্তিতেই এ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

মামদানী বলেন, “যদি নেতানিয়াহু আমার মেয়াদকালে নিউইয়র্কে পা রাখেন, তবে পুলিশকে নির্দেশ দেব তাকে বিমানবন্দরেই গ্রেফতার করতে।”

মামদানীর বক্তব্যে

সাক্ষাৎকারে মামদানী স্পষ্ট করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সদস্য না হলেও, তিনি আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি সম্মান জানাতে চান। এ কারণেই নেতানিয়াহুকে আটক করার প্রতিশ্রুতি তিনি প্রকাশ্যে দিয়েছেন।

তার দাবি, “এটি কেবল রাজনৈতিক ঘোষণা নয়, বরং মানবাধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতি। নিউইয়র্ককে আন্তর্জাতিক আইনের পক্ষে দাঁড়াতে হবে।”

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের পরোয়ানা

২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। আদালতের তদন্তে বলা হয়, ইসরায়েলি সরকারের নির্দেশে চালানো সামরিক অভিযানে ব্যাপক সংখ্যক বেসামরিক মানুষের প্রাণহানি ঘটে।

তবে যুক্তরাষ্ট্র আইসিসির সদস্য নয়। তাই আদালতের সিদ্ধান্ত কার্যকর করার বাধ্যবাধকতা দেশটির নেই। এ কারণে মার্কিন আইনি কাঠামোর ভেতর মামদানীর এ ঘোষণা কার্যকর করা কতটা সম্ভব, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

মার্কিন আইন বিশেষজ্ঞদের মত

আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মেয়রের এখতিয়ার সীমিত এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ের এ ধরনের গ্রেফতার কার্যত অসম্ভব। কেন্দ্রীয় সরকারের আইন এবং পররাষ্ট্রনীতি স্থানীয় সরকারের হাতে নেই। ফলে মামদানীর বক্তব্যকে অনেকেই রাজনৈতিক প্রচারণার অংশ হিসেবে দেখছেন।

একজন আইন বিশ্লেষক বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কাঠামোয় কোনো শহরের মেয়রের হাতে আন্তর্জাতিক আদালতের পরোয়ানা বাস্তবায়নের ক্ষমতা নেই। তাই এটি আইনি চেয়ে বেশি রাজনৈতিক ইস্যু।”

নিউইয়র্কের ইহুদি সম্প্রদায় ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

নিউইয়র্ক যুক্তরাষ্ট্রে ইহুদিদের দ্বিতীয় বৃহত্তম আবাসস্থল। ফলে মামদানীর এ বক্তব্য শহরের রাজনৈতিক ভারসাম্যে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। সমর্থকরা মানবাধিকারের পক্ষে তার অবস্থানকে স্বাগত জানালেও, বিরোধীরা এটিকে উসকানিমূলক এবং ইহুদি সম্প্রদায়ের জন্য উদ্বেগজনক বলে আখ্যা দিচ্ছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নির্বাচনী প্রচারণায় আলোচিত হওয়ার জন্য মামদানী এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তবে এটি নিউইয়র্কের ভোটারদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

মামদানীর এই মন্তব্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও আলোচনার জন্ম দিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন গণমাধ্যমে তার বক্তব্য গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ করা হয়েছে। ফিলিস্তিনপন্থী মহল এ ঘোষণাকে স্বাগত জানালেও, যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সম্পর্ক ঘিরে নতুন করে বিতর্ক তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

অন্যদিকে মার্কিন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পূর্বে আইসিসির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আদালতের বিচারকদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন। এ প্রসঙ্গ উল্লেখ করে অনেকেই বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতাকেন্দ্রগুলোতে এখনো আইসিসির রায় কার্যকর করার ইচ্ছা নেই।

প্রতিশ্রুতির বাস্তবতা

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, মামদানীর ঘোষণা সাহসী হলেও বাস্তবে তা কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। তবে তার বক্তব্য নির্বাচনী প্রচারণায় শক্তিশালী বার্তা দিচ্ছে—যে তিনি মানবাধিকার, আন্তর্জাতিক আইন এবং ফিলিস্তিনের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিতে প্রস্তুত।

একই সঙ্গে এটি ডেমোক্র্যাট দলের ভেতরেও নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করতে পারে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র সবসময় ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র।

জোহরান মামদানীর ঘোষণা নির্বাচনী রাজনীতিতে তাকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেছে। আইনি জটিলতার কারণে এটি বাস্তবে কতটা সম্ভব, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচারের পক্ষে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি তার অবস্থানকে আলাদা করে তুলেছে। এখন সময়ই বলে দেবে, নিউইয়র্কের ভোটাররা এ ঘোষণাকে কীভাবে গ্রহণ করেন এবং এর প্রভাব জাতীয় পর্যায়ে কতদূর বিস্তৃত হয়।

এম আর এম – ১৩২৪,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button